এইবেলা, কুলাউড়া :: সমাজের ছিন্নমূল অসহায় শতাধিক ভিক্ষুককে পেটভরে ভোজন করায় কুলাউড়ার একটি সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা। কুলাউড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রবিরবাজার জামে মসজিদে প্রতি শুক্রবার হাজার দশেক মুসল্লি জুম্মার নামাজ আদায় করেন। কুলাউড়া সহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মুসল্লিরা রবিরবাজার জামে মসজিদে বিশাল জামায়াতে জুম্মার নামাজ আদায় করেন। রবিরবাজার জামে মসজিদে একসাথে এত লোকের সমাগম হয় এ কারণে প্রতি শুক্রবার জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দরিদ্র, অসহায় ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকরা সাহায্য পাওয়ার আশায় এখানে এসে ভিড় করে থাকেন।
অসহায় মানুষদের আহারের কথা চিন্তা করে রবিরবাজারের কয়েকজন উদ্দমী তরুণের গড়ে তোলা সামাজিক সংগঠন বন্ধু মহলের সদস্যরা নিজেদের অর্থায়নে হরেক রকমের উন্নতমানের খাবার তৈরি করে ভোজন করানো হয় এসব অসহায় লোকদের।
প্রায় দেড় শতাধিক ভিক্ষুককে নিয়ে প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার উত্তর রবিরবাজারস্থ স্থানীয় একটি মার্কেটের ছাদে সুন্দর ও পরিপাটি প্যান্ডেল করে যথাযোগ্য সম্মানে সহিত ভোজন কার্যক্রম পরিচালনা করেন বন্ধু মহলের সদস্যরা। তাদের এই কার্যক্রম স্থানীয়ভাবে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে এলাকার সচেতন মহলে।
সরেজমিন ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুর ২ ঘটিকায় ভোজন কার্যক্রমে গিয়ে দেখা যায়, ভোজনে অংশগ্রহণ করা প্রায় দেড় শতাধিক অসহায় এসব মানুষের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু, বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত, মানসিক প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যক্তা ও বৃদ্ধা। অনেক বৃত্তশালীদের বাড়িতে তারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে পেটভরে খেতে পারেন না। কিন্তু বন্ধ মহলের এই আয়োজনে তারা গরুর মাংস, মুরগির ডাল, সালাদ ও সাদা পোলাও পেটভরে ভোজন করেছেন।
ভোজনে অংশ নেয়া অসহায় ইয়াকুব মিয়া, কাছিম আলী, খলিল মিয়া নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমরা অনেক বাড়িতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে আমাদের গরিব বলে অবেহলা করা হয়। জিনিসপত্রের দাম থাকায় পেটভরে দুবেলা ঠিকমতো খেতে পারি না। অভাবের তারণায় গরুর মাংস ক্রয় করতে পারি না। অনেকদিন পর গরুর মাংস দিয়ে পেটভরে ভাত খেলাম।
ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের উদ্যোক্তা বন্ধু মহলের উপদেষ্টা সামসুল আরেফিন কামাল, জাহিদুল আরেফিন সুমেল, লিটন মিয়া, আব্দুর রহিম প্রমুখ জানান, ‘‘একতায় এক হই কাজ করে হই জয়ী সেবায় করি পূন্য লাভ, আমরা নির্ভয়ী” এই স্লোগানকে লালন করে গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে আমরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকি। সংগঠনের সকল সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এসব খাবার তৈরি করে আমরা নিজেরাই সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে বিশেষ মেহমান হিসেবে ভোজন করাই। কারণ এসব অসহায় মানুষ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার হন। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে তারা ভালো ধরনের খাবার ক্রয় করার সামর্থ্য রাখে না। একারণেই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের এলাকায় এ কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সমাজের বিত্তশালীরা দানশীল কার্যক্রম ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে আগ্রহী হবেন।##
Leave a Reply