বিশেষ প্রতিনিধি ::
কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই চা বাগানের ভূমিতে বসবাসরত কতিপয় খাসিয়া তাদের পুঞ্জির পান গাড়ী যোগে বিক্রির জন্য বাগানের অভ্যন্তরের রাস্তা ব্যবহারের জন্য নানা টালবাহানা চালিয়ে আসছে। বাগানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলী প্রদর্শন করে মাঝে মধ্যে বাগানের নিজস্ব রাস্তা দিয়ে গাড়ীযোগে পান বিক্রির জন্য নানা অজুহাতে গেইট খূলে দেওয়ার দাবী জানায়। স্থানীয় প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে চতুর খাসিয়ারা বুঝাতে চায়,তারা খাসিয়া রোগীদেরকে নিয়ে যেতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
অথচ বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় জানা গেলো তার উল্টো চিত্র। বাগান কর্তৃপক্ষ জানায়,প্রতিটি চা বাগানের একটি নিজস্ব নিরাপত্তা বেষ্টনি রয়েছে। চা পাতা তথা গাছ চুরি রোধে বাগানের প্রধান ফটক তথা রাস্তার মধ্যে নিরাপত্তারক্ষীসহ গেইট রাখা হয়। ঝিমাই চা বাগানেও রয়েছে। কিন্তু রাস্তা দিয়ে খাসিয়ারা প্রতিনিয়ত চলাফেরা করছে বিনা বাধায়। এমনকি গাড়ীতে রোগী থাকলে তাদেরকে গাড়ীযোগে চলাফেরা করতে কখনও বাধা দেওয়া হচ্ছেনা। এর পরেও খাসিয়াদের যেনো সব দিয়ে দিতে হবেই।
আসলে খাসিয়ারা বাগানের চা সম্প্রসারন তথা বাগানের সার্বিক উন্নয়নে চরম বাধাগ্রস্থ করছে বলে অভিযোগে জানা যায়। বিশেষ করে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কুলাউড়া থানা,উপজেলা তথা জেলা পর্যায়ে কোন আবেদন নিবেদন না করে চলে যায় উচচ আদালতে। বারবার উচ্চ আদালতে পরাজিত হলেও এরপরেও ঝিমাই পুঞ্জির খাসিয়া রানা সুরং নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে রিট করে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রানা সুরং হলো ঝিমাই পুঞ্জির হেডম্যান। তার পুঞ্জিটি ঝিমাই বাগানের অভ্যন্তরে এবং বাগানের লিজকৃত জায়গার মধ্যে পড়েছে। আর ঝিমাই পুঞ্জিতে ৪০/৪৫ পরিবার বসবাস করে পান চাষ করে থাকে। তাদের রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার আয়। রানা সুরং বাগানের বিরুদ্ধে যেকোন অজুহাতে বিভিন্ন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া কিংবা উচচ আদালতে যাওয়ার ভান করে পুঞ্জির নিরীহ খাসিয়াদের নিকট থেকে মোটা অংকের চাঁদা সংগ্রহ করে রাজধানীতে গিয়ে ধমিদারী স্টাইলে চলাফেরা করে। অনেকে মনে করেন, এটা তার একধরনের বিলাসিতা। লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে কারনে অকারনে বিলাসিতা করাই তার মূল নেশায় পরিনত হয়েছে।
অত্র অঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, রানা সুরং এর বাবা ফিল প্রতাম খাসিয়া ঝিমাই চা বাগানের কিছু জায়গায় বসতি স্থাপন করে পান চাষ শুরু করেন। ক্রমান্বয়ে তার আতœীয় স্বজন ও অন্যান্য জায়গা থেকে অনেক খাসিয়াকে এসে ঝিমাই পুঞ্জিতে আশ্রয় দিয়ে সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। অবশ্য ফিল খাসিয়ার সময়ে পুঞ্জিতে কোন পাকা দালান কিংবা বিদ্যুৎ সংযোগ ছিলনা। ফিল প্রতাম খাসিয়া মারা যাওয়ার পর কিন্তু বিগত ৮/১০ বছর থেকে রানা সুরং পুঞ্জির হেডম্যানের দায়িত্ব পেয়ে অনেকটা জোরপূর্বক পাকা দালান নির্মান করেছেন। তিনি বাগানের পরিপক্ক গাছ কাটতে বাধা প্রদান,বাগানের রাস্তা দিয়ে জোরপূর্বক পান বিক্রির গাড়ি চলাচলের অপ্রচেষ্টা,বাগানের চা সম্প্রসারনে বাধাসহ নানাভাবে চা শিল্পের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাড়িয়েছেন। তার ব্যক্তিস্বার্থের জন্য কখনও কখনও ঢাকা থেকে বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে আসেন তার পক্ষে কথা বলার জন্য। সবকিছুতেই ব্যর্থ হয়ে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করে ঝিমাই চা বাগানের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে উঠেপড়ে লেগে আছে ঝিমাই পুঞ্জির রানা সুরং নামক খাসিয়া।
এদিকে বনজসম্পদ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান,কুলাউড়ার পূর্ব পাহাড় বিশেষ করে হাড়ারগজ পাহাড় এক সময় ছিল প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের জন্য বিখ্যাত। প্রাকৃতিক বনে ছিল অসংখ্য প্রজাতীর বণ্যপ্রাণী,পাখি, সাপ,হরিণ। ছিল বাঘের আনাগুনা। কিন্তু কালের বিবর্তনে খাসিয়া সমপ্রদায় বনাঞ্চল উজাড় করে এবং বন্যপ্রানী শিকার করায় কুলাউড়ার পূর্ব পাহাড়ের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। কুলাউড়ার পূর্ব পাহাড় এখন বণ্যপ্রানী বিহীন পাহাড়ে পরিনত হয়েছে। এছাড়াও খাসিয়ারা বনাঞ্চলের অভ্যন্তুরে দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টেনে নেওয়ার ফলে প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের তার জড়িয়ে মারা যাচেছ অসংখ্য বণ্যপ্রানী।
সবচেয়ে আশশ্বর্যের ঘটনা হলো কুলাউড়ার মোট বনভুমি অর্থাৎ ১৩ হাজার একর বনভুমির মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার একর বনভুমি খাসিয়ারা জবর দখল করে বসতি স্থাপনের পাশাপাশি শত শত একর জায়গায় পান চাষ করে আলিশান জীবন যাপন করছে। খাসিয়ারা গত ২০/২৫ বছরে সরকারের বাঁশ মহালের বাঁশ কেটে দখল নিয়ে পানের চাষ করছে। বনবিভাগের কুলাউড়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে খাসিয়া-বাংঙ্গালীদের এক সম্প্রতি সমাবেশে বলেছিলেন,কুলাউড়ার পূর্ব পাহাড়ে আগে ছিল বাঁশ আর বাঁশ;এখন শুধু পান পান আর পান। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেছিলেন,পূর্ব পাহাড়ের ১৩ হাজার বনভুমির মধ্যে একাধিক বাঁশ মহাল ছিল। যা টেন্ডারের মাধ্যমে বনবিভাগ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করত। বিগত ১০/১২ বছর পূর্বের খতিয়ান পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে কুলাউড়া রেঞ্জের একেকটি বাঁশ মহাল কোটি টাকার উপরেও নিলামে বিক্রি হয়েছে। যে বাঁশ মহালগুলির বাঁশ বিক্রি করে বনবিভাগ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করত সেগুলি এখন পানের মহালে রুপান্তরিত হয়েছে। সরেজমিনে বাঁশ মহালগুলি পরিদর্শনে গেলে দেখা যাবে ১০/১২ জন খাসিয়া মিলে ৪/৫ শত একর বনভুমি জবর দখল বাঁশ কেটে বনভুমি উজাড় করে পানের ঝুম প্রতিষ্টা করেছে। খাসিয়ারা বনের ভিতরে পাকার দালানও তৈরি করে ফেলেছে ইতিমধ্যে। কিছু কিছু পুঞ্জিতে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে বন গবেষক মো: আহমদ আলীর মতে, খাসিয়ারা আসলে জীববৈচিত্রের যে ক্ষতি করেছে তা জীবনেও পূরন হবে না। জীববৈচিত্রে ভরপুর গাজিপুরের পূর্ব পাহাড়ে নেই আর আগের মতো পাখির কিচিরমিছির শব্দ,নেই বণ্যপ্রানীর আনাগুনা। তার দাবী বন্যপ্রানী নিধনের আরও কঠোর আইন প্রনয়ন দরকার। আর মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট সংগ্রহ করে বণ্যপ্রানী নিধনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হলে বণ্যপ্রাণী নিধন কিছুটা হলেও কমবে।
বন কর্মকর্তা রিয়াজ আফসোস করে বলেছিলেন, বনের অভ্যন্তরে খাসিয়ারা একেক সাম্রাজ্যের রাজা বনে গেছেন। তারা কাউকে তোয়াক্কা করে না। জায়গার কোন মালিকানা নেই।। জায়গার কোন রেজিষ্টি ফি নেই। কোন ভাড়া দিতে হয়না। কোন ট্যাক্স দিতে হয়না। সবকিছুই ফ্রি স্টাইলে চলছে তাদের জীবন। তিনি বলেন,বনভূমিকে গিলে খাচ্ছে ঐ সমপ্রদায়।
তবে সাম্প্রতিককালে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বন রক্ষাকে সর্বোচ্ছ গুরুত্ব দিয়ে কুলাউড়া বনবিভাগের সাম্প্রতিক তৎপরতা সবমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। রেঞ্জের বিভিন্ন বিটে কিছু খাসিয়াদের কবল থেকে বনভুমি উদ্বার করে করা হয়েছে বনায়ন। তবে খাসিয়াদের আগ্রাসী ভুমিকায় সফলতা আসছেনা বলে অনেকেই মনে করেন। তবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বন ও জীববৈচিত্র রক্ষায় অত্যন্ত কঠোর হয়ে বনবিভাগকে সহযোগীতা করে আসছে।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply