হাকালুকিতে জলজ বৃক্ষ নিধন : হুমকিতে হাওরের জীববৈচিত্র হাকালুকিতে জলজ বৃক্ষ নিধন : হুমকিতে হাওরের জীববৈচিত্র – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আত্রাইয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা কমলগঞ্জে সরকারি যাকাত ফান্ডে যাকাত সংগ্রহ সংক্রান্ত মতবিনিময় কমলগঞ্জে চা শ্রমিক নারীর লাশ সৎকার থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে  স্পেনের বার্সেলোনায় বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার সম্পন্ন বড়লেখা সমাজসেবা অফিসের ‘সমাজকর্মী’ সুব্রত বিশ্বাসের পরলোকগমন : শোক প্রকাশ কুলাউড়ায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উপশাখার উদ্বোধন জুড়ী ট্র্যাজেডি : সোনিয়ার মৃত্যুতে বেঁচে রইলো না আর কেউ কুলাউড়ায় এনার ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা আত্রাইয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত বড়লেখায় স্বাধীনতা দিবসে ২শ’ দুস্থ পরিবারে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী দিল বিজিবি

হাকালুকিতে জলজ বৃক্ষ নিধন : হুমকিতে হাওরের জীববৈচিত্র

  • শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১
বড়লেখা : হাকালুকি হাওরে জলজ বৃক্ষ নিধন করা একটি অংশ। ছবি : এইবেলা

আব্দুর রব, বড়লেখা : জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বব্যাপি যখন চলছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর তা মোকাবেলায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যখন নেওয়া হচ্ছে নানামূখী পদক্ষেপ, বৃক্ষ রোপন কার্যক্রম ঠিক তখনই নির্বিচারে নিধন করা হলো দেশের সর্ববৃহৎ জলাভুমি হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের কান্দির ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী ২০ হাজার জলজ বৃক্ষ হিজল, করচ ও বরুন। যা প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অর্থায়নে সৃজিত। হাওরের গাছ কেটে পরিবেশের এতো বড় ক্ষতির পরও রহস্যজনক কারণে নির্বাক জীববৈচিত্র ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগ।

এখনও পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে তারা নেয়নি কোনো আইনি ব্যবস্থা। এতে হাওরপাড়ের সাধারণ মানুষ ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবশেষে উক্ত জলজ বনের পাহারাদার আব্দুল মনাফ গত ৩০ মে ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার অনুলিপি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ সুত্র ও সরেজমিনে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের অর্ন্তভুক্ত বড়লেখা উপজেলাধীন মালাম বিলের (মৎস্য জলাশয়) আয়তন ৪২৮.৯২ একর। ১৪২৭ বাংলা হতে ১৪৩২ বাংলা সন পর্যন্ত সময়ের জন্য ভুমি মন্ত্রণালয় থেকে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৩ টাকায় মালাম বিলটি ইজারা নিয়েছে বড়লেখা উপজেলার মনাদি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। মালাম বিলের কান্দির (পাড়ে) সরকারী ভুমিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০৩ সাল হতে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে হিজল, করচ, বরুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ রোপন করে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো জলজ বৃক্ষের রক্ষনাবেক্ষন করে। বর্তমানে প্রাকৃতিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত জলজ উদ্ভিদগুলো ১০-১৫ ফুট উচ্চতার হয়েছে। যা হাকালুকি হাওরের ইসিএ এলাকার জীববৈচিত্র রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে বিশেষ অবদান রাখছে। গত মে মাসের প্রথম দিকে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ইজারাদারের লোকজন বিলের বাঁধ নির্মাণের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ও প্রাকৃতিক জলজ বনের প্রায় প্রায় ২০ হাজার গাছ অবৈধভাবে কেটে নিয়েছে। এতে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে।

হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র সংরক্ষণকর্মী (বনায়ন পাহারাদার) আব্দুল মনাফ ও আরফান আলী জানান, মালাম বিলের ইজারাদার সমিতির লোকজন উপজেলার কাজিরবন্দ গ্রামের মক্তদির আলী, মশাইদ আলী, রিয়াজ উদ্দিন, জয়নাল উদ্দিন, কালা মিয়া, সুরুজ আলী, মনাদি গ্রামের জয়নাল উদ্দিন প্রমুখদের নিয়ে একসেকেভেটর দিয়ে মে মাসের প্রথম দিকে বিলের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের সরকারী ভুমির জলজ বৃক্ষ নিধন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। আমরা বাঁধা দিলে তারা তা মানেনি। জীববৈচিত্র ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের হাকালুকি বিট অফিসার তপন কুমার দেবনাথকে গাছ কেটে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলতে থাকার দৃশ্য দেখিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসাধুরা বেপরোয়াভাবে অন্তত ২০ হাজার জলজ বৃক্ষ কেটেছে। এছাড়াও অন্যান্য বিলের পাড়ের গাছ কেটে অনেকেই বোরো চাষের জমি তৈরী করছে। পরে এব্যাপারে ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। স্থানীয় সুত্র জানায় বন বিভাগের বিট কর্মচারীকে বৃক্ষ নিধনকারীরা শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেছে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী তপন কুমার দেবনাথ জানান, পাহারাদারের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাৎক্ষনিক বিষয়টি তিনি মৌখিকভাবে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। তার নির্দেশনা না পাওয়ায় তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেননি।

মালাম বিলের ইজারাদার সমিতির পরিচালক জয়নাল উদ্দিন জানান, জলমহাল ইজারায় মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির শুধুমাত্র নাম ব্যবহার করা হয় তা সকলেই জানেন, প্রভাবশালীরা বিনিয়োগ করেন। ইনভেস্টাররাই এখানকার গাছ কেটেছেন, বাঁধ দিয়েছেন। তবে এটা মোটেও ঠিক হয়নি। উনারা প্রশাসনের সাথে বিষয়টি মিটমাট করবেন বলে কথা হয়েছে।

ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, হাকালুকির মালাম বিলের পাড়ের ব্যাপক জলজ বৃক্ষ কেটে ফেলার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সহকারী কমিশনার (ভুমি)কে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews