সালাউদ্দিন:- কুলাউড়ার লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সকালে শিক্ষার্থীরা কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান বরাবর নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ।
লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, প্রভাষক মাজহারুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ ইসলাম বিরোধী কথা ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ করেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত হওয়ার আহবান করেন।এসব অভিযোগে গতকাল মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্লে-কার্ড হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করেছে শিক্ষার্থীরা ।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে ।কলেজের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন।
ডিগ্রি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল আহমদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন “আপনাকে শ্রদ্ধা করি সম্মান করি স্যার। কিন্তু আপনি প্রকাশ্য ইসলাম বিরোধী কথা বললে, আমরা মেনে নিবো না।”
সাইফুল ইসলাম সুমন নামের একজন লিখেন, “তিনি আমার শিক্ষক, উনার সান্নিধ্য গিয়ে কিছুটা বুঝতে পারলাম যে ইসলাম নিয়ে উনার কিছুটা মাথা ব্যাথা আছে।তিনি কার্ল মার্কস ও মাওসেতুং এর সমাজতান্ত্রিক মতবাদকে পছন্দ করেন। এজন্য তিনি অপছন্দের স্থানে রেখেছেন ইসলামকে। এটা প্রায় সবার জানা।সুতরাং নিজের মতকে প্রতিষ্টা করতে গিয়ে ইসলামকে নিয়ে যারা কটুক্তি করে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন”।
অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মো.রবিনুল ইসলাম নামের একজন লিখেন “আবেগ দিয়া বিচার না করে আগে সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তারপর না হয় স্যারকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেন।আমি অনার্স ১ম বর্ষে স্যারের ১০-১২ টা ক্লাস করছি।স্যারের কথা বার্তা অনেক ফ্রেশ ছিলো,তারপর ও স্যার ভুল করে থাকলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার হোক” ।
এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। তিনি চিঠিতে যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো:-
ধর্ম অবমাননার অভিযোগের জবাবে খোলা চিঠি
শ্রদ্ধেয় অভিবাবক বৃন্দ ও প্রিয় শিক্ষার্থী বৃন্দ।
লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ।
কুলাউড়া, মৌলভীবাজার।
লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা কালীন সময়ে থেকে সুনামের সাথে শিক্ষার্থীদের সেবা করে আসছে।
সকল শিক্ষকই শিক্ষার্থী বান্ধব।
কলেজ কর্তৃপক্ষ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সদা তৎপর।
শিক্ষার্থীদের কলেজ ড্রেস ছাড়া কলেজে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না।
সাপ্তাহিক আমাদের মনিটরিং টিমের মনিটরিংয়ের সময় আমি সাধারণত কোন শিক্ষার্থীদের কলেজ থেকে বের করে না দিয়ে লাইব্রেরী রুমে শাস্তি হিসেবে বই পড়তে বাধ্য করি। অধ্যক্ষ মহোদয়কে এ বিষয়ে অবগত করা হয়। সম্প্রতি কলেজের সকল শিক্ষার্থী শতভাগ ড্রেস নিয়ে আসছে এমনকি বোরখা পরেও মেয়েদের ড্রেস থাকে। তখন আমরা তাদের বোরখা নিয়ে আসার এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত নির্দিষ্ট রঙের বোরখা নিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
গত দুই সোমবার আমাদের টিম ক্লাসে ক্লাসে এই ঘোষণা দেয়। গত ৪ অক্টোবর ২০২১ সোমবার আমাদের এক শিক্ষার্থী জুড়ী থেকে এসেছে কলেজ ড্রেস ছাড়া বোরখা পড়ে, আমার বিশেষ অনুরোধে তাকে ক্লাস করতে দেয়া হয়। লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের বোরখার ডিজাইন নির্দিষ্ট করা ড্রেসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কথাই আমরা প্রচার করি। আমাদের বা আমার ব্যাক্তিগত কোন প্রচার নয়। আমরা ধর্মীয় অনুভূতি ও রীতিনীতিকে শ্রদ্ধা করি। আমি ব্যাক্তিগত ভাবেও শ্রদ্ধা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই না জেনে আমাকে নাস্তিক বলছেন, কিন্তু আমি কাউকে নিজেকে নাস্তিক বলেছি এমন কেউ বলতে পারবেন না।
কলেজের কাজ ছাড়াও সামাজিক কর্মকাণ্ডে আমি জড়িত থাকি। কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে পারে। আপনারা এ ফাঁদে পা না দেয়ার অনুরোধ করছি। সকল শিক্ষার্থী আমাদের সন্তানের মতো তাদের কল্যানময় ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য আমাদের থাকে শুভকামনা। শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ জীবন কামনা করছি। ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমি কলেজের ড্রেস কোড অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বোরখা পরতে নির্দেশনা দেই । কলেজের ড্রেসের সাথে মিল রেখে বোরখা পরার রেজুলেশন রয়েছে । আমি সেই নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের দিয়েছি “।
অধ্যক্ষ (ভার.) আতাউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছে। তিনি তাদেরকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান।
Leave a Reply