বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ‘পালতোলা নৌকা’ বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ‘পালতোলা নৌকা’ – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
মাদরাসা প্রধান রফিকুলের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারালো বাংলাদেশ, সাঈফ, হৃদয়ের ফিফটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতির ডাক জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আগামীকাল নিউইয়র্ক যাচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস ১ রানেই উইকেট হারােলা বাংলাদেশ,  ১৬৮ রানের টার্গেট বড়লেখার স্কাউট মোয়াজ্জমা লাবিবার প্রেসিডেন্টস অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন হিন্দু-মুসলিম মিলেই বাংলাদেশ সম্প্রীতির মডেল-পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন কুড়িগ্রামে আদালত অমান্যের অভিযোগ মাদ্রাসার সুপার ও বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে  কুড়িগ্রামে সাপের কামড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু  কুড়িগ্রামে সংবাদ প্রকাশের জেরে  সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়েছে বিএনপি নেতার ছেলে

বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ‘পালতোলা নৌকা’

  • মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নদীমাতৃক বাংলাদেশে এক সময় নৌকাই ছিল আদি বাহন। বর্তমানে যান্ত্রিক সভ্যতার অতলে বিলীন হয়ে গেছে আবহমান গ্রাম বাংলার মনমুগ্ধকর সেই সব চিত্র কল্প। নদীবেষ্টিত নওগাঁর আত্রাইয়ে নদীতে সারি সারি পাল তোলা নৌকা এক সময়ে চোখে পড়লেও সময়ের বিবর্তন, জৌলুস হারানো নদ-নদীর করুণ অবস্থা আর যান্ত্রিক সভ্যতা বিকাশের ফলে বিলুপ্তির পথে আবহমান গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ঐতিহ্যবাহী পালতোলা নৌকা।

হাতে গোনা দু’একটা পালের নাও বাদামী নাও চোখে পড়লেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। নতুন বধূ শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য পালতোলা নৌকার বায়না আর ধরে না। রঙ বেরঙের পাল খাটিয়ে পণ্যের পসরা সাজিয়ে ভাটিয়ালির সুরের তালে তালে ভেসে বেড়ায়না সওদাগরি নৌকার বহর আর দেখা মেলেনা। আলোকচিত্রের বিশাল শক্তিশালী ক্যানভাসেই শুধু জীবন্ত হয়ে আছে চিরন্তন বাঙ্গালী সংস্কৃতির এই অমুল্য সম্পদ।

এক সময় নওগাঁ জেলার ছোট যমুনা নদীবেষ্টিত আত্রাই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিল নদী আর পালের নৌকা, ডিঙ্গি নৌকাসহ বিভিন্ন নৌকার সম্পর্ক। দশ থেকে পনেরো বছর আগেও দেশের পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরী নদীর নৈসর্গ রূপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে সারি সারি নৌকা। এসব নৌকায় ছিল রঙিন পাল। স্বচ্ছ পানির কলতান আর পালে লাগা বাতাসের পত পত শব্দ অনুভূতি জুগিয়েছে প্রাণে। পালতোলা নৌকায় নদী ভ্রমণে যতটা না তৃপ্ত হতো মন তার চেয়ে দূর পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরীর পাড় থেকে সারি সারি নৌকার ছন্দবদ্ধ চলা আর বাতাসে পাল উড়ার মনোরম দৃশ্য দেখে মনপ্রাণ আনন্দে নেচে উঠেছে।

আত্রাইয়ের বুক চিরে বয়ে চলা যমুনা নদীর পাড়ে দল বেঁধে মানুষ পালতোলা নৌকার সে দৃশ্য দেখে চোখ জুড়ায়ি আসতো। আর মাঝনদী থেকে ভেসে আসা দরাজকণ্ঠে ভাটিয়ালি গানের সুর শুনে মনে তৃপ্ত এনে দিতো। নদীকে ঘিরে এক সময় পালতোলা নৌকা ছিল যাতায়াতের মাধ্যম। এপাড় থেকে ওপাড়ের যাত্রীদের ভাসিয়ে নিয়ে যেত নৌকা। তবে কালের পরিক্রমায় এসব নৌকা এখন অতীত। এখন নদীতে যেটুকু সময় পানি থাকে বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নৌকা চলাচল করে। পালতোলা নৌকার দেখা মিলে না। এক সময় সাম্পান, যাত্রীবাহী গয়না, একমালাই নৌকা, কোষা নৌকা, ছিপনাও, ডিঙিনৌকা, পেটকাটা নাও, বোঁচা নাও সহ বিভিন্ন ধরণের পালের নাওয়ের ব্যবহার ছিল।

যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পালতোলা নৌকা। কদর নেই মাঝি-মাল্লাদেরও। নৌকায় পাল এবং দাঁড়-বৈঠার পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন। মাঝেমধ্যে দু’একটা পালের নাও এখনো নদ-নদীতে দেখা যায়। পালের নাওকে উপজীব্য করে যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন তাঁদের অমূল্য সৃষ্টি কবিতা, ছড়া, গল্প, গান পালা ইত্যাদি। প্রখ্যাত শিল্পীরা তৈরি করেছেন উঁচু মানের শিল্পকর্ম। শুধু দেশী কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী বা রসিকজনই নন বরং বিদেশী অনেক পর্যটকের মনেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পালের নাও।

বিভিন্ন আকার ও ধরণের নৌকাই ছিল মানুষের যাতায়াত ও পরিবহনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। আর এ সব নৌকা চালানোর জন্য পালের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। হাজারীপাল, বিড়ালীপাল, বাদুরপাল ইত্যাদি পালের ব্যবহার ছিল নৌকাগুলোতে। পালের নৌকার পাশাপাশি মাঝিদেরও বেশ কদর ছিল একসময়। প্রবীণ মাঝিরা নৌকা চালানোর বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে বেশ পারদর্শী ছিলেন। তাঁদের হিসেব রাখতে হতো জোয়ার-ভাটার, বিভিন্ন তিথির এবং শুভ-অশুভ ক্ষণের। কথিত আছে, বিজ্ঞ মাঝিরা বাতাসের গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারতেন ঝড়ের আগাম খবর। রাতের আঁধারে নৌকা চালানোর সময় দিক নির্ণয়ের জন্য মাঝিদের নির্ভর করতে হতো আকাশের তারার উপর। তাই আগেভাগেই শিখে নিতে হতো কোন তারার অবস্থান কোন দিকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, “এক সময় গ্রাম-বাংলার মানুষের নৌকাই ছিলো আদি বাহন। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলারেরও অবেদন রয়েছে। তাই বলে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সেই নৌকাগুলোর কদরও যাতে সব সময় থাকে তারও একটা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখা প্রয়োজন বলেও আমি মনে করি। #

সংবাদটি শেয়ার করুন


Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!