এইবেলা, কুলাউড়া ::
এশিয়ার বৃহত্তম হাওর ও অতিথি পাখিদের সবচেয়ে বড় সমাগমস্থল হাকালুকিতে বিষটোপে ও ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি নিধন করা হচ্ছে। মুলত হাওরে কোন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত না হওয়ায় অরক্ষিত এই হাওরে শুধু বিষটোপে অতিথি পাখি নিধন ছাড়াও মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে অবাধে চলছে মাছ লুট। পরিবেশ মন্ত্রীর এলাকার এই সর্ববৃহৎ হাওরটি অন্তর্ভূক্ত হয়নি হাওর উন্নয়ন প্রকল্পেও।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, হাকালুকি হাওরে কিছু অসাধু শিকারীদের কারণে হাওরের দিন দিন অতিথি পাখির আগমন কমছে। গত ১৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ভাটেরা হাকালুকি হাওরের শিংগাইরজুর বিলে রাত্রে বিষটোপ দিয়ে অতিথী পাখি মারার জন্য বিষ দিয়েছিল শিকারী চক্র। সেই বিষে আক্রান্ত হয়ে ৩নং ভাটেরা ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামের আশিক আহমদ নামের একজন হাঁস খামারীর প্রায় ২শ হাঁস মারা গেছে।
হাঁস খামারি আশিক আহমদ জানান, হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক সংঘবদ্ধচক্র বিষটোপ ও ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি শিকার করে থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই শিকারিরা এ ধরনের অপকর্মটি করে থাকে। এই চক্রের কারণে হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় গত ৩-৪ মাসে অতিথি পাখি ছাড়াও অন্ত:ত দেড় থেকে ২ হাজার হাঁস মারা গেছে বিষটোপে। প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় পাখি শিকারি চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
হাঁস খামারিরা জানান, কারা বিষটোপে পাখি নিধনের সাথে জড়িত প্রশাসন খোঁজ নিলেই পেয়ে যাবে। এদেরকে তালিকা করে যদি আইনের আওতায় আনা যায়, তাহলে হাওরে অতিথি পাখি আসবে। আর অতিথি পাখি আসলে পাখির বিষ্ঠায় মাছের খাবার হবে। এতে মাছের উৎপাদন বাড়বে। হাওরের বিলগুলোয় মাছ বাড়লে সরকারের যেমন রাজস্ব বাড়বে সেই সাথে হাওরের সাথে জীবন জীবিকা নির্বাহকারী জেলেরাও উপকৃত হবে।
পাখি শুমারিতে প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে এবার হাকালুকিতে দেখা মিলেছে ৪৬ প্রজাতির মাত্র ২৪ হাজার ৫৫১ পরিযাযী ও দেশীয় প্রজাতির পাখি। অথচ এই হাওরে অতিথি পাখি শুমারিতে ২০১২-১৩ সালে ১ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত পাখি গণনা করা হয়েছে। মাত্র ৮ থেকে ১০ বছরের ব্যবধানে সেই সংখ্যা এক লাখের উপরে কমে গেছে। যা হাওরের ইকো সিস্টেমের জন্য উদ্বেগজনক।
পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, দিন দিন হাকালুকি হাওরে অতিথি পাখির সংখ্যা ক ছে। বিপন্ন প্রজাতির কোন পাখি দেখাও পাওয়া যায়নি। অথচ একটা সময় ছিলো যখন লাখ পাখির সমাগম হতো। পাওয়া যেতো বিপন্ন প্রজাতির পাখির দেখা। এটা প্রতিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় হাওরের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের কারণ। বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে হাওরে মাছের পাখির অভয়াশ্রম গড়ে না তুললে একসময় অতিথি পাখির সমাগত শুন্যের কোটায় নেমে আসবে। তাতে মাছের উৎপাদন কমবে। যখন ইকো সিস্টেমে ব্যত্যয় ঘটবে তখন তা মানুষের জীবন জীবিকায় প্রভাব ফেলবে। তাই আমাদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।#
Leave a Reply