এইবেলা, কুলাউড়া :: বাগানের জায়গা জবরদখল করে করছে বসবাস। সহস্রাধিক চা গাছ বিনষ্ট করে বানিয়েছে খেলার মাঠ। আর চলাচলের পথ বন্ধের অযুহাতে চা বাগানের সরু রাস্তাকে প্রশস্থ করার অপতৎপরতার চেষ্টা চালাচ্ছে কাকড়া ছড়া পানপুঞ্জি নামক গারো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রেহানা চা বাগান কর্তৃপক্ষ এই গারো জনগোষ্ঠি নানামুখী অপতৎপরতায় অতিষ্ঠ।
সরেজমিন রেহানা চা বাগানে গেলে জানা যায়, বাগানের অভ্যন্তরে জবরদখল করে বসবাসরত গারো জনগোষ্ঠির লোকজন বাগানের ফ্যাক্টরির পাশ দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে চলাচল করেন। তাদের কেউ কোনরূপ বাঁধা প্রদান করছে না। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহনের পর বাগানের সেকশনে যাওয়ার সরু রাস্তা (কন্ট্রোল পাত) জোরপূর্বক বড় করে গাড়ী চলাচলের উপযোগী করতে নানা অপতৎপরতা শুরু করেছে। তাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধের অযুহাত দেখিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে।
চা বাগান কর্তৃপক্ষ আশংকা করে জানান, ২০২৩ সালের মার্চে অনুরুপভাবে গারো জনগোষ্ঠির লোকজন সরু রাস্তাকে বড় করতে গিয়ে শত শত চা গাছ নষ্ট করে। পরে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান সরেজমিনে গিয়ে তাদেরকে পুরাতন রাস্তা ব্যবহার এবং সরু রাস্তাটি বাগানকে বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। এক বছর খাসিয়া ও গারো পরিবার প্রশাসনের সিদ্বান্ত মেনে চললেও সম্প্রতি রাতের আধারে ১৩ সেকশনে প্রায় হাজার খানেক চা গাছ উপড়ে ফেলে সেখানে খেলার মাঠ নির্মাণ করে। বর্তমানে ছোট রাস্তার উভয় পাশের শত শত চা গাছ নষ্ট করে রাস্তা প্রশস্থকরণের পায়তারা চালাচ্ছে ।
রেহানা চা বাগান কর্তৃপক্ষ আরও জানান, সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ৫শ একর জায়গায় চা চাষ করছেন তারা। জনপলসহ ৩-৪ টি গারো পরিবারকে বাগানের শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ দেয়। তারা চা শ্রমিকদের ন্যায় তারা বাগানের অভ্যন্তরে ও বাগানের লিজকৃত জায়গায় গৃহনির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। প্রথমে ৩-৪ টি পরিবার থাকলেও ধীরে ধীরে সংখ্যা বেড়ে এখন ১৫ টি পরিবার গারো-খাসিয়া এবং ১ জন স্থানীয় বাসিন্দা মিলে বাগানের ৩০-৪০ একর জায়গা জবর দখল করে ফেলেছে। এখন সেই জায়গা কাকড়া ছড়া পানপুঞ্জি সংরক্ষিত এলাকা অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে।
এব্যাপারে রেহানা বাগানের মধ্যে বসবাসরত হেডম্যান জনপল জানান, বাগান কর্তৃপক্ষ যে রাস্তা দিয়ে আমাদেরকে চলাচলের সুযোগ দিয়েছে সেটি ফ্যাক্টরীর পাশ দিয়ে। আমরা চাই সেকশনের পাশ দিয়ে রাস্তা হলে আমাদের যাতায়াতের দূর্ভোগ লাঘব হবে।
রেহানা চা বাগানের ব্যবস্থাপক একে আজাদ জানান, বাগানের জায়গায় অবৈধভাবে বসবাস করছে জনপলসহ কয়েকটি গারো পরিবার। গত বছরও আমাদের পাতিয়াওলাদের ব্যবহারের সরু রাস্তাটির চা গাছ নষ্ট করেছে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রাস্তাটি বন্ধ এবং চা গাছ রোপন করি। এরপরেও তারা গোপনে গোপনে ১৩ নং সেকশনে প্রায় হাজার খানেক চা গাছ নষ্ট করে খেলার মাঠ নির্মাণ করেছে। এতে বাগানের ৫-৭ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তা ওপেন হয়ে গেলে গাছ (ছায়াবৃক্ষ) ও চা পাতা চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরকারকে খাজনা, কর, লিজের টাকা পরিশোধ করে আমারা কোন রকম বাগান চালিয়ে যাচ্ছি। তার উপরে চা পাতা ও গাছ চুরি বেড়ে গেলে আমাদের কি অবস্থা হবে?
এব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মহি উদ্দিন জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।##
Leave a Reply