নিজস্ব প্রতিবেদক ::
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের মিঠুপুর-আবুতালিপুর সংযোগ সড়কের গোগালী ছড়ার উপর পাকা সেতু নির্মাণ হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আনন্দিত এলাকার লোকজন। গত পাঁচ দশক থেকে একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে চার গ্রামের কয়েক সহস্রাধিক মানুষ আতঙ্কিত হয়ে চলাচল করতেন। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এই গোগালী ছড়ার ওপর একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন চার গ্রামের মানুষের। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই ছড়ায একটি পাকা সেতুর নির্মাণকাজ অনুমোদন হয়েছে। আর এই খবর পেয়েই আনন্দে মাতোয়ারা চার গ্রামের বাসিন্দারা।
জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পর থেকে গোগালী ছড়ার উপর পাকা সেতু নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করে আসছেন স্থানীয় লোকজন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনও হয়েছিল। একের পর এক জনপ্রতিনিধি আসছেন আর স্থানীয়দের শুধু আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু পাকা সেতু নির্মাণের কার্যত উদ্যোগই নেননি কেউ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই ছড়ার উপর পাকা সেতুর নির্মাণকাজ অনুমোদন হয়েছে সম্প্রতি। এতে পাঁচ দশকের দাবি পূরণ হওয়ায় স্থানীয় মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জয়চণ্ডী ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত গোগালী ছড়ার ওপর একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে গত বছরের আগস্ট মাসে চাহিদা দেন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী। সম্প্রতি ইউনিয়নের মিঠুপুর-আবুতালিবপুর গ্রামের সংযোগস্থল গোগালী ছড়ার ওপর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ৮৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৪০ টাকা ব্যয়ে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যর একটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেয়। সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, ইউপি সদস্য বিমল দাস, সাংবাদিক আজিজুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, মিঠুপুর, আবুতালিবপুর, বেগমানপুর ও নুরপুর এলাকার মানুষ গোগালী ছড়ার ওপর একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে স্বাধীনতার পর থেকে। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে এমপির কাছে একাধিকবার আবেদন করেছেন এলাকার মানুষ। কিন্তু ৫০ বছর ধরে এলাকাবাসীর সেই দাবি শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ ছিল। কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্স এবং গাড়ি গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না সেতু না থাকায়। এ অবস্থায় তাদের দুর্ভোগ নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়েই ছড়া পারাপার হতে হয়। গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও পড়তে হয় বিপাকে।
তারা আরো জানান, প্রতিবছর বর্ষায় গোগালী ছড়া দিয়ে পাহাড়ি ঢল নেমে বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে গেলে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে সেটি মেরামত করেন। এভাবেই দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। অবশেষে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। সেতুটি নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
কুলাউাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, ‘একটি সেতুর অভাবে জয়চণ্ডী ইউনিয়নের চারটি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ রয়েছেন। তারা কষ্ট করে বাঁশের সাঁকো মেরামত করে চলাচল করছেন―এমন বিষয়টি আমি গণমাধ্যমে জানতে পারি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে মাননীয় সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের পরামর্শক্রমে মিঠুপুর-আবুতালিবপুরসহ কুলাউড়ায় ১১টি এলাকায় সেতু নির্মাণের চাহিদা পাঠানো হয়। ওই তালিকায় এই সেতুটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এক নম্বরে ছিল। এরই প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি পাকা সেতু ওই এলাকায় নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছি। শিগগিরই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।’
Leave a Reply