কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: গত তিন দিনের টানা বর্ষন ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর চারটি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় উপজেলার প্রায় ১৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উজানে ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় গত সোমবার রাত থেকেই ধলাই, লাঘাটা, ক্ষীরণী নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। এরফলে পাহাড়ি ছড়ার পানি উপচে ধলাই নদীতে পড়তে শুরু করে। সোমবার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিকাল থেকে ধলাই নদীতে বাঁধ ভাঙ্গন শুরু হয়। ধলাই নদীর চারটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার আদমপুর, ইসলামপুর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ সদর, আলীনগর, শমশেরনগর, পতনঊষার, মুন্সিবাজার, রহিমপুর এবং পৌরসভার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পরে পুরো উপজেলার সব কটি ইউনিয়নে।
উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল। সেগুলোতে এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। মাঠে ঘাটে ক্ষেতে পানি উঠায় চরম গো খাদ্য সংকটে পড়ছেন তারা।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ইসলামপুরে ২০টি, আদমপুরে ২০টি, শমশেরনগরে ২০টি গ্রাম, মুন্সিবাজারে ২৬টি গ্রাম, পতনঊষারে ১৬টি, আলীনগরে ১৬টি, রহিমপুর, সদর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার আরো প্রায় ২৫টি গ্রাম বন্যাপ্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কৃষকদের রোপিত বিস্তীর্ণ আমন ক্ষেত ও শাকসবজি নিমজ্জিত হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটও রয়েছে। নিম্নাঞ্চলের শমশেরনগর, মুন্সিবাজার ও পতনঊষার ইউনিয়নে বন্যার অবনতি হচ্ছে। ফলে পুকুর ও মৎস্য খামার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাছ চাষীরা। বুধবার উপজেলার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি একেবারে নগন্য ছিল।পানিবন্দি থাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, কমলগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে ৬০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও শুকনো খাবার বিতরণের জন্য নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রয়োজনীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যার সার্বক্ষনিক নজরদারি রয়েছে। বরাদ্ধ এসেছে, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুকনো খাবার বিতরণও শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩দিনের টানা বর্ষনে ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গত মঙ্গলবার সকালের দিকে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন এর কুরমাঘাট চেক পোস্ট এলাকায় দুটি জায়গায় ভাঙন দেয়, এরপর দুপুরে শামসুর দোকান ও মকাবিল এলাকায় আরো দুটি ভাঙন এবং সন্ধ্যার পর আদমপুর ইউনিয়নের কাটাবিল ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধটি মাধবপুর ইউনিয়ন এলাকা দিয়ে ভাঙ্গন দিয়ে মুহুর্তেই প্রথমে ইসলামপুর, আদমপুর ও মাধবপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ ইউনিয়নগুলোর কিছু কিছু স্থানে মঙ্গলবার বন্যার পানি কিছুটা নেমে গেলেও শমশেরনগর, রহিমপুর ও পতনঊষার ইউনিয়নের নির্মাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।#
Leave a Reply