কুলাউড়ার স্কাউটস ১০ বছর থেকে অনিয়ম দুর্নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ কুলাউড়ার স্কাউটস ১০ বছর থেকে অনিয়ম দুর্নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বড়লেখায় জাতীয় সামাজিক সংগঠন নিসচা’র মানববন্ধন আত্রাইয়ে উপজেলা পরিদর্শণ করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কুলাউড়ায় প্রান্তিক এলাকায় নারীদের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার- কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউনিয়ন ওয়াটসান কমিটির ওয়াশ বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন বার্সেলোনায় সীফুড এক্সপো গ্লোবালে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : কুলাউড়ায় চেয়ারম্যান পদে আ’লীগের ৩ শীর্ষনেতা বোরো ধানের সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন বড়লেখায় যুব ফোরামের অর্ন্তভূক্তিকরণ সভা রাজারহাটে শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে স্থানীয় স্টেক হোল্ডারদের সাথে সংলাপ ওসমানীনগরে বিদ্যুৎপৃষ্টে স্যানেটারী মিস্ত্রির মৃত্যু

কুলাউড়ার স্কাউটস ১০ বছর থেকে অনিয়ম দুর্নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ

  • শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২০

এইবেলা, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি ::

কুলাউড়া উপজেলা কাব-স্কাউটসে গত ১০ বছর থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয় থেকে উত্তোলিত টাকা ব্যাংকে জমা না করে পকেটে রেখে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের যোগসাজশে বিগত ৩ বারের স্কাউটস সম্পাদক ইচ্ছামাফিক খরচ ও তহবিল লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। কাব স্কাউটস কাউন্সিল নিয়েও চলছে টালবাহানা। এনিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

কুলাউড়া উপজেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলা স্কাউটসের টানা ৩ বারের ৯ বছর সেক্রেটারি ছিলেন মহতোছি আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমান ছুরুক। এছাড়া বিগত ১৮ মাস থেকে এডহক কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার। উপজেলার ১২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাব ও ৩৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্কাউটস এর সদস্য। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে মোট ১৫৩টি বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর সদস্য পদ ফি, নবায়ন ফি প্রদান করে থাকে। শুধু ৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে প্রতি বছর দেড় লক্ষাধিক টাকা ফি প্রদান করা হয়। ১২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে গড়ে আরও দেড় লক্ষাধিক টাকা ফি প্রদান করা হয়। এতে বছরে ৩ লক্ষাধিক এবং ১০ বছরে ৩০ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু স্কাউটস এর ব্যাংক একাউন্ট যাচাই করে দেখা যায়, ২০১৪ সালে ১বার, ২০১৫ সালে ৬ বার, ২০১৭ সালে সরকারি অনুদান এবং ২০১৯ সালে ৩ বার একাউন্টে কিছু টাকা জমা হয়। আর বাকি টাকা একাউন্টে জমা না করে পকেটে রেখেই খরচ করেছেন স্কাউটস সম্পাদক।

বাংলাদেশ স্কাউটস গঠনতন্ত্রের ২০৬ ধারার (খ) উপধারায় উল্লেখ করা হয়, প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ ব্যাংক হিসাবে রেখে জমা রাখতে হবে।কোষাধ্যক্ষ ও নির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত একজন সদস্যের যেীথ স্বাক্ষরে হিসাব পরিচালিত হবে। এখানে সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষরিত হিসাব পরিচালনার কোন বিধান নাই। (গ) ধারায় কেবলমাত্র দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য সম্পাদকের হাতে ৫শ টাকা রাখতে পারবেন।

গঠনতন্ত্রের ২০১ ধারায় বলা হয়েছে কোষাধ্যক্ষ সংগঠনের সকল টাকা গ্রহণ করবেন এবং সকল হিসাব নিকাশসহ বাজেট উপস্থাপন করবেন। এছাড়া এডহক কমিটির সদস্য সচিব হওয়ার কথা শিক্ষা অফিসার। সেখানে বর্তমান এডহক কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।

ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা জানান, স্কাউটসের যে টাকা জমা হয়, সেগুলো পকেটে রেখে খরচ করার কোন বিধান নেই। গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী উত্তোলিত টাকা ব্যাংকে জমা হবে। খরচের প্রয়োজন হলে নির্ধারিত একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে খরচ করা নিয়ম। সেখানে গত ১০ বছরে কোন নিয়ম মানা হয়নি। যদি বিগত দিনের দুনীর্তির তদন্ত ও আগামীতে দুর্নীতি বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয়া না হয়, তাহলে ক্ষুব্দ শিক্ষকরা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন বলেও জানান।

কুলাউড়া উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কাইয়ুম জানান, প্রতি বছর তাঁর বিদ্যালয় হতে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা স্কাউটসের ফি বাবত জমা দেন। এভাবে ১২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা জমা হয়। কিন্তু স্কাউটসের সম্পাদক সেই টাকা একাউন্টে জমা না করে নিজের পকেটে রেখে খরচ করেছেন। এটা অবৈধভাবে খরচ করেছেন। এভাবে তিনি খরচ করতে পারেন না। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আগামীতে যেন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় খরচের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

বিগত কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. মাহমুদুর রহমান কবির জানান, কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে দায়িত্ব পালনের কোন সুযোগ দেয়া হয়নি। তৎকালীন সভাপতি সম্পাদককে বলার পরও কোন দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। আইন অনুযায়ি কোষাধক্ষের স্বাক্ষরে হিসাব পরিচালনা হওয়ার কথা থাকলে সম্পাদক নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছারিতার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

কুলাউড়া উপজেলা স্কাউটসের বিগত ৩ বারের সম্পাদক ফয়জুর রহমান ছুরুক জানান, আমার দায়িত্বকালীন সময়ের ৩ বারের মধ্যে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ৩ বছরের হিসাব কেবল বাকি আছে। বাকি ২ বারের হিসাব দেয়া আছে। ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা না রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একটি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন। সভাপতির অনুমতিক্রমে আগে টাকা খরচ করেছি। পরে টাকা উত্তোলন করে সেটি সমন্বয় করা হয়েছে। ফলে একাউন্টে টাকা রাখা সম্ভব হয়নি। হিসাবে যদি কোন গরমিল হয় তাহলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বর্তমান কুলাউড়া উপজেলা স্কাউটসের এডহক কমিটির সেক্রেটারি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার জানান, তিনি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব পেয়েছেন। তার সময়ে কোন চাঁদা কালেকশন হয়নি। তবে তিনি দায়িত্বগ্রহণকালে ব্যাংক একাউন্টের স্থিতি কত ছিলো তা দেখেননি বলে জানান। অতীতের ন্যায় তিনিও একই প্রক্রিয়ায় চালাচ্ছেন সংগঠনিক কর্মকান্ড।

এব্যাপারে উপজেলা স্কাউটসের সভাপতি ও কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, অনেক উপজেলায় স্কাউটসের তহবিলে ঋণ রয়েছে হাজার হাজার টাকা। অথচ কুলাউড়ায় স্কাউটসের তহবিলে ২ লাখ ৯১ টাকা জমা আছে। এখানে শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিগত দিনে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তখন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিলো। এখানে খুব একটা দুর্নীতির সুযোগ নেই কেননা, প্রতি বছর বাৎসরিক সাধারণ সভায় হিসাব ও বাজেট উপস্থাপন করা হয়। বর্তমানে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক কমিটির প্রধান কাজ একটি পুর্নাঙ্গ কমিটি করা। সে অনুযায়ি ভোটার তালিকা প্রনয়ন ও কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়। কিছু শিক্ষকের আপত্তির কারণে কাউন্সিল ৩১ অক্টোবরের পরিবর্তে ১১ নভেম্বর নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে কাউন্সিলাররা যাকে নির্বাচিত করবে, তারাই আগামীতে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে আগামীতে স্বচ্ছভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews