আব্দুর রব, বড়লেখা ::
বড়লেখা উপজেলার ছোটলেখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক মীরা বালা দত্ত। ৪ বছর আগে অবসরগ্রহণ করলেও নিঃস্বার্থভাবে এখনও নিয়মিত স্কুলে যান, অত্যন্ত যতেœর সাথে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। তবে তিনি পাঠদানের জন্য স্কুল থেকে নেন না কোনো পারিশ্রমিক। তিনি শুধু একজন সফল শিক্ষকই নন, পারিবারিকভাবে একজন সফল মাও। দুই ছেলের একজন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার, অপরজন সরকারি কর্মকর্তা। দুই পুত্রবধুর একজন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার ও অন্যজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। সফল এই শিক্ষক শারীরিক সক্ষমতা সাপেক্ষে আজীবন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো বিলিয়ে দিতে চান।
জানা গেছে, উপজেলার বারইগ্রামের ফার্মেসী ব্যবসায়ী রনজিৎ কুমার দত্তের স্ত্রী মীরা বালা দত্ত ১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারী উপজেলা সদরের ষাটমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে ছোটলেখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। সেখান থেকেই ২০১৭ সালের ৬ আগষ্ট অবসরগ্রহণ করেন। কিন্তু তার কোমলমতি ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীদের সাথে এমনভাবে মিশেছিলেন, একদিনের জন্যও তাদের ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারেননি। বিশেষ করে বছরের এক তৃতীয়াংশ সময় অবশিষ্ট থাকতে তার অবসরগ্রহণ শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে ভেবেই তিনি পরের দিন থেকেই নিয়মিত স্কুলে পাঠদান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এসএমসি, প্রধানশিক্ষক ও অন্যান্য সহকর্মীরাও তাকে ছাড়া একধরণের শূন্যতা অনুভব করেন। তার এ প্রস্তাবে সবাই খুশি হন। তবে তিনি শর্ত দেন তার পাঠদানের জন্য স্কুল থেকে তাকে কোনো পারিশ্রমিক দিতে পারবেন না। এভাবেই বিনা বেতনে অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক মীরা বালা দত্ত বিগত ৪ বছর ধরে অদ্যাবধি নিয়মিত পাঠদান করে যাচ্ছেন।
এব্যাপারে মীরা বালা দত্ত জানান, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তিনি বিনাবেতনে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। স্বামী ও সন্তানরা তাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। মনেই হয় না চাকরি থেকে তিনি অবসরে গেছেন। এই স্কুল ও ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতোই দেখেন। আজীবন তিনি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে যেতে চান।
প্রধান শিক্ষক প্রতাপ কুমার দত্ত জানান, সহকারি শিক্ষক মীরা বালা দত্ত স্কুল ও শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ। তিনি শুধু শিক্ষক হিসেবেই সফল নন, মা হিসেবেও অত্যন্ত সফল। তার দুই ছেলে ও পুত্রবধুরাও পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। প্রায় ৪ বছর হলো অবসরে গেছেন। কিন্তু অদ্যাবধি আগের মতোই যথাসময়ে স্কুলে আসেন, ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। তিনিসহ স্কুলে ৯ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। অন্য কারোই মনে হয় না তিনি অবসরে গেছেন। নিঃস্বার্থ পাঠদানের এমন ঘটনা দেশে খুবই বিরল।#
Leave a Reply