এইবেলা, কুলাউড়া :: দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি দিন ধরে কোন্দলে বিপর্যস্থ হয়ে পড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির বিরোধ নিষ্পত্তি করলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন। রোববার (০১ ডিসেম্বর) সকালে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম ময়ূন বিবদমান দুটি গ্রুপকে নিয়ে তাঁর বাসভবনে দীর্ঘ বৈঠকের মাধ্যমে কোন্দলের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অতীতের সকল মতানৈক্য, ভুল-বোঝাবুঝি ও কোন্দল ভুলে একসাথে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার।
বিএনপি সূত্র জানায়, চার ঘন্টাব্যাপী বৈঠকটি চলে সকাল ১১ টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত। দীর্ঘ সময় চলা এ বৈঠকে বিএনপির বিবদমান দুটি অংশের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ধৈর্য্যসহকারে শুনেন ফয়জুল করিম ময়ুন। তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাংগঠনিক নির্দেশনা যথাযথ ভাবে মেনে চলার জন্য তিনি নেবৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।
বৈঠকে অংশ নেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, শওকতুল ইসলাম শকু, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক মোশাররফ হোসেন বাদশা, সমন্বয়ক মো. হেলু মিয়া, আনিসুজ্জামান বায়েস, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির জয়নাল আবেদীন বাচ্চু, বদরুজ্জামান সজল, রেদোয়ান খান, শামীম আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, আব্দুল মন্নান, ফাতু মিয়া, আলমগীর ভুঁইয়া, ফারুক আহমেদ পান্না, দেলোয়ার হোসেন, শামীম আহমেদ, আকদ্দস আলী, বদরুল হোসেন, আব্দুল জলিল জামাল, ইছহাক চৌধুরী ইমরান, মুক্তার মিয়া, রফিক আহমেদ, শহীদুল হক প্রমুখ।
বৈঠকে জেলা আহবায়কের প্রতি আস্থা রেখে নেতৃবৃন্দরা বলেন- জেলা বিএনপির বিভক্তির কারণে আমরা উপজেলাও বিভক্ত ছিলাম। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক মতানৈক্যর কারণে কুলাউড়ায় আমরা একে অন্যের সাথে একসাথে বসতে পারিনি। দলকে তৃণমূলে সংগঠিত করা যায়নি। এমনকি সামাজিক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও আমরা একে অন্যের সাথে খোলামেলা বসতে পারিনি। অথচ আমরা একদল করি কিন্তু দলের বিভক্তির এ দুরত্বের কারণে আমরা এক সাথে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সাজাতে বা সংগঠিত করতে পারিনি। আজকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়ায় আমাদের সুযোগ হয়েছে খোলামেলা কথা বলার। যা অতীতে এ সুযোগ আমরা পাইনি। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দলে জেলার ঐক্য বিনষ্ট হলে উপজেলা বিনষ্ট হয়, উপজেলা বিনষ্ট হলে এর প্রভাব ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। যা সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে ঠিকমতো দল পরিচালনা করা যায় না। এর ফলে দল তৃণমূলে দুর্বল হয়।
নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন বলেন- তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশ হচ্ছে- দলে কোনো বিভেদ ও মতভেদ রাখা যাবে না। দল করতে হলে আমরা সবাই দলের হাই কমান্ডের নির্দেশনা যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে। এবার সুযোগ হয়েছে দলকে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত শক্তিশালী করার। এরই মধ্যে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন। ইউনিয়ন থেকে উপজেলা। উপজেলা থেকে জেলা পর্যায়ে প্রতিটি স্তরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এখন থেকে দলে আর কোনো পকেটে কমিটি করা হবে না। স্বজনপ্রীতি চলবে না। দলের তারেক রহমান এর সাংগঠনিক নির্দেশনা কঠোর ভাবে মেনে চলা হবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না।
ফয়জুল করিম ময়ূন আরও বলেন – বিগত ফ্যাসিষ্ট হাসিনা পতনের আন্দোলন সংগ্রামে যেসকল নেতৃবৃন্দ জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে প্রাধান্য দিয়েই কমিটি গঠন করা হবে। সে জন্য জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সভায় প্রতিটি উপজেলার সমন্বয়কারীদের টিমদের এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন দলকে সুন্দর সুষ্ঠুভাবে কর্মীসভা করে প্রতিটি স্তরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনে সহযোগিতা করার জন্য নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৯ সালে উপজেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের ভোটে জয়নাল আবেদীন বাচ্চু সভাপতি, বদরুজ্জামান সজল সাধারণ সম্পাদক ও সুফিয়ান আহমদ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত বছরের ৩১ জুলাই জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম নাসের রহমান উপজেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করেন। এরপর গত বছরের ৬ আগস্ট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আশিক মোশারফকে আহ্বায়ক, সাংগঠনিক সম্পাদক বকশী মিসবাউর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক, সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আবেদ রাজাকে প্রথম সদস্য ও শওকতুল ইসলাম শকুকে দ্বিতীয় সদস্য করে ৩৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ঘোষণার পর সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কমিটি বাতিল করার দাবি ওঠে। এ জন্য জয়নাল আবেদীন বাচ্চু, বদরুজ্জামান সজল ও সুফিয়ান আহমদ স্বাক্ষরিত একটি আবেদন গত বছরের ১০ আগস্ট দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে দেওয়া হয়। লিখিত ওই আবেদনে বলা হয়, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম নাসের রহমান সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন। এতে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে কোন্দল সৃষ্টি হয়। যার প্রতিক্রিয়ায় কুলাউড়ার বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এদিকে গত বছরের ২২ অক্টোবর কাউন্সিলের মাধ্যমে শওকতুল ইসলাম শকুকে সভাপতি ও শামীম আহমদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে বিএনপির আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে গত ৫ আগস্টের পূর্বে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসের রহমান বলয়ের অনুসারী হিসেবে উপজেলা বিএনপির এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন সভাপতি শওকতুল ইসলাম শকু। অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের বলয়ের অনুসারী হিসেবে কুলাউড়া বিএনপির অপর গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এড. আবেদ রাজা। বিএনপির ওই দুই গ্রুপ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় পৃথক পৃথক ভাবে কাউন্সিল করে কমিটি গঠন ও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এতে কোন্দল দেখা দেয় দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে। গত ৫ আগস্টের পরে বিচ্ছিন্নভাবে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের নেতাকর্মীদের নিয়ে কটুক্তি করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। অবশেষে সকল সমালোচনার উর্ধ্বে উঠে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভুলে একত্রিত করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন।#
Leave a Reply