এইবেলা, কুলাউড়া ::: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোছাদ্দিক আহমদ নোমান গত ৫ আগস্টের পর থেকে কার্যালয়ে অনুপস্থিত, গ্রেফতার ও জনরোষ এড়াতে এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যারকারণে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ। তাই তাকে অপসারণ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে এক মানববন্ধন করেছেন ইউনিয়নের লোকজন।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে এগোরোটায় ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাইফুর রহমানের পরিচালনায় বক্তব্য দেন উপজেলা কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুকিত বুলবুল, বিশিষ্ট সমাজসেবক তাহির আলী আজমল, ক্রীড়া সংগঠক জায়েদ জামান খান তামি, ব্যবসায়ী শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী, শামীম আহমদ, সংগঠক আলতাফ হোসেন সুহেল, ইমরান আহমদ, জনতাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজুর রহমান বেলাল, সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ পাপ্পু, ব্যবসায়ী সুমন আহমদ, মাহতাব মিয়া, অদুদ মিয়া, সমাজসেবক সাহেদ আহমদ, কবির আহমদ, ফয়েজ খাঁন, ইন্তাজ মিয়া, ভুক্তভোগী সিতার মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, জবুর মিয়া, জয়নুল হক, জাকির হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে এক প্রতিবাদ মিছিল জনতাবাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং চেয়ারম্যান নোমানের অপসারণ চেয়ে ইউনিয়নের অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তির স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক বরাবরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোমানের অনিয়ম ও দুর্নীতির শেষ নেই। গত ৫ আগস্টের পর ক্ষমতার পট পরিবর্তন হওয়ায় পালিয়ে বেড়ালেও টিউবওয়েল ও ভাতার টাকার পাওনাদাররা তাকে হন্য হয়ে খুঁজছেন। গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে অন্যায়ভাবে দলীয় প্রভাবে ভোট গণনায় তার বন্ধু ও বর্তমান কানাডা প্রবাসী মোহাম্মদ আলী চৌধুরী তরিক প্রিসাইডিং অফিসার থাকার সুবাধে জালিয়াতি করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই টাকা উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন নোমান। এজন্য তিনি ইউনিয়নে তার নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে একটি সিন্ডিকেট চক্র গঠন করেন। ওই চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতা, গভীর নলকূপ বরাদ্দের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। কুলাউড়া পৌর শহরে ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন কার্যালয়টি মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ থেকে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিসবাহুর রহমান (বর্তমানে পলাতক) এর সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তিনি ওই কার্যালয়টি নিজ নামে লিজ নেন। বর্তমানে ওই ভবনের সামনে কয়েকটি ফলের দোকান ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্টের আগে স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে চেয়ারম্যান নোমানের প্রভাবে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। ওই সময়ে ইউনিয়নে বিভিন্ন বিচার সালিশের নামে টাকা আদায়, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, বিধবা ভাতা, হতদরিদ্রদের ১৫ টাকা মূল্যের কার্ড বিক্রি, ১% প্রকল্পে কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ, গভীর নলকূপ পেতে হলে টাকা আদায়সহ তার ভাই ও সহযোগিদের অত্যাচারে জনমনে এক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সেবার জন্য ইউনিয়নে গেলে চেয়ারম্যানের পরিবর্তে দায়িত্বরত অন্য ব্যক্তির স্বাক্ষরিত সনদ নাগরিকদের দেয়া হচ্ছে। এমনকি ইউনিয়নের মাসিক সভা, বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণে সভা, উপজেলা পরিষদের সভাসহ ইউনিয়নের সকল কার্যক্রমে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার পরও কিভাবে চেয়ারম্যান নোমান স্বীয় পদে বহাল থাকেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঘোর বিরোধী থাকায় তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। প্রশাসনের চোখের সামনে আঙ্গুল দেখিয়ে চেয়ারম্যান পদে থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন আর জনগণ প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই তাকে অপসারণ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে ইউনিয়নের কার্যক্রম ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণ।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ভুক্তভোগী নাজিরের চক গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি জাহাঙ্গীর মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাকে টিউবওয়েল দেবার কথা বলে চেয়ারম্যান নোমান ৩১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন। মিনারমহল গ্রামের রানা মিয়ার পিতা কুটি মিয়া বলেন, আমার প্রতিবেশী মতিন মিয়ার ছেলে সুলতানের মাধ্যমে আমার ছেলেকে টিউবওয়েল দেবার জন্য ৫০ হাজার টাকা নেন চেয়ারম্যান নোমান। বনগাঁও গ্রামের জবুর মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার ১২টি পরিবারের পানীর সমস্যার জন্য এলাকার একজন মহিলা আমাদের ১৫ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। সেই টাকা চেয়ারম্যান নোমান নিলেও কোন নলকূপ দেননি।
ভুক্তভোগী করের গ্রামের বাসিন্দা রিকশা চালক জয়নুল হক বলেন, রিকশা চালিয়ে কোনমতে চলে আমার সংসার। দুই বছর আগে আমার স্ত্রীকে গর্ভবতী ভাতার দিবে বলে চেয়ারম্যানের সহযোগি সুলতান আহমদ আমার কাছ থেকে ১৬০০ টাকা নেন কিন্তু আজও অবধি কোন ভাতা মিলেনি এমনকি টাকাও ফেরত পাইনি। দাসের মহলের বাসিন্দা সিএনজি চালক সিতার মিয়া বলেন, আমার বড়ভাই মারা গেলে ইউনিয়ন থেকে মৃত্যুসনদ আনতে গিয়ে আমাকে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। নাজিরের চক গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ মিয়ার ছেলে জাকির হোসাইন বলেন, আমার পিতার কাছ থেকে ইট নেয়া বাবদ ৪০ হাজার টাকা চেয়ারম্যান নোমানও আজ দেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, লিখিত অভিযোগ আমার কার্যালয়ে জমা দিলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া জনগণ যাতে সেবাবঞ্চিত না হয় সেটি নিশ্চিত করা হবে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। #
Leave a Reply