বড়লেখা প্রতিনিধি::
বড়লেখায় স্কয়ার গ্রুপের মালিকানাধীন সাবাজপুর চা বাগানের পাল্লাথল ডিভিশনের লীজকৃত প্রায় সাড়ে ৫শ’ একর ভূমি স্থানীয় একটি ভূমিখেকো চক্র দীর্ঘদিন ধরে জবর-দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দুষ্কৃতিকারীরা গত বছর বাগানের সৃজিত (প্ল্যান্টেশন) প্রায় ১০ হাজার চা গাছ উপড়ে ও লেভার লাইনের ১২টি ঘর ভেঙ্গে বাগানের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে। স্থানীয় প্রশাসন দখলদার বাহিনীকে উচ্ছেদ করলেও সম্প্রতি তারা ওই ভূমি জবর দখলে তৎপর হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে স্কয়ার গ্রুপ বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের সাবাজপুর চা বাগানের মালিকানা গ্রহণ করে। এর আয়তন প্রায় ২৮৮৭ একর। সরকারের ইজারা শর্তাবলী পালন করে সাবাজপুর টি কোম্পানী লিমিটেড উক্ত ভূমিতে চা চাষ ও উৎপাদন করে আসছে। এর মাধ্যমে বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করছে এবং ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে গত বছরের ১৮ জুন চা বাগান সংলগ্ন বোবারথল এলাকার দেড়/দুইশ’ ব্যক্তি অবৈধভাবে চা বাগানের লীজকৃত ভূমির প্রায় সাড়ে ৫শ’ একর জোরপূর্বক দখল করে বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালায়। এর আগে ২০১৬ সালে একই কায়দায় চা বাগানের অন্য আরেকটি এলাকায় দখলের চেষ্টা করে। উভয়বার বাগান কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের সহায়তায় দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিহত করে।
সরেজমিনে গেলে চা বাগানের লীজকৃত ইসলাম নগর এলাকায় বাগানের ভূমিতে ভূমিদস্যুদের বেশ কয়েকটি বসতঘর থাকতে দেখা গেছে। চা শ্রমিকরা জানায়, নিয়াজ উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, নাজিম উদ্দিন, আব্দুল হাসিমের নেতৃত্বে বোবারথল গ্রামের কতিপয় ভূমিদস্যু তাদের গ্রাম সংলগ্ন টিলায় কাজে গেলে ভয়ভীতি দেখায়। এদিকে গেলে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। অথচ ওই টিলায় (প্রায় ৫শ’ একর) সবচেয়ে ভাল চা উৎপাদন হয়। প্রায় ১৫ দিন আগে কাজ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা ৩ জন গাড়ী চালক ও ৬ জন শ্রমিককে বেধড়ক পিটিয়েছে। এখন ভয়ে কোন শ্রমিক ওইদিকে কাজে যেতে সাহস পায় না।
সাবাজপুর চা বাগানের মহা-ব্যবস্থাপক আলী আহমেদ জানান, চা বাগানের লীজকৃত ভূমির অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা সরকারি গাছপালা ও প্রাকৃতিক সম্পদ প্রতিনিয়ত লুট করছে। চোরাচালান, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন ভয়ানক অপরাধের সাথে তারা জড়িত। সঙ্গবদ্ধভাবে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাগানের চায়ের চারা নষ্ট করছে, মূল্যবান গাছ ও বাঁশ কেটে অবৈধভাবে বিক্রি করছে। বাগানের শ্রমিকদের কাজে না যেতে প্রাণনাশের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। চা শ্রমিক, পাহারাদার ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তাদের ভয়ে অনেক শ্রমিক ও কর্মকর্তা ইতিমধ্যে বাগান ছেড়ে চলে গেছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অন্যতম রাজস্ব প্রদানকারী এই চা বাগানটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমরা ভূমিদস্যু দুষ্কৃতিকারীদের অপতৎপরতার বিষয়ে বাগান কর্তৃপক্ষকে সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
Leave a Reply