এইবেলা ডেস্ক :: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার শিলাস্তি রহমান (২২) স্থানীয়দের কাছে এক রহস্যময় তরুণী। শিলাস্তি রাজধানীর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাসায় বসবাস করতেন। সে ওই খুনের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহিনের বান্ধবী। তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের নানা তথ্য মিলেছে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে। আয়েশি জীবনে অভ্যস্ত শিলাস্তির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল উচ্চবিত্ত শ্রেণির অনেকের।
শিলাস্তির বাসায় অনেক স্বর্ণ চোরাচালানির অবাধ যাতায়াতের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধনীর দুলালরা তার বাসায় যাওয়া আসা করত। বাসায় সিসি ক্যামেরা না থাকায় কোনো ফুটেজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। শুক্রবার (২৪ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে উত্তরার পশ্চিম থানাধীন ওই বাড়িতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিলাস্তি তার ফুফু হোসনে আরা বেগম ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার মালিক। তিনি একজন বিমানবালা। ডিভোর্স হওয়ার সুবাধে তার ভাই জাকির, জাহিদ ও রনি একই ফ্ল্যাটে থাকেন। সেই ফ্ল্যাটেই বড় ভাইয়ের মেয়ে শিলাস্তিও থাকতেন। শিলাস্তির চাচা জাকির, জাহিদ ও রনির বিরুদ্ধে মাদক, হুন্ডিসহ চোরাকারবারের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে তারা দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিল না দিয়ে সরাসরি মেইন লাইন থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া ভিআইপিদের গাড়ি বা মোটরসাইকেল এলে অন্য ফ্ল্যাট মালিকদের গাড়ি সরিয়ে নিতে বলতেন। যদি কেউ তাদের কথা না শুনত, তাহলে তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হতো। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা।
এলাকার মানুষের কাছে ওই তরুণী বিভিন্ন নামে পরিচিত। শিলাস্তি স্থানীয় যুবক রেদওয়ানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে তার বন্ধু রাতুলের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান। রাতুল ও রেদওয়ান দুজনেই ধনী পরিবারের সন্তান।
রাতুলের বন্ধু মারুফ বলেন, ‘আমার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে শিলাস্তি। সে নিয়মিত মাদক সেবন করত। তার পাল্লায় পড়ে আমার বন্ধুরাও মাদক সেবন করে। তাকে বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি বাসার সামনে এসে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যেত।’ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে নানা দেশে ঘুরে বেড়াত। এই বিষয়টি তার পরিবারের সবাই জানে।
ষষ্ঠ তলার ওই ভবনে রয়েছে ৯টি ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাট মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিওন বলেন, ‘তারা বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত। খুবই উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তাদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। এই মেয়েটি যে এমপি হত্যার সঙ্গে জড়িত, তা আমরা আজ জানতে পেরেছি। কারণ ডিবি পুলিশ এসেছিল।’
আরেক ফ্ল্যাটের মালিক আজাদ রহমান বলেন, ‘আজ শুনলাম ডিবি পুলিশের উত্তরা এবং ওয়ারী বিভাগের একটি টিম এসে তদন্ত করে গেছে। পরে আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করলে বিষয়টি জানতে পারি যে ওই তরুণী কতটা ভয়াবহ। আগে থেকেও কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু ভয়ে কথা বলিনি। ওই তরুণীর চাচা জাকির, জাহিদ ও রনির অত্যাচারে সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটে বসবাসরতরা অনেকেই সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করেছেন। প্রায় ফ্ল্যাট মালিকদের সবাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো অভিযোগ করেন।
একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক ও আশপাশের মানুষ জানান, ওই তরুণীর কাছে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন আসত। তাদের সে আত্মীয়স্বজন পরিচয় দিত।
উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, শিলাস্তিকে এলাকার সবাই মডেল হিসেবে চিনতেন। কয়েক বছর ধরে তিনি ওই এলাকায় থাকেন। স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, এই তরুণী বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্ন কায়দায় ফাঁদে ফেলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল, এমন অভিযোগ ও রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শিলাস্তির টার্গেট ছিল বড় বড় ব্যবসায়ী। তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতেন তিনি।
স্থানীয় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলম বলেন, এখানে তার অনেক বন্ধুবান্ধব আসত। মাঝেমধ্যে গান ও সাউন্ড হতো। তারা আনন্দ-ফূর্তি করতেন।
তিনি বলেন, একাধিকবার দেখা গেছে গাড়ি নিয়ে শিল্পপতিরা বাসার নিচে আসতেন। এ বিষয়টি অনেকের চোখে পড়ে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি আজীম হত্যা মামলার আসামি শিলাস্তি রহমানের ফুফু হোসনে আরা বেগমের বাসায় ডিবি পুলিশ গিয়েছি বলে শুনলাম। তবে তারা আমাদের ইনফর্ম করেননি। এসব বিষয়ে থানা পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply