এইবেলা, কুলাউড়া ::
কুলাউড়া উপজেলায় হামলার শিকার হওয়ার পরেও প্রতিপক্ষের হয়রানিমুলক মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ উত্থাপন করেন উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কেওলাকান্দি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলাম উদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত রমজান মাসে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে সূরা তারাবির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মসজিদ কমিটির সভায়। কিন্তু একই এলাকার বাসিন্দা প্রভাবশালী মদরিছ আলী, হান্নান মিয়া, সজিব মিয়া, মকবুল আলী ও তার সহযোগিরা এ সিদ্ধান্তকে অগ্রাজ্য করেন। তখন জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির সাথে জড়িত মদরিছ আলী ইচ্ছামাফিক তাঁর দুই ভাতিজা ইসমাইল ও ইসরাইলকে দিয়ে প্রথমদিকে মসজিদের ইমামকে বাদ দিয়ে তিন দিন খতম তারাবি পড়ান। মদরিছ আলী ও তার সহযোগিরা খতম তারাবীর অজুহাত দেখিয়ে ১৭ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটার দিকে পরিকল্পিতভাবে তারাবীর নামাজ শেষে মসজিদের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও মুসল্লীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ চান্দু মিয়া আত্মরক্ষার্থে তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাড়িতে গিয়ে হামলাকারীরা মুসল্লীসহ ঘরের লোকজনের ওপর হামলা ও বেধড়ক মারধর করেন। হামলায় আব্দুল গফুর, ইসলাম উদ্দিন, চান্দু মিয়ার ছেলের বউ জেসমিন বেগম, চান্দু মিয়ার স্ত্রী আম্বিয়া বেগম, সুরুজ আলী, মাসুদ আলী, রেদুয়ান ইসলাম, নিজাম উদ্দিন, আবুল কাশেমকে বেধড়ক মারপিট করে গুরুতর আহত করে। এসময় জেসমিন বেগম ও আম্বিয়া বেগমকে মাঠিতে ফেলে পড়নের কাপড় টানাহেচড়া করে শ্লীলতাহানী করে। আহতদের কুলাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় আব্দুল গফুর, ইসলাম উদ্দিন, জেসমিন বেগম, আম্বিয়া বেগম, সুরুজ আলী, ও মাসুদ আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
ইসলাম উদ্দিন বলেন, হামলার ঘটনায় মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ চান্দু মিয়া বাদী হয়ে জামায়াত নেতা মদরিছ আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় ১৯ এপ্রিল একটি মামলা (নং-১৪) দায়ের করেন। কিন্তু আমাদের মামলার ৩দিন পরে হয়রানীমূলক পাল্টা মামলা দায়ের করে প্রতিপক্ষ মদরিছ আলী বোন জামাই ছবেদ আলী। এতে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ চান্দু মিয়াসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া চান্দু মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন ঘটনার দিন সিলেটে থাকলেও তাকে মামলায় আসামী করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ও উপজেলার জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। বিবাদীরা বিষয়টি পাত্তা দেয়নি। এদিকে মামলার প্রধান অভিযুক্ত মদরিছ আলীকে আটক না করায় পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে ঘটনার এক মাস পর মধ্যপ্রাচ্যেও দুবাইতে পালিয়ে যায়। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানীমূলক মামলায় পুলিশের ভয়ে ঘর-বাড়িছাড়া হয়ে থাকতে হয়। আমরা প্রথম দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা না দিয়ে প্রতিপক্ষের মামলার প্রতিবেদন আগে জমা দেয় পুলিশ। আমাদের মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে হামলায় আহত দুইজনের মেডিকেল রিপোর্ট দেখিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই সাদির উদ্দিন।
অথচ তাদের চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, প্রতিপক্ষরা দা, রামদা, ছুরি দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেনি তারা বাঁশের লাঠি দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আর আমরা নাকি প্রতিপক্ষের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছি। এতে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিপক্ষের সাথে আতাত করে পক্ষপাতিত্ব ও স্বেচ্ছাচারিতার করে আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই সাদির উদ্দিন জানান, হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত মেডিকেল রিপোর্ট অনুসারে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, দু’পক্ষের চার্জশিট দু’ধরণের হয়েছে। আমার তদন্তে দেয়া প্রতিবেদন সঠিক না হলে বিষয়টি আদালত দেখবে।
কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, যাদের মেডিকেল রিপোর্ট আগে এসেছে তাদের চার্জশিট আগে দেয়া হয়েছে। আর প্রধান আসামী পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেয়েই সে দেশের বাইরে চলে গেছে। আসামীর বিরুদ্ধে তো চার্জশিট দেয়া হয়েছে। চার্জশিট যাদের পক্ষে যাবে না তারা তো অভিযোগ করবেই। #
Leave a Reply