এইবেলা, কুলাউড়া :: পেশায় তিনি ছিলেন বাগান মালী। নাম আকবর আলী। অবসরে থাকলেও বনবিভাগের একটি সরকারি কোয়ার্টার এখনও তার দখলে। বনবিভাগের কর্মকর্তারা তার কাছ থেকে কোয়ার্টারটি দখল মুক্ত করতে পারছেন না। এনিয়ে বনবিভাগে তোলপাড় চলছে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মচারী বাগান মালী আকবর আলী চাকুরি থেকে ২০২২ সালে অবসর নিলেও গাজীপুরের একটি সরকারি কোয়ার্টার এখনও তার দখলে রয়েছে। কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ সম্প্রতি বিষয়টি সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। তবুও আকবর আলীর টনক নড়ছে না।
জানা যায়, উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের পাবই গ্রামের বাসিন্দা আকবর দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর গাজীপুর রেঞ্জে বাগান মালী পদে চাকুরি করেছেন। সর্বশেষ তিনি জুড়ী রেঞ্জে ছিলেন এবং সেখান থেকেই অবসরে যান। গাজীপুর রেঞ্জে চাকুরিকালীন সময় অবৈধ অর্থে অফিসের পাশেই জায়গা ক্রয় করে গড়ে তুলেন নিজস্ব একটি বাড়ি। কুলাউড়া প্রত্যেকটি করাত কল থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করতেন এই বাগান মালী আকবর আলী। বনবিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জে দীর্ঘদিন থাকায় তিনি দায়িত্ব পালনের চেয়ে টাকা কামানোর ধান্দায় বেশি ব্যস্ত থাকতেন। ফলে সেসময় আকবর আলী কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা।
জানা যায়, প্রায় ৩ বছর আগে আকবর চাকুরি থেকে অবসর নিলেও গাজীপুর রেঞ্জে একটি সরকারি কোয়ার্টার এখনও তার দখলে রেখেছেন। ওই কোয়ার্টারে বসবাসের উপযোগি দুটি রুম থাকলেও ক্ষমতার প্রভাবে সেখানে হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগল পালন করছেন তিনি। অথচ বর্তমানে ওই রেঞ্জের ২ জন সহযোগী রেঞ্জার সরকারি কোয়ার্টার থাকা সত্ত্বেও অন্যত্র ভাড়াটিয়া বাসায় থাকতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সরকারি কোয়ার্টার দুটি দিনের বেলা তালাবদ্ধ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, আকবরের ভাই বনপ্রহরী আহমদ আলী তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকার দলীয় একজন মন্ত্রীকে নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এবং এর প্রভাব খাঁটিয়ে তারই ভাই আকবর আলীকে দিয়ে কোয়ার্টার দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করাতেন। শেষতক বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বনপ্রহরী আহমদ আলী ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল গাজীপুর রেঞ্জ থেকে কমলগঞ্জে বদলি হন।
বনবিভাগ সুত্র জানায়, তৎকালীন সময় আহমদ আলী সরকার দলীয় এক মন্ত্রীর সাথে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বনবিভাগের বিভিন্ন বিটে বেপরোয়া হয়ে অবৈধ টাকা কামিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ভাই আকবর আলীকে দিয়ে বনবিভাগের সরকারি কোয়ার্টার দখলের মূলহোতা আহমদ আলী নিজেই। কেউ কেউ বলছেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর তারা দুজনই খোলস পাল্টানো শুরু করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন অভিযোগ আড়াল করতে তারা এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বনপ্রহরী আহমদ আলী বর্তমানে কমলগঞ্জের কামারছড়ায় বিট কর্মকতা হিসেবে রয়েছেন। এর আগে তিনি কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর বিটে কর্মরত ছিলেন। সেখানে বনবিভাগের গাছ ও বাঁশ অবাধে বিক্রির অভিযোগও রয়েছেন তার বিরুদ্ধে। মূলত এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে কুলাউড়ার গাজীপুর বিট থেকে কামারছড়ায় বদলি করা হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত বাগান মালি আকবর আলী জানান, কেউ তাকে কোয়ার্টার ছাড়ার কথা বলেননি। কোয়ার্টারটি পরিত্যক্ত আছে। তিনি তার কেনা বাড়িতে বাস করছেন।
কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ জানান, আমি এখানে যোগদানের ৫ মাস হয়েছে। আমি জেনেছি এখানকার একটি সরকারি কোয়ার্টার আকবর আলীর দখলে রয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।##
Leave a Reply