আজিজুল ইসলাম :: প্রতিবেশ সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওরের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে গুরুত্ব দিতে হবে মৎস্য অভয়াশ্রম। পাশাপাশি অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়াতে হবে। হাওরের বর্তমান অবস্থান যে পর্যায়ে আছে, সে পর্যায়ে রেখে এর সংকটাপন্ন পরি্েবশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। হাওরের সীমানা নির্ধারণ ও দখল রোধকল্পে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।
হাকালুকি হাওরে প্রতিবেশ প্রকল্প বাস্তবায়নে হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও হাওরের সুফলভোগীদের নিয়ে সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় এই মতামত তুলে ধরেন অংশগ্রহনকারীগন।
সভায় অংশগ্রহণকারীগণ উদ্বেগ প্রকাশ করেন, উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে হাওর দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ভরাট হওয়া বিল রূপান্তরিত হচ্ছে কৃষি জমিতে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু মানুষ ভুয়া জাল দলিল সৃস্টি করে হাওরের জমি কেনাবেচা করছে। জুড়ী নদীর তীর ধরে হাওরের ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত ভেতরে ঘরবাড়ি নির্মিত হয়েছে। অথচ একটা সময় ঘরবাড়ি নির্মিত স্থানে যেতে মানুষ ভয় পেত। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আগে হাওরের সীমানা নির্ধারণ করা জরুরি। বেদখল রোধকল্পে উদ্যোগ নেয়া প্রধান কাজ।
২০০৮ সালে হাকালুকি হাওরের ছোটবড় ২৩৯ বিলের মধ্যে ১৮টি বিল পর্য়ায়ক্রমে মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রাজস্ব আয়ের অযুহাতে প্রথমে ৬টি এবং পরবর্তিতে ৪টি বিলকে অভয়াশ্রম থেকে রাজ¯¦ খাতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে ৮টি বিলে সাইনবোর্ড সর্বস্ব অভয়াশ্রম আছে। কিন্তু সেই অভয়াশ্রমের মাছ লুটেপুটে খাচ্ছে সংঘবদ্ধ ও সরকারি দলের নামধারী লুটেরা। মাছ লুটের কিংবা বিল সেচে মাছ শিকারের খবর প্রশাসনকে অবহিত করা হয় কিন্তু প্রশাসন মাঠে রওয়ানা হওয়ার আগেই লুটেরাদের কাছে খবর পৌছে যায়। ফলে প্রশাসনের পরিচালিত সকল অভিযান ব্যর্থ হয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে অংশগ্রহণকারীরা জানান, হাকালুকি হাওরে বিগত ৫ বছরে কোন উন্নয় কর্মকান্ড পরিচালিত হয়নি কেবল ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ছাড়া। হাওর তীরের বাসিন্দা বন ও পরিবেশমন্ত্রী থাকলেও হাওরের কোন উন্নয়ন হয়নি। বরং অভয়াশ্রমগুলোকে কিভাবে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত করা যায়?- সে অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।
হাকালুকি হাওর তীরের ভাটেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম ও ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, যেসকল বিলগুলো ভরাট হয়ে গেছে, সেগুলোকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বা মৎস্য বিভাগের অধীনে উন্নয়ন বরাদ্ধ দিয়ে খনন করে মৎস্য অভয়াশ্রম করা হলে হাওরে শুধু মাছের উৎপাদনই বাড়বে না, সে আসবে আসবে পাখি। জলজ উদ্ভিদ জন্মাবে। এককথায় ইকো সিষ্টেমের মাধ্যমে হাওরের পরিবেশ আবার ফিরে আসবে। নয়তো হাকালুকি হাওর বিল ভরাট হয়ে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে ধুধু মরুভুমিতে পরিণত হবে।
হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে এমফিল করা অধ্যাপক ফরহাদ আহমদ বলেন, হাকালুকির পরিবেশকে ফিরিয়ে আনতে হলে অভয়াশ্রমের সংখ্যা বাড়াতে। পাশাপশি ক্ষতি কাজ থেকে বিরত রাখতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মৎস্যজীবিদের প্রকৃত তালিকা নিরূপন করে মা মাছের প্রজননকাল ও পোনা মাছের সময়কালে বিকল্প জীবিকায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষতিকর কাজ বন্ধে নিতে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ।
প্রতিবেশ প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর মাযহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতিবেশ প্রকল্প হাওর তীরের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে তার অতীত ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে কাজ করবে।
কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু মাসুদ ও মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: শাহনেওয়াজ সিরাজী জানান, হাকালুকি হাওরের ৮টি অভয়াশ্রম ব্যবস্থানার জন্য সরকার থেকে উন্নয়ন বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। হাওরের ক্ষতিক্র কার্যক্রম রোধে তাদের চেষ্টা থাকবে।
প্রতিবেশ প্রকল্পের পলিসি লিড আযহারুল মজুমদার এবং মৎস্য বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিটেন্ট ডিরেক্টর ড. জানান, হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে হাওর তীরের মানুষকে উদ্যোগী হতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে হাওরের উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হাকালুকি হাওর প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন অবস্থা কাটিয়ে উঠবে।##
Leave a Reply