কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: শুধুমাত্র টাকার অভাবে এক রিক্সাচালক ও প্রতিবন্ধী দম্পতির মেধাবী ছেলের ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ মেধাবী শিক্ষার্থীর নাম দেলোয়ার হোসেন। সে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের রিক্সাচালক কনু মিয়া ও শারীরিক প্রতিবন্ধী দিলারা বেগমের একমাত্র ছেলে। দেলোয়ার এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ থেকে ব্যবসা শাখা থেকে ৪.০৮ পেয়েছে।
দেলোয়ার হোসেন এর বাবা কনু মিয়া রিক্সা চালিয়ে ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মা আর ছোট বোনকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনভাবে চলে তাদের সংসার। ছোট বোন ফারজানা আক্তার ৯ম শ্রেণিতে পড়ালেখঅ করছে। তাদের থাকার জন্য নিজের কোন ঘর নেই। মামার ঘরে থেকেই চলছে সংসার। দেলোয়ার শ্রীমঙ্গল শহরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি দোকানে অস্থায়ীভাবে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে কোন রকম এইচএসএসি পরীক্ষা দিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী মা দিলারা বেগমও টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় অর্থের সাথে যুদ্ধ করে কতদুর অগ্রসর হতে পারবে তার স্বপ্ন?
বৃহস্পতিবার দুপুরে রঘুনাথপুর গ্রামে অদম্য মেধাবী দেলোয়ার হোসেন এর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা কনু মিয়া রিক্সা নিয়ে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একমাত্র ছেলে এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলে উত্তীর্ণ হওয়ায় চোখে মুখে হাসি থাকলেও দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন ছেলের ভর্তির টাকা নিয়ে। কিভাবে জোগার করবেন ছেলের ভর্তির টাকা। নিজের ভিটে-বাড়ি, জমিজমাও নাই যে বিক্রি করবেন।
বাবা কনু মিয়া জানান, ছেলেটা ছোট থেকেই মেধাবী। যার কারণে ওর লেখাপড়ায় কোন ভাটা পড়ুক তা চাইনি। কষ্ট করেই পড়িয়ে যাচ্ছি। কিভাবে যে তার ভর্তি পরীক্ষা জোগার করবো কোন কুল কিনারা পাচ্ছি না। যদি কেউ সহযোগিতায় আসতেন, তাহলে ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হতো।
অশ্রুঝরা চোখে মেধাবী দেলোয়ার জানায়, “ছোটবেলা থেকে পুলিশ অফিসার হবে এই সপ্ন। পড়ার স্বপ্ন লালন করে নানান বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে এসেছি। আমার খুবই ইচ্ছ পুলিশ অফিসার হব। কঠিন দারিদ্রতার মধ্য দিয়েই আমার বেড়ে উঠা। এইচএসসিতে জিপিএ ৪.০৮ অর্জন করি। এসএসসি পাস করার প্রতিদিন বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দুরে কলেজে যেতে লাগতো বেশ গাড়ি ভাড়া। মেসে থাকার সামর্থ না থাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় তাদের সন্তানদের প্রাইভেট পড়িয়ে কলেজে ক্লাস করতাম। সেখান থেকেই শ্রীমঙ্গল শহরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে পার্ট টাইম কাজ করে কোন রকমে কলেজের বেতন যোগাড় করেছি। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দুইবার পুলিশ কনস্টেবল পদে পরীক্ষা দেই। কিন্তু প্র্যাকটিকেল সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও চাকুরী হয়নি। এখান থেকেই স্বপ্ন তৈরি হয় পুলিশ বিভাগে কাজ করার। সেবার মানসিকতা নিয়েই বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে কাজ করতে চাই। এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তির টাকার সংকটে রয়েছে, জানি না টাকা কিভাবে জোগার হবে?
দেলোয়ার হোসেনের মা দিলারা বেগম বলেন, ছেলেটাকে তেমন কিছু দিতে পারিনি। আমি দীর্ঘ ৭/৮ বছর যাবত পঙ্গু হয়ে পড়ছি। দৈনিক ৪/৫শত টাকার ঔষধ লাগে। স্বামী রিক্সা চালিয়ে যা পান তা দিয়ে আমাদের আর চলে না। তাই ছেলেটাকে ভালো কিছু দিতে পারি না। এখন তাকে ভর্তি হতে অনেক টাকা দরকার। কিভাবে টাকা জোগার করবো জানি না। তাই তিনি সমাজের বিত্তবান বা সরকারের কাছে ছেলের সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করছেন। অনেক মেধাবী হওয়া সত্বেও তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের যুদ্ধে হয়তো পরাজিত হতে পারে বলে জানায় প্রতিবন্ধি মা ।
তার পড়াশুনার জন্য যাবতীয় খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আর তাই অর্থের অভাবেই হয়তো তার স্বপ্নটা বাস্তর রুপ লাভ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। সমাজের স্বহৃদয়বান ব্যাক্তিদের আর্থিক সহযোগিতাই তার এই স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে পারে।
ভরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এসএমসি সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, ছেলেটা এতো মেধাবী যে বাড়িতে তার লেখাপড়ার মতো পরিবেশ নাই। তারপরেও আমার বাড়িতে এনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। ছেলেটিকে সহযোগিতা করতে পারলে সে অনেক ভালো করবে।
স্থানীয় ইউপি তাজুদ আলী বলেন, দেলোয়ার অদম্য মেধাবী ছেলে। আমি নিজেও একাধিকবার সাহায্য সহযোগিতা করেছি দেলোয়ারের পরিবারকে। এখন ভর্তিসহ লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। সমাজের বিত্তশালীদের তার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply