কমলগঞ্জে আটকে পড়া মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা কমলগঞ্জে আটকে পড়া মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আত্রাইয়ে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা কুড়িগ্রামে লোকসংগীত ও পথ নাটক অনুষ্ঠিত কমলগঞ্জে শতভূজা বাসন্তী পূজা সমাপ্ত কমলগঞ্জে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন কুলাউড়ায় সাংবাদিকদের সাথে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মইনুল ইসলাম সবুজের মতবিনিময় কুলাউড়ায় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে প্রদর্শনী বড়লেখায় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন ও প্রদর্শনী বড়লেখায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ বড়লেখায় আমেরিকা প্রবাসী বিএনপি নেতাকে সংবর্ধনা ও ঈদ পুনর্মিলনী কুলাউড়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজু’র মতবিনিময়

কমলগঞ্জে আটকে পড়া মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা

  • বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, কমলগঞ্জ ::

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আটকে পড়া সহস্রাধিক মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। প্রবাসের কর্মস্থলে ফিরে যেতে সরকারের সহায়তা দাবী করেছেন। প্রবাসীদের মধ্যে কারো ভিসার মেয়াদ, কারো টিকেটের মেয়াদ, কারো একামার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ায় তারা ভোগান্তি ও ঋণগ্রস্ত হওয়ার চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দু’দফা টিকেট করার পর বাতিল হয়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। প্রবাসের কর্মস্থলে ফিরে যেতে সরকারের সহায়তা দাবী করে ইতিপূর্বে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বরাবরে আবেদনসহ স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।

আলাপকালে দুবাই প্রবাসী পতনঊষার ইউনিয়নের বাসিন্দা আহমদ আলী বলেন, গত ১০ জানুয়ারী ২ মাসের জন্য দুবাই থেকে দেশে আসি। দু’মাস পর গত ১৯ মার্চ প্রবাসে ফেরত যাওয়ার জন্য ৩৮ হাজার টাকায় টিকিটও করি। পরে করোনা মহামারির জন্য টিকিট বাতিল হয়। দ্বিতীয় দফায় সিলেটে গিয়ে করোনা রিপোর্ট সংগ্রহ করে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে গত ১৯ আগষ্টের টিকিট করি। এরপর সে টিকিটও বাতিল হয়ে যায়। আহমেদ আলী বলেন, দেশে আসার পর থেকে টাকা পয়সা সব শেষ হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। তারপর বারবার খরচ করেও প্রবাসের কর্মস্থলে যেতে পারছি না। ৩ হাজার ৫শ’ টাকার করোনা রিপোর্ট সংগ্রহ করতে তিন দিনে সিলেটে আসা যাওয়া সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তাছাড়া দুই দফা অনলাইনেও আবেদন করেছি। কোন কাজ হচ্ছে না। এখন নি:স্ব হয়ে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়ছি।

ওমান সালেহ আহমদ বলেন, চিকিৎসার জন্য গত ৩১ মার্চ একমাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসি। এরপর করোনার কারণে আটকা পড়ি। পুনরায় ওমানের কর্মস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেও যেতে পারছি না। অথচ ৩ সেপ্টেম্বর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে পড়ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে চলবো তা ভেবে পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রবাসে ফেরত যেতে কিংবা সরকারী প্রণোদনা পেতে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্ণা দিয়েও কোন ধরণের সুরাহা পাচ্ছি না। কাতার থেকে আসা শমশেরনগরের প্রবাসী এমলাক মিয়া বলেন, আমরাও জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সাড়া পাইনি।

কুয়েত প্রবাসী অমর মাহমুদ আনসারী, দুবাই প্রবাসী আব্দুল হান্নান, কবি জয়নাল আবেদীন, আনোয়ার খাঁন, ওমান প্রবাসী সোহেল আহমদ, কাতার প্রবাসী মতিউর রহমান, মালেশিয়া প্রবাসী মুকুল মিয়া প্রমুখ প্রবাসীরা জানান, পরিবার-পরিজন ও সংসারের হাল ধরতে বিভিন্ন সময়ে কমলগঞ্জের বাসিন্দারা কাতার, আরব-আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, সোদিআরব, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে গমন করেন। দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখিত দেশ সমুহে কাজ করে উপার্জিত আয়ের একটি বড় অংশ দেশে পাঠিয়ে পরিবার ও সংসারের ভরনপোষন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের শ্রমঘামে উপার্জিত আয় থেকে প্রেরিত রেমিটেন্সে সরকারের কোষাগারে রাজস্ব আয়েরও অংশীদার হিসাবে অবদান রেখে আসছেন। তবে ছুটিতে এসে করোনা মহামারীর কারণে কমলগঞ্জ উপজেলার প্রায় সহস্রাধিক প্রবাসীরা বর্তমানে নানা জটিলতায় প্রবাসের কর্মস্থল দেশ সমুহে ফিরে যেতে পারছেন না। কারো ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ, কারো টিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ, কারো একামার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ছে। এই সময় পর্যন্ত প্রবাসীরা ব্যাপক ঋণগ্রস্থ হওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। সম্মানের সাথে প্রবাসের দেশ সমুহে চাকুরী করে আসলেও দেশে এসে আটকা পড়ায় তাদের কফিলরা প্রবাসে ফিরে যাওয়ার জন্য বারবার যোগাযোগ করছেন। বিভিন্ন ট্রেভেলস এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করলেও তারা সঠিক কোন তথ্যাদি পাচ্ছেন না। ফিরত টিকেট থাকার পরও এসব প্রতিষ্ঠান প্রচুর টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ করেন।

একদিকে অর্থাভাব ও এনজিওসহ বিভিন্ন ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। এনজিও ঋণ ও ব্যক্তিগত ঋণ ছাড়াও কর্মক্ষেত্রে চাকুরিচ্যুত এসব নানা দুশ্চিন্তায় আতঙ্কিতভাবে সন্তানাদি ও পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দেশে থাকাকালীন সময়ে প্রবাসী পরিবার সমুহকে প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানের দাবি জানান। এসব বিষয়ে ইতিপূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর কাছেও তারা লিখিত অভিযোগ করেন।

প্রবাসী সোহেল আহমদ বলেন, আমরা পরিবারের আট, দশ জন সদস্যের হাল ধরলেও আমাদের সমস্যা নিয়ে কাউকে বলতেও পারছি না, আবার সইতেও পারছি না। আমরা প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সদয় আন্তরিক রয়েছেন। দেশে আটকাপড়া প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে মানবিক দিক বিবেচনা করে দেশে থাকাকালীন সময়ে প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান এবং সরকারি উদ্যোগে প্রবাসে ফেরত যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান চেয়ে সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।

এদিকে গত ২৫ আগস্ট কমলগঞ্জে নবাগত মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এর সাথে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রবাসীদের নানা সমস্যার কথা জেলা প্রশাসকের কাছে তুলে ধরেন ১নং রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, সরকার প্রবাসীদের প্রতি সবসময় আন্তরিক রয়েছেন। তাদের একটি লিখিত আবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া প্রবাসে যেতে আগ্রহীদের অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

জেলা কর্মসংস্থান অফিস, মৌলভীবাজার এর সহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী এজতেহার অনুযায়ী প্রতি উপজেলা থেকে বছরে এক হাজার মানুষকে দক্ষ করে গড়ে তুলে সঠিকভাবে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিকরণ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রবাসীরা লিখিত আবেদন করলে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হবে। এছাড়া সহজশর্তে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে প্রবাসীদের জন্য ব্যাংক ঋণের সুবিধা আছে। প্রবাসীদের একটি ফরম পুরণ করে উর্দ্বতন অফিসে প্রেরণ করা হচ্ছে।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews