বাবা দিবসের স্মৃতিচারণ বাবা দিবসের স্মৃতিচারণ – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : কুলাউড়ায় চেয়ারম্যান পদে আ’লীগের ৩ শীর্ষনেতা বোরো ধানের সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন বড়লেখায় যুব ফোরামের অর্ন্তভূক্তিকরণ সভা রাজারহাটে শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে স্থানীয় স্টেক হোল্ডারদের সাথে সংলাপ ওসমানীনগরে বিদ্যুৎপৃষ্টে স্যানেটারী মিস্ত্রির মৃত্যু বড়লেখায় গণশুনানি : গ্রাহক হয়রানীর দায়ে পল্লীবিদ্যুত আজিমগঞ্জ কেন্দ্রের ইনচার্জকে বদলির নির্দেশ কমলগঞ্জে শমশেরনগরে রেললাইনের পাশে অবৈধ পশুর হাট কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক রফিকুর রহমানের সমর্থনে মতবিনিময় কুলাউড়ায় সাংবাদিকদের সাথে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নেহার বেগমের মতবিনিময় বড়লেখায় প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির ঈদ পুর্নমিলনী

বাবা দিবসের স্মৃতিচারণ

  • সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

আব্দুল বাছিত বাচ্চু ::

সম্ভবত ১৯৭৮ সাল। আমি তখন হরিচক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। একদিন সাত সকালে আব্বা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন । আম্মা জানালেন শান্তকুল এলাকায় একটি সালিশে গিয়েছেন । এভাবে প্রায়ই ভোরে বেরিয়ে মানুষের সালিশ বিচার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সেরে গভীর রাতে বাড়ি ফিরতেন আব্বা । সেদিনও এমনটি হবে ভেবে আমি স্কুল কামাই করি। বিধিবাম। দুপুর হওয়ার আগেই তিনি বাড়িতে হাজির। আরো কয়েকজনের সাথে আমি তখন বাড়ির সামনে মনু নদের বিশাল চরে ডাংগুলি খেলছি। বাড়ি ফিরেই আব্বা আমাকে তলব করেন। আমি ভয়ে কাপছি। তিনি আমাকে দেখেই অগ্নি মুর্তি ধারণ করলেন। স্কুলে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আমি নতশির নির্বাক। কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বইপত্র নিয়ে বের হতে নির্দেশ দেন । আমি ভয়ে হাফ শার্ট গায়ে জড়িয়ে বই নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। তিনি হাল চাষের বড় পাজইন ( সিঙ্গল) দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে আমাকে স্কুলে নিয়ে যান। ভর দুপুর। অনেক আগেই দুই পিরিয়ড ক্লাস শেষ। আমি সেটা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি। কিন্তু আব্বা অনড়। কিছুই বুঝতে নারাজ। স্কুলে যেতেই হবে। পরে আমি লজ্জায় একা যাওয়ার বায়না ধরি। তিনি রাজি হলেন। কিন্তু একটি বাড়ির পাশে দাড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করলেন। আমাদের পড়াশোনার বিষয়ে এমন মনোভাব পোষণ করতেন আমার আব্বা আব্দুল লতিফ (ললই বাবু) । অবশ্য অন্যান্য বিষয়ে তিনি ছিলেন অনেক ব্যতিক্রম।

আমাদের ভালো খাওয়া পরার বিষয়েতো তিনি ছিলেন আপোষহীন ।আমাদের পরিবারে ৮ ভাইবোন, মেহমান মুসাফির, চাকর বাকর সহ প্রতিদিন ১৮-২০ জন লোকের ৩ বেলার খাবার আয়োজন করতে হতো। ফলে প্রতিদিন অনেক মাছ শুটকির প্রয়োজন হতো। এলাকায় কোনো রিকশা বা যান চলাচল না থাকায় এবং হাটবার ছাড়া এলাকায় মাছ শুটকি না পাওয়ার কারণে আব্বা অনেকদিন শমসেরনগর রবিরবাজার টেংরাবাজারে পায়ে হেটে যেতেন, আমাদের মুখে ভালো আহার তুলে দিতে । আমাদের পছন্দের কাপড় কিনে দিতে কুলাউড়া পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। একটু অসুখ বিসুখ হলে অনেক সময় কুলাউড়ার ডা. রিয়াজ উদ্দিন সাহেবকেও বাড়িতে ডেকে আনতেন। এমনকি আত্মীয় স্বজনের খোজ খবর রাখতেন নিয়মিত। কিছু কারণে আব্বা বড় ভাইকে পছন্দ করতেন না। তাই আমি ছিলাম উনার অনেক যাত্রায় সঙ্গী। প্রতিনিয়ত গল্পের বিষয় ছিলো কিভাবে চলাফেরা করলে মানুষ ভালো বলবে। অনেক স্বপ্ন দেখতেন, আশার কথা শোনাতেন। যেনো বন্ধুর মতোই। উনার ব্যাংক একাউন্টের নমিনি ছিলাম আমি। এমনকি ভালো কিছু হতে পারবো এই আশায় ১৯৮২ সালে হাত ধরে নিয়ে কুলাউড়া এনসি স্কুলে ক্লাস সেভেনে ভর্তি করে এসেছিলেন। তিনি যা চেয়েছিলেন আমি তা হতে পারিনি। আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ছি তখনও আমাদের চাষযোগ্য অনেক জমিজমা ছিলো ।আব্বা সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরলে আমাদের নিয়ে পড়াতে বসতেন। সেদিন ঘরে রীতিমতো কারফিউ জারি হয়ে যেতো। রাত ১০ টার আগে কেউ ভাতের প্লেট হাতে নিতে পারবে না।

কোনো এক সন্ধ্যায় আব্বা আমাদের পড়াতে বসেছেন। একপর্যায়ে হঠাৎ বলতে শুরু করলেন “দেখো বাবারা একদিন আমার এই জমিজমা নাও থাকতে পারে। কিছু শিখতে পারলে খাওয়ার জন্য পরের ভারি বোঝা টানতে হবে না। দোকানের খাতা লিখে বা অন্যের বাচ্চা পড়িয়ে চলতে পারবে”। আর একটি কথা জেনে রেখো,” এমন লোকের সাথে চলাফেরা করবে যে নিজের সম্মান বুঝে। তাহলে তোমাকেও মর্যাদা দেবে!” ১

৯৮৫ সালের ৫ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে আব্বা মারা যান। তিনি কতো যে দূরদর্শী চিন্তাশীল ছিলেন তা এই দীর্ঘ সময়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি,পাচ্ছি। তিনি পড়েছিলেন এম এল স্কুলে। অনেক সুন্দর ইংরেজি লিখতে পারতেন। ইংরেজিতে কিছু লিখে নিতে অনেকেই আব্বার কাছে আসতেন। আবার হাটবাজারে উনি নির্দিষ্ট স্থানে বসতেন। যেমন কটারকোনা করম উল্ল্যাহ চাচার পাদুকার দোকান, মনু বাজারে ডা. সলিম উদ্দিন মামার ফার্মেসি। সৈয়দ আকমল হোসেন সাহেবের সাথে রাজনীতি করেছেন। শিক্ষা বিস্তারে ছিলেন অনেক তৎপরে। কাউকাপনের প্রয়াত আলী রাজা চৌধুরী ও প্রতুল নাথ সহ কয়েকজনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কামারচাক ইউনিয়নের শান্তকুল হাই স্কুল। আমাদের মতো হাট বাজারে অযথা ঘুরাঘুরি করতে তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না।আর আমাদের তো হাট বাজারে যাওয়াই নিষিদ্ধ ছিলো। আব্বা আমাকে যে দুদিন বেত্রাঘাত করেছেন, একদিন বাজারে যাওয়া আর একদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য। বিচার আচার জ্ঞানগরিমা চিন্তা চেতনা সততা সব দিক দিয়ে আব্বা ছিলেন কয়েক ইউনিয়নের মধ্যে একজন- সেটা এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ অনেক লোক এখনো স্বীকার করে।

আফসোস ধনসম্পদ জ্ঞানবুদ্ধি কিছুই উনার মতো পাইনি। তবে পেয়েছি নেক দোয়া। আর রেখে গেছেন উত্তম আদর্শ। যা আমি হতভাগা ধরে রাখতে পারিনি।এটাই আমার জীবনের বড় ব্যর্থতা। আমার জীবনে এখনো আমার বাবাই উত্তম আদর্শ!#

লেখক- সাংবাদিক ও চেয়ারম্যান, হাজীপুর ইউনিয়ন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews