এইবেলা কুলাউড়া :: অলিউর রহমান নয়নের বাবা আশিক মিয়াকে শান্তনা দিয়ে কেউ কান্না নিবারণ করতে পারছিলেন না। হাউ মাউ করে কেঁদে বিলাপ করছিলেন, “আমার পুয়ার (ছেলের) পুড়া মুখ দেখমু জানলে, তারে চাকরিত দিতাম না। আমার পুয়ারে আমি কিলা মাটি দিতাম। তার টেকায় সংসারের অভাব কিছুটা দুর অইছিল। বাকি হুরুতা (সন্তানদের) লইয়া কিলা দিন কাটাইতাম। আমার সব শেষ।”
০৬ জুন সোমবার সকাল ১১টায় নয়নের লাশ কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলী গ্রামে এসে পৌঁছে তখন পরিবারের লোকজনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে পরিবেশ। গোটা এলাকার শত শত মানুষ আগে থেকেই ভীড় জমান নয়নকে শেষবারের মত দেখতে। যেই দেখেছেন নয়নের জন্য অশ্রু বিষর্জণ করেছেন। ফটিগুলী গ্রামের মসজিদের সামনে বেলা দু’টায় জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ জানাযায় অংশ নেন।
পরিবারের ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সে সবার বড় ছিলেন অলিউর রহমান নয়ন। ভাই বোনরা সবাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় নয়নের মৃত্যু তাদের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলেনি। বাবা, সৎ মা আর ভাই বোনদের নিয়ে অভাব অনটনের সংসারের হাল ধরতেই অল্প বয়সে নয়নকে চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছিলো। দরিদ্র পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে ৪ মাস পূর্বে একই গ্রামের বাসিন্দা মামুন মিয়া ঠিকাদারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড বিএম কনটেইনার ডিপোতে শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন। তার মৃত্যুতে পরিবারের স্বপ্নেরও মৃত্যু হলো।
উল্লেখ্য, শনিবার (০৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় সেখানে কর্মরত শ্রমিক কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা অলিউর রহমান নয়ন (২৩) নামক যুবক মারা যান। দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে থেকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা লাইভ করছিলেন। নেট দুনিয়ায় নয়নের লাইভ এখন ভাইরাল।
Leave a Reply