শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে প্রায় ৫ মাস। আটকে গেছে বিদ্যালয়গুলোর মাসিক টেস্ট ও সেমিস্টার পরীক্ষা। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা গতিশীল রাখতে বিশেষ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করছে শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের জালালিয়া রোডে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল।
শনিবার (৮ আগস্ট) সকাল ১১টা থেকে অভিভাবকের পাহারায় স্কুল ড্রেস পড়ে ঘরে বসে সততা পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই পরীক্ষা দেওয়া শুরু হয়েছে। পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের হাতে/বাড়িতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল ড্রেস পড়ে বাসা/বাড়ি/ঘরে বসেই শিক্ষার্থীরা স্কুল কর্তৃক নির্ধারিত প্রশ্ন ও রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, বাচ্চারা যেন বই দেখে না লিখে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে, এ জন্য তাঁরা নিজেরাই পাহারা দিয়েছেন। পরীক্ষা শেষে অভিভাবকরা নিজ দায়িত্বে উত্তরপত্র স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজ প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে এবং কাল ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বিজ্ঞান পরীক্ষা শুরু হবে। নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী নির্ধারিত বিষয়ের পরীক্ষা শুরু এবং শেষ হবে।
পৌর শহরের কালিঘাট রোডের অভিভাবক আব্দুল কাইয়ুম কালু গাজি বলেন-ঘরে বসে পরীক্ষা দেয়ার এমন উদ্যোগ খুব প্রশংসনীয়। তাঁর ছেলে ও ভাতিজি আড়াই ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই পরীক্ষা শেষ করেছে। দীর্ঘদিন পরে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পেরে তারা খুব খুশি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্কুলের অভিভাবক শহরের আফতাব উদ্দিন রোডের বাসিন্দা মো. নোয়াব আলী জানান-এটা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ। দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে দূরে রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তারা মুখস্থ করা পড়াটাও ভুলে যাবে। ফলে পরীক্ষাটা যেভাবেই নেওয়া হোক, ওরা একটু পড়াশোনার ভেতরে ঢুকবে। অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকেরাও যদি এই উদ্যোগ নেন, তাহলে ভালো হয়।
এই উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের প্রিন্সিপাল, সাংবাদিক ও কলামিস্ট এহসান বিন মুজাহির জানান-গত ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকাবস্থায় আমাদের শিক্ষকরা যথাসাধ্য অনলাইনে ক্লাস করানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও সকল শিক্ষার্থীর বাড়িতে ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় অনলাইন ক্লাসে খুবই সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এভাবে সীমিত পরিসরে অনলাইনে ক্লাস নেয়া সম্ভব হলেও সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা নিতে না পারায় অনলাইনের ক্লাস কিংবা বাড়িতে ব্যক্তিগত পড়াশুনায়ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা। মাসের পর মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। নিজেরা ঘরে বসে থেকে হয়তো পড়াশোনার অতটা তাগিদ বোধ করছে না। এই সময়ে ওদের মডেল টেস্ট হয়ে যাওয়ার কথা। এই পরীক্ষা উপলক্ষে পেছনের পড়াগুলো ওরা একটু ঝালিয়ে নেবে। এর মাধ্যমে ওদের সততার পরীক্ষাটাও হয়ে যাবে। এই মুহুর্তে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক ও সচেতন ব্যক্তিবর্গ উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন। এ অবস্থায় পরীক্ষার ফি মওকুফ করে এবং সরকারের নির্দেশনা বিবেচনায় নিয়ে ঘরে বসেই সততা পরীক্ষার আয়োজন করেছি আমরা। প্লে থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, এতে অভিভাবকরাও খুশি হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ঘরে বসে সততা পরীক্ষা ১ শনিবার ৮ আগস্ট থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে এবং শেষ হবে ১৬ আগস্ট। পর্যায়ক্রমে আর ২টি পরীক্ষা ঘরে বসেই নেওয়া হবে।
এইবেলা/জেএইচজে
Leave a Reply