নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি: রোজার অপরিহার্য অনুষঙ্গ ইফতারি। সামর্থ্যবানদের টেবিলজুড়ে থরে থরে সাজানো বাহারি ইফতারি। কিন্তু আমরা কি খবর রাখি আমাদের আশপাশের দরিদ্র, অসহায়, এতিম বা ভ্রাম্যমাণ গরিব মানুষ সেহরি ও ইফতার করছে কি না! এদের এমন কথা ভেবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদের উদ্যোগে গড়ে তোলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ছায়াপথ’।
সমাজের উপেক্ষিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে ছায়াপথ সংগঠন। সংগঠনটি রোজাদারদের জন্য ইফতারের পাশাপাশি সেহরির ব্যবস্থাও করছে। উপজেলার বিভিন্ন বস্তি, ফুটপাত, রেলস্টেশনসহ অসচ্ছল ও নিম্নবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে তাদের তৈরি ইফতারি সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। রোজা রেখে যাদের ভালো ইফতার করার সামর্থ্য নেই তাদের জন্যও রয়েছে ইফতারি। নিম্ন আয়ের বিশেষ করে ছিন্নমূল পথশিশু, দিনমজুর, অভাবগ্রস্ত পথচারীসহ ক্ষুদ্র আয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা রোজা রেখে অভাবের কারণে এক গাস পানি কিংবা সাধারণ খাবার দিয়ে ইফতার ও সেহরি সারছেন তাদের দ্বারে সেহরি ও ইফতারি পৌঁছে দিয়ে আসেন তারা। এমনকি রেলওয়ে স্টেশনের পাশে বস্তিতে থাকা, টংঘর, ফুটপাতের ঝুপড়ি, রেলস্টেশনে ভ্রাম্যমাণ পথশিশু, স্টেশনের প্লাটর্ফোমে শুয়ে থাকা দুস্থ শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ইফতারি ও সেহরি।
আহসানগঞ্জ রেলস্টেশনে দেখামেলে ছিন্নমূল আমজাদ, জাহাঙ্গীর ও নূর ইসলামের সাথে তারা বলেন, ‘কয় বছর ধইরা তাগো দেওয়া আমরা ইফতার ও সেহরি পাই। ছোলগুলান আমাগোর কাছে আসে।’ দুর্গন্ধে সাধারণ মানুষ নাক সিটকায় আমাগো পাশ দিয়ে হাঁটার সময়। কিন্ত স্বেচ্ছাসেবীরা ছিন্নমূল মানুষদের পাশে ইফতারি নিয়ে ছুটে যান নির্বিঘ্নে এ ছাড়া যেসব ভাসমান মানুষ খাবারের ব্যবস্থা না করতে পেরে সেহরি ও ইফতারি ছাড়াই রোজা রাখতে বাধ্য হন তাদেরও ইফতারির পাশাপাশি সেহরি বিতরণ করেন তারা। ইফতারের কাজ শেষ করেই স্বেচ্ছাসেবীদের শুরু হয় নিদ্রাহীন অক্লান্ত পরিশ্রম। সারা রাত জেগে সেহরি প্রস্তত করেন তারা। তারপর টিম করে খাদ্য হাতে ছুটে চলেন ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের পাশে।
ছায়াপথ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোক্তা আমানুল্লাহ ফারুক বাচ্চুর সঙ্গে কথা হয় তাদের কার্যক্রম নিয়ে। তিনি জানান, তাদের সংগঠন মূলত গঠিত হয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীদেও নিয়ে। পরবর্তীতে কার্যক্রমের প্রসার ঘটলে ইফতার ও সেহরি কার্যক্রমে বিভিন্নজন আর্থিক অনুদান প্রদান শুরু করেন।
আর স্বেচ্ছাসেবীরা শ্রম দিয়ে সহায়তা করছেন। রমজানের কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ‘অসহায়-বঞ্চিতদের জন্য মাসজুড়ে এ কার্যক্রম চলবে।
প্রতিদিন আমরা ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষদের জন্য ইফতারি ও সেহরির ব্যবস্থা করি। শুধু ইফতারি আর সেহরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না আমাদের এ সংগঠনের কার্যক্রম। স্বেচ্ছাসেবীরা উপজেলাসহ বিভিন্ন
প্রান্তরের রোগীদের রক্ত দান করতে যান। সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের আলোর পথ দেখানোর গড়ে তোলা হয়েছে ছায়াপথ পথশিশু বিদ্যানিকেতন।
মূলত দরিদ্র, বয়োবৃদ্ধ, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং ছিন্নমূল মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে এ সংগঠন। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সবার সহযোগিতা নিয়ে এ পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের আলোর পথ দেখানোর জন্য আমাদের তৈরি ছায়াপথ পথশিশু বিদ্যানিকেতন। তাছাড়াও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে নিয়মিত খাবার বিতরণ, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে সেগুলো পথশিশু ও ভ্রাম্যমাণ দরিদ্র মানুষকে প্রদানসহ নানান সেবামূলক কার্যক্রম।
সংগঠনটির উদ্যোক্তা ডা. আশিষ কুমার, ডা. আতাউল হক, মোয়াজ্জেম মিঠু, রিমন মোর্শেদ, ডলার, চঞ্চল, রাকিব শুভসহ দেখামেলে আরো অনেকের সাথে।
তারা বলেন, আমাদের এ সংগঠন ‘ বিনামুল্যে চিকিৎসাসেবা, উদ্বাস্ত মানুষকে সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণ, অসহায় মানুষের পুনর্বাসন, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সহায়তা, রমজানে ইফতারি ও সেহরি বিতরণ এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির মতো উদ্যোগ পরিচালনা করে থাকি।’ #
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply