এইবেলা, কুলাউড়া :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা রাবার বাগানের টেপিং সুপারভাইজার শামীম আহমদ বাগানের শ্রমিক লীগের চক্রান্তের শিকার হয়ে চাকরি হারান ২০০৯ সালে। বিষয়টি গড়ায় শ্রম আদালতে। শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনাল তাকে চাকরিতে স্বপদে বহালসহ বেতন ভাতাদি প্রদানের নির্দেশ দিলেও সেই রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে ১৫ বছর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
জানা যায়, উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র শামীম আহমদ ১৯৮৩ সালে ভাটেরা রাবার বাগানে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০০৫ সালে টেপিং সুপারভাইজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
২০০২ সালে তিনি রাবার বাগানে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল গঠন করে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া রাবার বাগান শ্রমিক কর্মচারী ট্রেড ইউনিযনের ২বার সধাারণ সম্পাদক ও ২ বার সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে ট্রেড ইউনিয়ন সিলেট জোন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষামতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালে ২২ সেপ্টেম্বর শ্রমিক লীগ তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে একতরফা তদন্ত করে তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সাক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে আবেদন করায় কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে।
এতে শ্রমিক লীগ নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে দলের নেতাকর্মী, গাছচোর ও বাহিরাগত সন্ত্রাসীরা একতাবদ্ধ হয়ে অফিস এলাকায় শামীম আহমদের উপর হামলা করে। শুধু তাই নয় তাকে কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনেও বাঁধা প্রদান করে। এমতাবস্থায় ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর শ্রমিক লীগ নেতারা ফের আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটি দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হলে শামীম আহমদ তদন্ত কমিটির উপর আপত্তি ও পুন:তদন্তের আবেদন জানান।
একের পর এক অভিযোগ ও তদন্তের নামে হয়রানিতে হতাশ শামীম আহমদ চাকরিতে টিকে থাকতে মৌলভীবাজার জজ আদালতে মামলা (নং ২৮/১০) দায়ের করেন। আদালত মহাব্যবস্থাপক, সহ ব্যবস্থাপক ও প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এই মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে ২০১০ সালের ১৭ মে শামীম আহমদকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরই প্রেক্ষিতে কোন প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুয়োগ না দিয়ে তদন্ত ছাড়াই ১৫ জুলাই তাকে চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়।
অফিস থেকে স্থায়ী বরখাস্তের এই আদেশের বিরুদ্ধে শামীম আহমেদ চট্রগ্রাম শ্রম আদালতে একটি মামলা (নং ৯/১০) দায়ের করেন। দীর্ঘ ৯ বছর মামলা চলার পর ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালত কোন কারণ ছাড়াই মামলাটি খারিজ করে দেন।
এতে থেমে যাননি শামীম আহমদ। তিনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপীল মামলা (নং ২২৫/১৮) দায়ের করেন। ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল আপিল মঞ্জুর করেন। আপিল আদালতের রায়ে চাকরিতে যোগদান এবং বকেয়া বেতনভাতা প্রদানের নির্দেশ দেন। আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে শামীম আহমদ ২৪ এপ্রিল ভাটেরা রাবার বাগানে যোগদান পত্র জমা দেন। কিন্তু উক্ত রাযের বিরুদ্ধে বাগান কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিটপিটিশন (নং ১৫৬৪০/২৩) দায়ের করলে আদালত চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি রিট পিটিশন খারিজ করেন। ২৭ জানুয়ারি আদালতের আদেশসহ পুনরায় চাকরিতে যোগদান পত্র জমা দেন। কিন্তু ৬মাস অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ আদালতে রায় বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগ না নিলে শামীম আহমদ গত ২৪ জুন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বরাবরে একটি আবেদন করেন এবং তার আইনজীবি গত ১৫ জুলাই একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন।
ভুক্তভোগী শামীম আহমদ জানান, ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে চাকরি হারিয়ে গত ১৫ বছর থেকে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আদালতের রায় বাস্তবায়ন এবং চাকুরি ফিরে পেতে চান। চাকরিরও মেয়াদ বেশিদিন না থাকায় তিনি তার ন্যায্য বেতন ভাতা পেয়ে সম্মানের সহিত অবসরে যেতে চান।###
Leave a Reply