এইবেলা ডেস্ক :: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানিয়েছেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের উপকূলীয় ছয় জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৩৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিদ্যুৎহীন ২ কোটি ৩৫ লাখ গ্রাহক।
সোমবার বিকালে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাত আটটার দিকে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১১ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে গেছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। এই ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে বহু মাছের ঘের।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলায় নগদ সহায়তার ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬। এ ছাড়া দুর্গত মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে ১ হাজার ৪৭১টি মেডিকেল দল গঠন করা হয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের অনেক এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এতে প্রায় আড়াই কোটি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অনেক এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় গাছ পড়ে লাইন বিচ্ছিন্ন ও অনেক জায়গায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়েছে।
সোমবার (২৭ মে) দুপুরে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পরিচালন ও বিতরণ) দেবাশীষ চক্রবর্তী।
Leave a Reply