আজিজুল ইসলাম, কুলাউড়া ::
মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী হাবিবুর রহমান ফজলু ও মিলি বেগমের ঘর আলোকিত করে যমজ শিশুপুত্রের জন্ম হয়। সুদুর প্রবাসে থেকে বাবার হৃদয়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। সন্তানের মুখ দেখতে দেশে আসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বৈশি^ক মহামারি করোনা। ছবি দেখে আর ভিডিও কলে যমজ শিশুপুত্রদ্বয়ের সাথে সময় কাটতে থাকে। ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর দেশ থেকে পাওয়া একটি সংবাদ সব যেন ওলট পালট করে দেয়। যমজ শিশুপুত্রের মধ্যে বড় আরিয়ান (২) পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার খবর।
পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় প্রবাসী বাবাকেই মর্মাহত করেনি। গোটা পরিবারেরই যেন নেমে আসে দু:স্বপ্ন। যমজ ভাই মোহাইমিন যেন সবসময় খোঁজে ফেরে তার নিহত ভাই আরিয়ানকে। মাত্র ২ বছর বয়স হওয়ায় মাকে বুঝাতে পারে না, তার ভাইটি কোথায়? মোহাইমিনের মধ্যে যেন শুন্যতা সার্বক্ষণিক তাড়া করে ফিরে।
মা মিলি বেগম জীবিত মোহাইমিনের মধ্যে হারানো আরিয়ানের শোক ভুলতে চান। কিন্তু চাইলে কি সন্তান হারানোর বেদনা সহজে ভুলা যায়? মোহাইমিনের ছটফটানি আরও বেশি করে কষ্ট হয়ে বিধে মা মিলি বেগমের বুকে। প্রতিটি মুহুর্তে মনে হয়, এই তো আরিয়ান আর মোহাইমিন এক সাথে খেলছে। মা দু’জনকে এক সাথে খাওয়াবেন। গোসল করাবেন। ঘুম পাড়াবেন। কিন্তু প্রতিটি কর্মে আরিয়ানের শুন্যতা যেন আরও বেশি অনুভব করেন।
আরিয়ান মারা যায় তার নানাবাড়ি উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের কৌলারশি গ্রামে। সবার অজ্ঞাতে বাড়ির সামনের পুকুরে ডুবে মারা যায়। স্বামী প্রবাসে থাকায় আরিয়ানের মা মিলি বেগম সন্তানসহ বাবার বাড়িতে থাকতেন। সন্তান হারানোর পর ফিরে আসেন স্বামীর বাড়ি একই ইউনিয়নের চাতলগাঁও গ্রামে। একটি সন্তান হারানোর কারণে স্বামীর বাড়ির পুকুরটিও শুকিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এতেও যেন নিশ্চিন্ত তা নয়। সার্বক্ষণিক নজর রাখেন মোহাইমিনের উপর।
শিশু আরিয়ানের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ৩ মাস পেরিয়েছে। নিহত শিশু আরিয়ারে নানার বাড়ি কিংবা দাদার বাড়ির কোন মানুষই যেন ঘটনাটি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না।
যুক্তরাজ্য থেকে নিহত আরিয়ানের বাবা হাবিবুর রহমান ফজলু জানান, আল্লাহ এক সাথে দু’টি পুত্র সন্তান দিলেন। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখার আগে একজনকে নিয়ে গেলেন। কান্নাঝরা কন্ঠে তিনি জানান, কত পরিকল্পনা ছিলো। কাজের ফাঁকে ছেলেদের সাথে ভিডিও কলে খুনসুটি করে পার হতো সময়। সব যেন ঝড়ের মতো ওলট পালট হয়ে গেলো। বৈশি^ক মহামারি করোনায় ছেলেগুলোর মুখ দেখতে দিলো না। তার ওপর পানিতে ডুবে ছেলেটা মারা গেলো। বুকে যেন হাজারমন ব্যথা নিয়ে সময় কাটাই। আর যেন কোন বাবা মায়ের সন্তান পানিতে ডুবে মারা না যায়।
উল্লেখ্য কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের কৌলা রশি গ্রামে ২০২১ সালে ১৬ নভেম্বর পানিতে ডুবে আরিয়ান (২) নামক এক মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীর শিশু পুত্রের মৃত্যু হয়। #
Leave a Reply