কমলগঞ্জে জরাজীর্ণ ঘর সংস্কারে বাধা, মারধর কমলগঞ্জে জরাজীর্ণ ঘর সংস্কারে বাধা, মারধর – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

কমলগঞ্জে জরাজীর্ণ ঘর সংস্কারে বাধা, মারধর

  • রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলীয়া গ্রামে দিনমজুর তাজুল ইসলাম ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে ভেঙ্গে যাওয়া জরাজীর্ণ ঘর সংস্কার কাজে প্রভাবশালী ব্যক্তির বাধা ও মারধরের অভিযোগ।

বৃষ্টি ও ঝড় তুফানের সময় এমন ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাসকারী দিনমজুর তাজুল ইসলাম নিজেও জানেন না কখন ধসে পড়তে পারে পুরাতন জরাজীর্ণ এই ঘরটি। মানুষ কতটুকু অসহায় হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন ঘরে বসবাস করে তা দেখলে যে কারও অন্তর আঁতকে উঠবে।

জানা যায়, আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলীয়া গ্রামে মৌরসী সুত্রে প্রাপ্ত পৈত্রিক ভিটাতে পুরাতন বসত ঘর সংস্কার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের বাঁধা ও হামলায় সামিনা বেগম (২১) নামের এক যুবতী আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার (২২ জুন) সকাল সাড়ে ৭ টায় চিৎলীয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাজুল ইসলাম।

থানায় অভিযোগ সুত্রে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলীয়া গ্রামের মৃত নজব উল্যার ছেলে তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়ার সাথে একই গ্রামের মকসন মিয়ার ছেলে শাহীন মিয়া (সম্পর্কে চাচাতো ভাই) বিবাদ সৃষ্টি আছে। তাদের মৌরসী সুত্রে প্রাপ্ত ভূমিতে পাশাপাশিভাবে উভয় পরিবার অর্থে বলীয়ান শাহীন মিয়া তার অংশে পাকা ঘর ও তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়া তাদের ১২ শতক জায়গায় ছন, বাঁশ ও মাটির দেয়ালের ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন। বিগত ২০২০ সালে অর্থহীন দিনমজুর তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়ার বসতবাড়ী দখলে অর্থে বিত্তে বলীয়ান শাহীন মিয়ার কুদৃষ্টি পড়ে। ফলে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে মৌলভীবাজার আদালতে ৪২/২১ স্বত্ব মামলা দায়ের করেন। যা আদালতে এখনো বিচারাধীন আছে।
সম্প্রতি তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়ার বসবাস করা কাঁচা ঘরটি ধবসে পড়ার উপক্রম হয় এবং বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির সময় ঘরে চাল দিয়ে বৃষ্টি পড়ে। ভাঙ্গা ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। তাদের মানবেতর জীবন যাপনের অবস্থা দেখে স্থানীয় বিত্তশালীরা আর্থিক সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেন। বিত্তশালীদের আর্থিক সহযোগিতায় বসতঘরটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।

তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের বাপ দাদার জায়গায় ঘর নির্মান করে বসবাস করে আসছি। আমাদের ছন বাঁশের ঘরটি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতরে পানি পড়ে।

তাই বাধ্য হয়ে পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে এক রকম খোলা জায়াগায় বসবাস করছি। যে কেউ যদি আমাদের এমন অবস্থা দেখে তাহলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না। আমাদের এই দুরাবস্থা দেখে স্থানীয় বিত্তশালীরা আর্থিক সহযোগিতায় হাত ভাড়িয়ে দেন। বিত্তশালীদের আর্থিক সহযোগিতায় বসতঘরটি সংস্কারের উদ্যোগ নেই।

তাজুল ইসলাম বলেন, গত ২২ জুন শনিবার তার বসতঘরটি সংস্কার করতে গেলে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টায় শাহীন মিয়া, ছালেক মিয়া ও রুহুল মিয়া গংরা অবৈধভাবে বাঁধা প্রদান করেন। এসময় ঘর তৈরীতে কেন বাঁধা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে শাহিন মিয়া ও তার স্ত্রী মিলে তাজুল ইসলামের মেয়ে সামিনা বেগম (২১) এর হাত মোছড়ে মেড়ে রক্তাক্ত জখম করে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বাঁধা প্রদানের কারনে এখানে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশংকায় সংস্কার কাজ বন্ধ করে কমলগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। তিনি আরও বলেন, প্রতিপক্ষ শাহিন মিয়া গংরা জোরপূর্বক আমাদের জমি দখল করতে চায়। আমরা প্রশাসনসহ সকলের সহযোগীতা চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য শামীম আহমেদ জানান, ‘আমার জানা মতে ফাজিল ও তাজুল মৌরশী ও পৈত্রিক সুত্রে এই জায়গার মালিক। তারা দীর্ঘ ৫০-৬০ বছর ধরে বসতবাড়ী তৈরী করে ভোগ দখল করে আসছে। নিজের পুরাতন বসতঘর সংস্কার করতে গেলে বাঁধা প্রদান করা মোটেও কাম্য নয়। আমরা চাই প্রশাসন সুষ্ট বিচার করে তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেখ।’

ঘর সংস্কারে বাঁধা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিন মিয়া বলেন, এটা আমাদের দলিলের জায়গা। আমরা কেন দখল করতে যাব? এখানে তাদের কোন জমি নেই। আমরা তাদের থাকতে দিয়েছিলাম। এখন আমাদের জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাই বাঁধা দিয়েছি। এখানে মারামারির কোন ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া এই ভূমি নিয়ে মৌলভীবাজার আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিষয়টি আইনিভাবে সমাধান হবে।’

এ বিষয়ে আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান নিয়াজ মুর্শেদ রাজুর সাথে য়োগাযোগ করার চেষ্টা করলে উনাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে সরেজমিন তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন বলেন, দিনমজুর তাজুল ইসলাম বসতঘরের জন্য লিখিত আবেদন করলে তদন্তক্রমে সরকারের পক্ষ থেকে পাকাঘর প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews