এইবেলা, কুলাউড়া ::: বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে লড়াই করছে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল। বাল্যবিয়ে হচ্ছে এমন খবর পেলেই ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে খবর যাচ্ছে, সেই বিয়ে বন্ধও হচ্ছে। কিন্তু একি কান্ড মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের? এখানকার ৫
নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান চৌধুরী হেলাল এক কিশোরীকে (১৫) পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন। বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সমগ্র উপজেলা জুড়ে জানাজানি হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, একজন ইউপি সদস্য যেখানে বাল্যবিয়ে ঠেকাবেন, সেখানে ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান চৌধুরী হেলাল নিজে অপরাধমূলক কাজ করেছেন। সদ্য বিয়ে করা ইমা বেগম হাজীপুর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের রোকন উদ্দিন ভূঁইয়ার মেয়ে। ওই মেয়ে স্থানীয় কানিহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে কিছুদিন পড়ালেখা করে। পরে আর স্কুলে যায়নি। ওই মেয়েকে নানাভাবে ফুঁসলিয়ে তার সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান চৌধুরী হেলাল। এরপর ওই ইউপি সদস্য তাকে নিয়ে পালিয়ে যান। বিষয়টি চাউর হলে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। পরে পরিস্থিতি বুঝে ইউপি সদস্য ওই মেয়ের বয়স বাড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে গোপনে বিয়ে করেন। প্রায় ২০-২২ বছর আগে মনিরুজ্জামান চৌধুরী হেলাল প্রথম বিয়ে করেন। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, দ্বিতীয় মেয়ে এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। বড় ছেলে মৌলভীবাজারে একটি মাদ্রাসায় ও ছোট ছেলে স্থানীয় পাইকপাড়া হাফিজি মাদ্রাসায় পড়ে।
স্থানীয় লোকজন জানান, একজন জনপ্রতিনিধি তাঁর কর্তব্য পালন না করে বাল্যবিয়ে করে অপরাধ করেছেন। তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত। ওই মেয়ের আত্মীয় ওয়াহিদ আলী চান মিয়া বলেন, মেয়েটি আমাকে সম্পর্কে নাতিন হয়। প্রায় ৩-৪ মাস ধরে আমার গ্রামের বাড়িতে রোকন উদ্দিন ভুঁইয়া তার দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছে। ইউপি সদস্য হেলাল আমার নাতিনকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে গত বৃহস্পতিবারকোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করে। বর্তমানে মেয়েটিমৌলভীবাজারে আছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাল্যবিয়ে করা ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান চৌধুরী হেলালের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুল বলেন, বাল্যবিয়ে করা দন্ডনীয় অপরাধ। মেয়েটির বয়স কম হতে পারে। তবে ইউপি সদস্য ১৮ বছর বয়স উল্লেখ করা একটি জন্মনিবন্ধন দেখিয়েছেন আমাকে। কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে করার পর দুইপক্ষের লোকজন বিষয়টি সমাধান করেছেন বলে জেনেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি শুনে খুবই অবাক হয়েছি। স্কুলে ভর্তির সময় জমা দেয়া বয়স প্রমাণের কাগজাদি ও বর্তমান জন্মনিবন্ধনটি সংগ্রহ করবো। পরবর্তীতে তদন্তক্রমে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#
Leave a Reply