খাসিয়াদের বাঁধার কারণে ১৪ বছরেও চা বাগানের পরিপক্ক গাছ মার্কিং সম্ভব হয়নি-
এইবেলা, কুলাউড়া :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার উপজেলার ঝিমাই চা বাগানের পরিপক্ক গাছ মার্কিংয়ের জন্য বনবিভাগ ও চা বাগান উদ্যোগ গ্রহন করলেও কয়েক দফা খাসিয়াদের অযাচিত বাধায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। খাসিয়ারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্তি করছে বলে অভিযোগ বাগান কর্তৃপক্ষের। ২০১০ সালে চা বাগানের পরিপক্ষ গাছ কর্তনের জন্য অনুমতি পেলেও ১৪ বছরে খাসিয়াদের বাঁধার কারণে বাগান কর্তৃপক্ষ গাছগুলো মার্কিং করতে পারেনি।
জানা যায়, কেদারপুর টি কোম্পানী লিমিটেডের মালিকানাধীন কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই চা বাগান সরকারের কাছ থেকে ৬শ ৬১ একর পাহাড়ী জায়গা লিজ নিয়ে চা চাষ শুরু করে। বাগান কর্তৃপক্ষ ৪০-৪৫ বছর পূর্বে ফিল খাসিয়া নামক এক খাসিয়াকে বাগানের টিলাতে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেয়। ফিল খাসিয়া বাগানের জায়গায় পান চাষ শুরু করে তাঁর আত্মীয় স্বজন এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এনে বসতি স্থাপন করেন। বর্তমানে পানপুঞ্জিতে ৪৩ টি খাসিয়া পরিবার বসবাস করে। ধীরে ধীরে বাগানের ৩ শ ৭১ একর জায়গা খাসিয়াদের জবরদখল করে। বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ৬শ ৬১ একর জায়গার খাজনা ও চা কর ইত্যাদি পরিশোধ করলেও মূলত চা চাষাবাদ হচ্ছে ২শ ৯০ একর জায়গার মধ্যে।
কিন্তু বাগানের অভ্যন্তরে বসবাসরত খাসিয়াদের নানা আপত্তির ফলে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। উচচ আদালতে রায়ে খাসিয়ারা হেরে গিয়েও থেমে যায়নি। তারা নতুন করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ভূল তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্তি করছে বলে চা বাগান কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করছেন।
বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর গত ২৯ আগষ্ট কুলাউড়ার রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদকে জরুরী ভিত্তিতে ঝিমাই চা বাগানের কর্তনযোগ্য গাছের বাজারমূল্য নির্ধারণপূর্বক পৃথক পৃথক মার্কিং তালিকা ও প্রজাতী ভিত্তিক বাজারমূল্য নির্ধারণের জন্য লিখিতভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্দেশনা প্রদানের ১ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও মার্কিং শুরু করেনি বনবিভাগ।
ঝিমাই পুঞ্জির হেডম্যান রানা সুরং পরিবেশ ও বন উপদেষ্টাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বরাবরে বাগানের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক পানপুঞ্জি এলাকার গাছ কাটার মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। খাসিয়াদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার গাছ কাটা বন্ধ রাখার জন্য ঝিমাই চা বাগানের ম্যানেজারকে নির্দেশ দেন।
সরজেমিনে ঝিমাই চা বাগানে গেলে গাছ কাটার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। যেখানে গাছের মার্কিং কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি বাগান কর্তৃপক্ষ। বনবিভাগ তাদের কোন প্রকার সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসী জানান, খাসিয়ারা ঝিমাই চা বাগানের অভ্যন্তরে বসবাস করলেও তাদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। মাত্র ৪৪ টি পরিবার ৩শ ৭১ একর বাগানের জায়গা জোরপূর্বক জবর দখল করে পাকা দালান বাড়িঘর তৈরি করে বসবাস করছে। এর বাইরেও বনবিভাগের আরও ৪ হাজার একর বনভূমি জবরদখল করে পান চাষ করছে রানা সুরংয়ের নেতৃত্বাধীন খাসিয়ারা। বনবিভাগ ও চা বাগানের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জায়গা জবরদখল করে ভোগ দখল করলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ঝিমাই চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান জানান, খাসিয়ারা ভূল তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্তি করছে। বাগানের অভ্যন্তরে পরিপক্ক গাছগুলি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ গাছগুলি তাদের বাধায় মার্কিং করানো যাচ্ছেনা। বাগান কর্র্তৃপক্ষ বর্তমানে খাসিয়াদের উস্কানি এবং হুমকিতে আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছেন বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে ঝিমাই পুঞ্জির হেডম্যান রানা সুরং বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষ গাছ মার্কিং করতে পারলে পরে গাছ কাটবে। এবং আমাদেরকে উচ্ছেদ করে ফেলবে। আমরা আশংকায় আছি।
কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ জানান, সিলেটের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা বাগানের পরিপক্ক গাছ মার্কিং এর বলছেন কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ মার্কিং এর এখনো উদ্যোগ নেয়নি। তারা মার্কিং এর কাজ শুরু করলে আমার বনবিভাগের স্টাফ সাথে থাকবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে রেঞ্জার বলেন, জবরদখলকৃত খাসিয়াদের তালিকা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করেছি। এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে।
কুলাউড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহিরুল হোসেন জানান, গাছ কাটার বিষয়ে খাসিয়ারা যে অভিযোগ করেছে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাগানে কোন ধরনের গাছ কাটা হচ্ছেনা। এরপরেও চা বাগানের বক্তব্য এবং খাসিয়াদের বক্তব্য আমরা শুনব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।##
Leave a Reply