এইবেলা, কুলাউড়া ::
কুলাউড়া উপজেলায় ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায রাউৎগাঁও স্কুল এন্ড কলেজের মেহেদী হাসান (১৬) নামক ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ও আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) রাউৎগাঁও স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবাদ সভায় প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তণ ছাত্র খালেদ সাইফুল্লাহ’র সঞ্চালনায় একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিলকিস বেগম, শিক্ষক আদিত্য চন্দ্র দাস, মাওলানা আব্দুস সাত্তার, অরুন মোহন নাথ, মোঃ রুনু মিয়া, মোঃ তারেক আহমদ, ইন্দ্রজিৎ দেব, এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন আজাদ আহমেদ।
মানববন্ধনে বক্তারা ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
স্থানীয় ও শিক্ষার্থী মেহেদীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, মেহেদী ও তার ছোট বোন রাউৎগাঁও স্কুল এন্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রতিদিন ভাই-বোন একসাথে স্কুলে যাওয়া –আসা করতো। রাউৎগাঁও ইউনিয়নের নর্তন গ্রামের বাসিন্দা রজব আলীর ছেলে এলাকার চিহ্নিত বখাটে ইজিবাইক চালক আসাব আলী (১৬) ও রমজান আলীর ছেলে বখাটে আলমাছ আলী (১৫) প্রায়শই রাস্তায় মেহেদির বোনসহ অন্যান্য ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে স্থানীয় আমজুপ বাজারে একাধিকবার শালিস বৈঠকও হয়। বিষয়টি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মেহেদীর ওপর তেলেবেগুনে জ¦লে ওঠে আসাব ও আলমাছ।
গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় মেহেদী আমঝুপ বাজার থেকে বাজার করে বাড়ি ফিরছিলো। পথিমধ্যে আসাব ও আলমাছ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা-যোগে আমঝুপ বাজারের পূর্ব পাশের্^ মাদ্রাসার রাস্তা থেকে জোরপূর্বক ইজিবাইকে তুলে নিয়ে যায় মেহেদীকে। অর্ধ কিলোমিটার অতিক্রম করার পর একপর্যায়ে ইজিবাইকের ভেতর থেকে প্রাণ রক্ষায় লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে ইজিবাইকটি থামিয়ে দেয় আসাব, আলমাছ ও তাদের সহযোগিরা। এসময় মেহেদীর গলায় ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে উপরযুপুরি কিল-ঘুষি মেরে গুরুতর আহত করে। মেহেদীর আত্মচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে এলাকাবাসী আলমাছকে আটক করলেও প্রধান আসামী আসাব ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে।
মেহেদীর স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুলাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করলে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে ৯ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে মেহেদী। হামলায় মেহেদীর শ্বাসনালীর ভেতরে অভ্যন্তরীণ ৫টি ও গলায় ২২টি সেলাই দেয়া হয়েছে। গলায় মারাত্বক জখমের কারণে ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না মেহেদী।
হামলার ঘটনায় মেহেদীর পরিবারের পক্ষ থেকে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করা হলেও প্রধান আসামী আসাব আলীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
মেহেদীর পিতা বর্গাচাষী চিনু মিয়া জানান, স্কুলে যাওয়া আসার পথে আমার মেয়েসহ অন্যান্য ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো আসাব ও আলামাছ গংরা। এ নিয়ে আমার ছেলে প্রতিবাদ করায় তার প্রাণ নাশের উদ্দেশ্যে আলমাছ ও আসাব আলী পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। আমি বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আপোষ করার জন্য আমাকে নানান হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ৭ নভেম্বর আমি মৌলভীবাজার আদালতে আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছি। বর্তমানে আমরা আতঙ্কে রয়েছি। আমার নিরপরাধ ছেলের ওপর হামলার ন্যায় বিচার দাবি করছি।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষন রায় জানান, এ ঘটনায় ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত একজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রধান আসামী পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খুব দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। #
Leave a Reply