মিঠুন দাস মিঠু, ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, নিটার :: বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামসহ উওর-পূর্বাচঞ্চলের জেলাগুলো গতবছরের মে-জুনে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার স্বীকার হয়। পাহাড়ি ঢল ও অতি ভারী বৃষ্টিতে নদনদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং পানিবন্দি হয়ে পড়ে সিলেট-সুনামগঞ্জের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। সম্প্রতি, সেই বন্যা পরিস্থিতির আগাম সংবাদ ছয়মাস পূর্বেই জানার এক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন সাভারে জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-নিটার এর শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমন্বিত একটি দল।
ভয়াবহ এ বন্যার পেছনে বেশ কিছু কারণকে দায়ী করা হয় এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো: অস্বাভাবিক জলবায়ু পরিবর্তন, ভারতের ইচ্ছেমতো বাধ ব্যবহার, পানি-পলি ব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, নদীদখল ও যত্রতত্র বালু উওোলন।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ভারতের চেরাপুঞ্জি অঞ্চলে। বঙ্গোপসাগরে থেকে আসা জলীয় বাষ্প মেঘালয়ের পাহাড়ের সাথে ধাক্কা লেগে ওপরে উঠে যায় এবং পরবর্তীতে ভারী হয়ে বৃষ্টি আকারে পড়তে শুরু করে। অন্যদিকে, সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত থেকেই ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি এলাকার শুরু হয়েছে এবং সেখানকার বৃষ্টির পানি সরাসরি ছয় থেকে আট ঘন্টার মধ্যে তাহিরপুর হয়ে হাওরে এসে মেশে। সিলেট-সুনামগঞ্জের এ ভয়াবহ বন্যার পেছনে চেরাপুঞ্জির এই প্রবল বৃষ্টিপাতকে প্রধান কারন বলে ধারণা করা হয়। অপরদিকে, উজান থেকে আসা পলি-পাথর, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বেষ্টনী পদ্ধতির ব্যবহার, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, নদীদখল-নদীভরাট, যত্রতত্র বালু উওোলনের ফলে নদীগুলোর পানি বহনের ক্ষমতা কমে যায় এবং পানিবন্দি হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। এছাড়া নদীর নাব্যতা নষ্টের জন্য ভারত অংশে অপরিকল্পিত পাথর উওোলনকে ও দায়ী করা হয়, উজানে পাথর উওোলনের ফলে মাটি আলগা হয়ে নদীতে চলে আসে এবং নদীর তলদেশ ভরে যায়। এই কারণেই মেঘালয়, আসাম বা চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টিপাত হলেই সিলেট, সুনামগঞ্জ বা কুড়িগ্রাম এলাকায় বন্যার তৈরি হয়।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী এসকল প্রভাবকের সমন্বয় করে মেশিন লার্নিং, এডভান্সড ডিপ লার্নিং এলগরিদম ব্যবহার করে কিভাবে ছয়মাস আগেই বন্যার আগাম সংকেত জানা যাবে সে সম্পর্কিত একটি গবেষণা পেপার পাবলিশ করেছে নিটারের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল শিক্ষার্থীরা। “হাইড্রো-ইনফরমেটিক মডেলিং ফর ফ্লাড প্রেডিকশন থ্রো এক্সপ্লেইনেবল এআই টু ইন্টারপ্রেট ওয়াটার ডাইনামিকস ইন-বাংলাদেশ প্রার্সপ্রেক্টিভ” শীর্ষক গবেষণা পেপারটির অথর হিসেবে আছেন নিটারের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেইন মাহির, মোঃ তানজুম আন তাসরিফ, মোঃ আমির হামজা, তওফিকুল হক তামিম। শিক্ষকদের মধ্যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেকচারার দীপাঞ্জলি কুন্ডু এবং একই বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর জনাব আনিসুর রহমান।
সম্প্রতি, গবেষণা পেপারটি মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) কর্তৃক আয়োজিত ষষ্ঠ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিইইআইসিটি) এ প্রেজেন্টেশনের জন্য গৃহীত হয়।#
Leave a Reply