আত্রাইয়ের ভোঁপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র : চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ  আত্রাইয়ের ভোঁপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র : চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

 আত্রাইয়ের ভোঁপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র : চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ

  • শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩

নাজমুল হক নাহিদ,আত্রাই (নওগা) :: প্রতিনিধি: উত্তর জনপদে এক সময়ে গরীবের হাসপাতাল নামে খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটি এখন বহুবিধ সমস্যার ফলে সকল কার্যক্রম বন্ধ আছে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় চিকিৎস্যা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ।

আশির দশকে উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের এই গ্রাম ও তার আশেপাশের অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মাঝে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে স্থাপন করা হয় এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। বর্তমানে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ফলে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোঁপাড়া, শিমুলিয়া, তেঘর ও তিলাবদু গ্রামসহ আশেপাশের কয়েক হাজার বাসিন্দা। ফলে এলাকাবাসীর দাবি এই অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কথা ভেবে তাদের মাঝে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারিভাবে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নতুন করে পরিচালনা করা হোক।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আশির দশকে স্থাপন করা হয় এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। বেতন ও ঔষধসহ সকল সুযোগ সুবিধা চলতো নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে। স্থাপনের পর থেকে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে আর কোন সংস্কার কিংবা মেরামতের ছোঁয়া স্পর্শ না করাই বর্তমানে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। অনেক বছর আগেই ভবন হয়েছে পরিত্যক্ত। দাপ্তরিক ভাবে বন্ধ আছে এই কেন্দ্রের সকল কার্যক্রম। কোয়ার্টারগুলো পড়ে আছে জরাজীর্ণ হয়ে। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আত্রাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মাঝে মাঝে সেখানে যান দেখভাল করতে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এখানে কোন প্রকারের চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। তদারকির অভাবে বর্তমানে স্থানীয়রা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন। গবাদিপশুর খড় পালা দিয়ে দখলে রেখেছে তারা। ভেঙ্গে পড়েছে ভবনগুলোর দেয়াল ও দরজা-জানালা। কিন্তু একসময় এলাকার লোকজন পেত সকল চিকিৎসাসেবা। লোকজন, ডাক্তার ও কর্মকর্তায় ভরপুর থাকতো এই চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে। কোয়ার্টারে থাকতো কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এখন আর কেউ থাকে না। তবে জরাজীর্ণ একটা কোয়ার্টারে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন আক্তারুন নামের এক নারী। সহায় সম্বলহীন হওয়ায় তিনি এক যুগ ধরে এখানে থাকেন। অবশ্য অল্প কিছু দিনের মধ্যে তিনিও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে উঠবেন।

মাসে মাসে ৮ থেকে ১০ জন করে এসে মিটিং করে যায় এমনটাই বললেন ৬০ বছরের লাইলী নামের এক নারীসহ কয়েকজন নারী পুরুষ। তারা বলেন, এখানে চলতো রমরমা চিকিৎসাসেবা। গত কয়েক বছর আগে থেকে এই হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ আছে। চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত মান্নান ও যাত্রামূল এলাকার মনোয়ারা মারা যাবার পর থেকে এখানে আর কেউ আসেনা নিয়মিত। তবে মাসে মাসে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম আছে। রানা নামের এক স্বাস্থ্যকর্মী এসে দিয়ে যায়। এছাড়া আরেক নারী জানালেন, এখানে আমরা চিকিৎসাসেবা নিয়েছি, আমার ছোলপোলেরাও চিকিৎসাসেবা নিয়েছে। কিন্তু এখন আর আমরা কেউ চিকিৎসাসেবা পাইনা। তাই সরকারের কাছে দাবি এই অঞ্চলের খেটে-খাওয়া মানুষদের ২৪ঘন্টা চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে দ্রুত আধুনিকায়ন করে সরকারিভাবে পরিচালনা করা হোক। যাতে আমরা সব সময় সকল প্রকারের চিকিৎসা সেবা এই কেন্দ্র থেকে পেতে পারি।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা জাহিদ বলেন, নেদারল্যান্ডস এর অর্থায়নে চলতো এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। ভিতরে অপারেশন থিয়েটার ছিল। এখানে সার্বক্ষণিক ডাক্তার থাকতো। তাদের সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ডাক্তার আসাও বন্ধ হয়ে গেছে। চিকিৎসা দেওয়ার মতো নেই ডাক্তার। কোয়ার্টারে থাকার মতো নেই লোক। তাই প্রতিটি মানুষের দ্বোর গড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার যে ভিশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেছে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে এই সব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে সরকারিভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন।

ভোঁপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন মন্ডল মুঠোফোনে বলেন, এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি আশির দশকে স্থাপন করা হয়েছে। এটা নতুন করে চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেককেই বলা আছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছেনা।

আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রোকসানা হ্যাপি মুঠোফোনে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে থেকে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সকল কার্যক্রম বন্ধ আছে। এটা নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে চলতো। তাদের ঔষধসহ সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আর কেউ যায়না। তারপরও সেখানে মাঝে মাঝে টিকা কার্যক্রম চলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আমিও সেখানে গিয়েছি অনেকবার। আমি এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কথা লিখিতভাবে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এটা ছাড়াও ব্রজপুর নামক স্থানে এই ধরনের একটা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। সেটা নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ অনেকের সাথে কথা হয়েছে। আমরা স্থানীয়ভাবে চালু করার চেষ্টা করছি। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটা প্রজেক্ট আসার কথা। সেটা আসলে একটু হলেও মানুষের দূর্ভোগ লাঘব হবে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে আছি তাই দেখভাল করার দায়িত্বওটাও আমার। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে পুরোপুরি সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই তিনি জনগুরুত্বপূর্ন এসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews