২০ মে চা-শ্রমিক দিবস : শতবর্ষেও স্বীকৃতি পায়নি শ্রমিকরা ২০ মে চা-শ্রমিক দিবস : শতবর্ষেও স্বীকৃতি পায়নি শ্রমিকরা – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আত্রাইয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা কমলগঞ্জে সরকারি যাকাত ফান্ডে যাকাত সংগ্রহ সংক্রান্ত মতবিনিময় কমলগঞ্জে চা শ্রমিক নারীর লাশ সৎকার থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে  স্পেনের বার্সেলোনায় বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার সম্পন্ন বড়লেখা সমাজসেবা অফিসের ‘সমাজকর্মী’ সুব্রত বিশ্বাসের পরলোকগমন : শোক প্রকাশ কুলাউড়ায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উপশাখার উদ্বোধন জুড়ী ট্র্যাজেডি : সোনিয়ার মৃত্যুতে বেঁচে রইলো না আর কেউ কুলাউড়ায় এনার ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা আত্রাইয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত বড়লেখায় স্বাধীনতা দিবসে ২শ’ দুস্থ পরিবারে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী দিল বিজিবি

২০ মে চা-শ্রমিক দিবস : শতবর্ষেও স্বীকৃতি পায়নি শ্রমিকরা

  • বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ :: ২০ মে ঐতিহাসিক চা শ্রমিক দিবস। ১৯২১ সালের এই দিনে ব্রিটিশদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হতে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক নিজ জন্মস্থানে ফেরার চেষ্টা চালায়। এ সময় চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে গুলি চালিয়ে নির্বিচারে চা শ্রমিকদের হত্যা করা হয়। এরপর থেকে এই দিনটি ‘চা-শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন চা-শ্রমিকরা।

তবে বারবার দাবি জানানো এবং অনেক আন্দোলনের পরও একশ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি দিবসটি। ঘুচেনি চা শ্রমিকদের বঞ্চনা। এই দিবসের স্বীকৃতি পেতে এবার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন মনু-ধলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনাস্থ জেলা পরিষদ কাম মাল্টিপারপাস হলরুমে মুল্লোক চলো আন্দোলনে শহীদ দানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা জানান, ‘চা-শ্রমিক দিবসটি শতবছরেও স্বীকৃতি না পাওয়ায় আমরা হতাশ। বারবার দাবি করেও শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে ভোটের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আমরা তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই।’ এছাড়াও মজুরি বৃদ্ধি, ভূমির অধিকার, চিকিৎসা, শিক্ষা ও আবাসন সুবিধাসহ অবহেলিত চা-শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আলোচনা সভা করা হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো আরও বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালনের আহ্বান জানালেও এ ব্যাপারে সরকারি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এ দেশে এনে স্বল্প মজুরির মাধ্যমে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের কাজ করানো হচ্ছে। তাই শ্রমিকরা নিজ মুল্লুুকে ফিরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। এখনও চা শ্রমিকরা বঞ্চিত।’

জানা গেছে, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে চীন ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও চায়ের প্রচলন ছিল না। ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া বাগানে চা চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সে সময় বৃহত্তর সিলেটে চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, উড়িশা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়। ‘গাছ হিলেগা, রুপিয়া মিলেগা’ এমন প্রলোভনে শ্রমিকরা বাংলাদেশে এলেও তাদের ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি।

বিশাল পাহাড় পরিষ্কার করে চা বাগান করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে কত শ্রমিকের জীবন গেছে তার কোনো হিসাব নেই। এছাড়া ব্রিটিশদের অত্যাচার তো ছিলই। তাদের অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা প-িত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও প-িত দেওসরন ‘মুল্লুকে চল’ (দেশে চল) আন্দোলনের ডাক দেন।

১৯২১ সালের ২০ মে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক সিলেট থেকে হেঁটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান।

তারা জাহাজে চড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশ গোর্খা সৈনিকরা গুলি চালিয়ে শতশত চা শ্রমিককে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। যারা পালিয়ে এসেছিলেন তাদেরকেও আন্দোলন করার অপরাধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। চা শ্রমিকদেরকে পড়ানো হয় একটি বিশেষ ট্যাগ। পায়নি তারা ভূমির অধিকার। এরপর থেকেই প্রতি বছর ২০ মে চা শ্রমিক দিবস হিসেবে দিনটি পালন করছেন চা শ্রমিকরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানের নারী শ্রমিক আলোমনি মৃধা ও মিনা রায় বলেন, “হামরা চা শরমিকরা ১২০ টাকা মজুরি পাইয়া কিভাবে সংসার চালাবো? বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম বাড়ছে তাতে এই টাকা দিয়া সংসার চলি না। এক একটা ঘরে বাচ্চা-কাচ্ছা লইয়া পাঁচ জন, সাত জন থাকি। তারার খরচ কেমনে চলবি?”

চা শ্রমিকরা জানান, করোনাকালীন ঝুঁকি নিয়েও চা বাগানে আমরা সারাক্ষণ কাজ করেছি। প্রতিটি বাগানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই দলবদ্ধভাবে কাজ করেছি। এসব ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও মজুরি বৃদ্ধির চুক্তির মেয়াদ ১৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে। তারা আরও বলেন, চা বাগানে আমাদের এই মজুরি পাওয়ার পর সপ্তাহে সপ্তাহে কারেন্ট বিল, অনুষ্ঠান চাঁদা, ইউনিয়ন চাঁদা এসব কর্তনের পর সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকা থাকে। এই টাকায় একবেলাই খাবার চালানো দায়।

কানিহাটি চা বাগানের চা শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, অধিকারবঞ্চিত চা শ্রমিকদের রয়েছে করুণ ইতিহাস। দেশে প্রায় দু’শ বছর ধরে বসবাসরত চা শ্রমিকরা শ্রমে ঘামে প্রায় বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও তাদেরকে ছাড়ে না বঞ্চনা আর অভাব। সময়ের গতিধারায় দ্রব্যমূল্য পাল্লা দিয়ে বাড়লেও তাদের মজুরি সেভাবে বাড়ে না। প্রতিদিন ১২০ টাকা মজুরি নিয়ে জীবন কাটাতে হয় চা শ্রমিকদের।

চা শ্রমিক সংঘের মৌলভীবাজারের আহ্বায়ক রাজদেও কৈরী বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে এতো নি¤œ মজুরি দিয়ে চলা দায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি চুক্তি স্বাক্ষর ও কার্যকর হওয়া প্রয়োজন।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউরী চুক্তি স্বাক্ষরের ১৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, চা শ্রমিকদের দৈনিক ৩শ’ টাকা মজুরিসহ আমরা ২০ দফা দাবিনামা দিয়েছি। এই বিষয়টি নিয়েই মালিক পক্ষের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে।

ঐতিহাসিক চা শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন মনু-ধলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের উদ্যোগে কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনাস্থ জেলা পরিষদ কাম মাল্টিপারপাস হলরুমে মুল্লোক চলো আন্দোলনে শহীদ দানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত খাকবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান। মনু-ধলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ধনা বাউরী ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস পাইকা চা শ্রমিক দিবসের কর্মসুচীতে সংশ্লিষ্ট সকলের উপস্থিতি কামনা করেন।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews