এইবেলা, কুলাউড়া ::
তারা আমার পুড়িরে (মেয়েরে) মারিয়া ঝুলাইয়া রাখছে। আমি মরার খবর পাইয়া মেম্বারর বাড়িত যাওয়ার পরে তারা কইন লাশ ময়না তদন্ত না করাইয়া বাড়ি নিয়া দাফন করিলাইতাম। আমারে তারার বাড়ি আর ৫ লাখ টেকা দিবা। মরার দিন আমি কিচ্ছু কইতাম পারছি না। মেম্বার আর তার ভাইয়াইনতে (ভাইয়েরা) কইন (বলেন), বেশি মাতলে আমারে ও আমার পুয়ারে জানে মারিলাইবা (মেরে ফেলবে)। আমি ডরাইয়া (ভয়ে) কিচ্ছু কইছিনা। আমি ন্যায় বিচার চাই। আমার পুড়ির হত্যার বিচার চাই- বলে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত রায়নার মা নেওয়া বেগম (৫০)।
কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে নেওয়া বেগম জানান, তারা আমার মেয়েকে নিয়েছে লেখাপড়া করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে। মেয়েটা দেখতে শুনতে সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হওয়ায় লেখাপড়া করিয়ে পুলিশে চাকরি দেবে। এমনকি বিয়াও দিয়ে দেবে। কিন্তু আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর গত ১০দিনে তারা আর কোন খোঁজও নেয়নি।
কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বারের বাড়ির থেকে মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) তাছলিমা আক্তার রায়না (১৫) নামক এক গৃহপরিচারিকার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত রায়না ভুইগাঁও গ্রামের মৃত জামাল মিয়ার মেয়ে। সে কানিহাটি বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী।
রায়নার মৃত্যুর ৯দিন অতিবাহিত হলেও গোটা এলাকায় এই মৃত্যু নিয়ে চলছে গুঞ্জন। এলাকায় লোকমুখে রায়নাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। মৃত্যুকালে রায়না অন্ত:স্বত্তা ছিলো। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বানচালের জোর চেষ্টা চলছে। মেম্বারের বাড়ির লোকজনের চারিত্রিক অধ:পতনের কথা এবং ৩ মাস আগে বুলবুল মেম্বারের ভাই হারুন জোর করে নিহত রায়নাকে তাদের বাড়িতে নেয়- এমন খবর লোকমুখে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
সরেজমিন ভূঁইগাঁও গ্রামে নিহত রায়নার বাড়িতে গেলে তার মা নেওয়া বেগমের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ। মেয়ের ছবি বুঁকে নিয়ে সারাদিন কাঁদেন মা। এমন কথা বলেন রায়নার বড় বোন শারমিন বেগম। তিনি আরও জানান, তার বোন মেম্বারের বাড়ির লোকজন তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় এবং শ্লীলতাহানি করে বলে মায়ের কাছে বলেছে। নিহত রায়না অনেকটা সুটাম দেহের অধিকারী ছিলো।
নিহত রায়নার মা নেওয়া বেগম ও বড়বোন শারমিন বেগম জানান, ঘটনার দিন মেম্বার বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে তাদেরকে বলা জয় জলদি যেতে। রায়নাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা মেম্বারের বাড়িতে যাওয়ার পর তাদেরকে বলা হয় রায়না বাথরুমে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তারা বাথরুমে ঢুকে হতবাক হয়ে যান। নিহত রায়নার পা একটি টুলে লাগানো ছিলো। এভাবে কোন মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে না। রায়নাকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
নিহত রায়নার চাচাতো ভাই তারেক মিয়া ও ভাই সলমান মিয়া জানান, ময়নাতদন্ত না করানোর জন্য ওসির পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করার জন্য মেম্বারের বাড়ির লোকজন তাদেরকে বলে। ময়নাতদন্তে নিয়ে যাওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। ৩১ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে পাইকপাড়া বাজার থেকে তারা ফেরার পথে তাদের পথ আগলে মারপিট করার চেষ্টা চালায়। রাতে কয়েকজন অজ্ঞাত লোক হামলার চেষ্টা করে। তাদের চিৎকারে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। অর্থে বিত্তে প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বনচালে বুলবুল মেম্বার উঠেপড়ে লেগেছেন। বুধবার ০১ সেপ্টেম্বর তিনি মৌলভীবাজার গেছেন বলে তারা দাবি করেন।
তারা আরও জানান, এখন ছোট ভাইবোন ও মাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। যেকোন সময় তাদের প্রাণনাশের জন্য হামলা হতে পারে।
এব্যাপারে সাবেক মেম্বার নুর হোসেন চৌধুরী বুলবুলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মৌলভীবাজার রয়েছেন বলে নিশ্চিত করে জানান, মেয়েটি আমার বড়ভাই গুলজার আহমদ চৌধুরী বকুলের বাসায় থাকতো। ঘটনার দিন আমি বাড়িতে অসুস্থ ছিলাম। সকালে মেয়েটিকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আমার ঘরের বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে দেখা যায়, গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কেন আত্মহত্যা করলো আল্লাহ ছাড়া বলার উপায় নেই। বাকিটা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে বুঝা যাবে।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায় জানান, ময়নাতদন্তে নিহত রায়না বেগম ধর্ষণের শিকার কি-না? অন্ত:স্বত্ত্বা কি-না? এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসতে একমাস বিলম্ব হতে পারে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনার কিছু বলা সম্ভব নয়। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।#
Leave a Reply