যুক্তরাজ্যে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে হার না মানা এক মায়ের নাম আশরাফিয়া যুক্তরাজ্যে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে হার না মানা এক মায়ের নাম আশরাফিয়া – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বড়লেখায় জাতীয় সামাজিক সংগঠন নিসচা’র মানববন্ধন আত্রাইয়ে উপজেলা পরিদর্শণ করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কুলাউড়ায় প্রান্তিক এলাকায় নারীদের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার- কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউনিয়ন ওয়াটসান কমিটির ওয়াশ বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন বার্সেলোনায় সীফুড এক্সপো গ্লোবালে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : কুলাউড়ায় চেয়ারম্যান পদে আ’লীগের ৩ শীর্ষনেতা বোরো ধানের সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন বড়লেখায় যুব ফোরামের অর্ন্তভূক্তিকরণ সভা রাজারহাটে শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে স্থানীয় স্টেক হোল্ডারদের সাথে সংলাপ ওসমানীনগরে বিদ্যুৎপৃষ্টে স্যানেটারী মিস্ত্রির মৃত্যু

যুক্তরাজ্যে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে হার না মানা এক মায়ের নাম আশরাফিয়া

  • রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

জুবেল আহমদ সেকেল, ওসমানীনগর থেকে :: সিলেটের ওসমানীনগরের আশরাফিয়া খানম (৮২) যুক্তরাজ্যের মাটিতে বর্ণবাদের কাছে হার না মানা এক মায়ের নাম। যুক্তরাজ্যের নিউ ক্যাসলে বর্ণবাদীর হাতে তাঁর স্বামী খুন হওয়ার পর অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ৫ ছেলেকে নিয়ে সেখানে পাড়ি দেন।

বর্ণবাদীদের লাঞ্চনা-বঞ্চনা সহ্য করে লেখাপড়া করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেনছেলেদের। এক পর্যায়ে যে শহরে তাঁর স্বামী খুন হয়েছেন সেই শহরের কাউন্সিলের লর্ড মেয়রের চেয়ারে ৪র্থ ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিবকে
বসিয়ে ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন এই মা।

গত শুক্রবার সকালে ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বয়োবৃদ্ধ আশরাফিয়া খানম ছেলে সাবেক লর্ড মেয়র হাবিব ও নাতি হামজা রাহিমের পাশে বসে সাংবাদিকদের সাথে
আলাপচারিতায় নিজের জীবনের কঠিন বাস্তবতা ও সফলতার গল্পগুলো তুলে ধরেন।

তিনি জানান, ১৯৬১ সালে আজিজুর রহমান ওরফে মনু মিয়া দর্জির সাথে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীর দর্জি ব্যবসায় চলতো তাদের জীবন। ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজ করতেন তার স্বামী। ১৯৬৩ সালে স্বামী যুক্তরাজ্যে গিয়ে লন্ডন শহরের একটি কাপড়ের কারখানায় কাজ শুরু করেন। স্বামীর আয় দিয়ে ভালোই কাটছিল তাদের জীবন। প্রতি বছর তিনি দেশে আসতেন। সংসার জীবনে ৫জন ছেলে সন্তানের পিতামাতা হন তাঁরা। ১৯৭৭ সালে তাঁর স্বামী লন্ডন শহর থেকে নিউক্যাসল আপন টাইন শহরে চলে যান। সেখানে বড় ভাই আতাউর রহমান ওরফে সুনু মিয়ার সাথে যৌথভাবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন। রেস্টুরেন্টে তিনি ম্যানাজারের দায়িত্বে ছিলেন। রেস্টুরেন্টে কাজ শুরুর কয়েক দিন পর এক রাতে সাদা ইংলিশ বর্ণবাদীর হাতে ছুরিকাঘাতে তার স্বামী খুন হন। ওয়াহিদ উদ্দিন আহমদ কুতুব নামের এক মহান ব্যক্তির প্রচেষ্ঠায় ৪৬ দিন পর স্বামীর লাশ দেশে এনে দাফন করা হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। ছোট সন্তানদের নিয়ে খেয়ে বেঁচে থাকা তাঁর জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে তাঁর বড় ভাইয়ের চেষ্ঠায় সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে সক্ষম হন তিনি।

সেখানে গিয়ে শুরু হয় তাঁর নতুন যুদ্ধ। অচেনা জায়গায় ছেলেদের নিয়ে কষ্টেই কাটছিল তাঁর জীবন। এশিয়ান কালো ও মুসলিম বলে অনেক সময় রাস্তায় বের হলে সাদা বর্ণবাদীদের দ্বারা তিনিসহ তার ছেলেরাও লাঞ্চনার শিকার হতে থাকেন । তবে শেষ পর্যন্ত ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারায় তিনি আজ গর্বিত। বিশেষ করে ৪র্থ ছেলে হাবিবুর রহমান লর্ড মেয়রের চেয়ারে বসার পর তিনি অত্যন্ত খুশি হন।

সেই দিন তিনি তার স্বামী হত্যাকারীকে মনে প্রাণে ক্ষমা করে দিয়ে ছেলেদেরও ক্ষমা করে দিতে বলেন। হাবিবুর রহমান বর্তমানে নিউ ক্যাসল আপন টাইন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন
করছেন।

সাবেক লর্ড মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, নিউক্যাসল এলাকায় লেখাপড়া করার সময় কালো এবং মুসিলম হওয়ার কারণে সাদা ইংলিশ দ্বারা অনেক লাঞ্চনা সইতে হয়েছে। কখনো ডিম ছুড়ে মেরেছে কখনো থুথু দিয়েছে কখনো আবার কিলঘুশি মেরেছে। বিষয়টি আমাকে খুব পীড়া দিত। ১৯৯২ সালে প্রথম মায়ের কাছ থেকে পিতা হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানার পর আমি বর্ণবাদ দূর করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি। মায়ের দেয়া শিক্ষা থেকে হিংসা নয় ভালোবাসা দিয়ে এই জগন্য কাজ দূর করার লক্ষে আমি সেখানকার ইয়থ ক্লাবে কাজ শুরু করি। শুরুর দিকে একই সমস্যা পোহালেও আস্তে আস্তে সুফল পেতে থাকি। একপর্যায়ে লেভারপার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। ২০১০ সালে নিউক্যাসল আপন টাইন সিটি কাউন্সিলে নির্বাচন করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হই। এরপর ২০১৮ সালে ক্যাবিনেট ফোসট অর্জন, ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যান্ত শেরিফ অ্যান্ড ডেপুটি লর্ড মেয়র নির্বাচিত হই এবং ২০২১ সাল হতে ২০২২ সাল পর্যন্ত কাউন্সিলের লর্ড মেয়রের দায়িত্ব পালন করি। বিগত ৮শ বছরের মধ্যে নিউক্যাসল সিটিতে ইংলিশ ও খ্রিস্টান ছাড়া আমিই প্রথম কালো ও মুসলিম বাংলাদেশি লর্ড মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি হয়। আর এই সবকিছু সম্ভব হয়েছে আমার মায়ের দ্বারা। ভবিষ্যতে মেয়র এবং পার্লামেন্টে নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।

হাবিব আরো জানান, ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলি হামলার ব্যাপারে তার দলের নীতি নির্ধারকদের নীতি ভালো না লাগায় তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews