দেশে এক বছরে ৭০৩ জনের পানিতে ডুবে মৃত্যু দেশে এক বছরে ৭০৩ জনের পানিতে ডুবে মৃত্যু – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
৩ মাস থেকে ১২ চা বাগানের শ্রমিকদের রেশন-বেতন বন্ধ কুলাউড়ার নবারুন আদর্শ বিদ্যাপীটের সভাপতির প্রবাস গমন উপলক্ষে সংবর্ধনা প্রদান কমলগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব “সেং কুটস্নেম” বড়লেখায় শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশনের মেধাবৃত্তি পরীক্ষা ও পুরস্কার বিতরণ কুড়িগ্রামে শ্রমিক লীগ নেতাকে শ্রমিক দলে রাখার পায়তারা বড়লেখায় পৌর যুবদল নেতার মামলায় ২ যুবলীগ নেতা গ্রেফতার বড়লেখায় শিক্ষক ও সাংবাদিক মইনুল ইসলামের ইন্তেকাল : শোক প্রকাশ নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিটার মিনিবার নাইট ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন এফসি ডার্ক নাইট একজন মেহেদী হাসান রিফাতের গল্প : স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে

দেশে এক বছরে ৭০৩ জনের পানিতে ডুবে মৃত্যু

  • মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০

পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য: প্রয়োজন জাতীয় নীতিমালা

এইবেলা ডেস্ক ::

“শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকে বৈশ্বিকভাবে এসডিজির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুকে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ফলে অসুস্থতাজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার প্রতিরোধে কর্মসূচি গ্রহণ না করা হলে সার্বিকভাবে শিশুমৃত্যুর উচ্চহার থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে বাংলাদেশের একটি জাতীয় নীতিমালা প্রয়োজন, যেন সারা দেশে একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়। শিশুদের জন্য নজরদারির কাজটি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন একটি কার্যকর উপায়।”

গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টি আয়োজিত সাংবাদিকদের এক অনলাইন কর্মশালায় এসব কথা বলা হয়। কর্মশালায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ২৫ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দাতা সংস্থা গ্লোবাল হেল্থ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহযোগিতায় কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় বলা হয়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো এখনো অনেকটাই অজানা। এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে কালক্ষেপণ না করে এখন পর্যন্ত যে সমস্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে তা জরুরি ভিত্তিতে কাজে লাগিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধের কর্মকৌশল তৈরি করতে হবে। এছাড়া পানিতে ডুবে মৃত্যুর সবগুলো ঘটনার তথ্য গণমাধ্যম পায় না। এ নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে কোনো কার্যকর তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি। আবার গণমাধ্যম প্রতিবেদনগুলো শুধুমাত্র ঘটনাকেন্দ্রিক। এ নিয়ে গভীরতাধর্মী প্রতিবেদনের অভাব রয়েছে। গভীরতাধর্মী প্রতিবেদনে গণমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিলে বিষয়টি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্ব পাবে এবং এ নিয়ে জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়টিকে তরান্বিত করবে।

উল্লেখ্য, পানিতে ডুবে মৃত্যু সারা বিশ্বে আঘাতজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যান। এদের ২০ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের জন্য দায়ী পানিতে ডুবে যাওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে ৩২ জনই চার বছরের কম বয়সী। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজারে। এছাড়া পানিতে ডোবার কারণে আরো ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। এক লাখ শিশু পানিতে ডোবার কারণে বিভিন্নভাবে আহত হয়।

কর্মশালায় বলা হয়, শিশুমৃত্যু নিয়ে এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে প্রতিরোধযোগ্য এ মৃত্যু কমানো জরুরি। পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বহু সংখ্যক শিশুকে পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এটি করতে পারলে এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে সমষ্টি পরিচালিত এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সারাদেশে ৩৯৭ ঘটনায় ৭০৩ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা গেছে। এদের মধ্যে ৪৬১ জনের (৬৫.৫৭%) এর বয়স ৯ বছরের কম। মৃতদের মধ্যে ২০৭ জন নারী বা কন্যাশিশু রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা পরিবারের অন্য সদস্যদের অগোচরে বাড়ির আশেপাশের পুকুর বা জলাশয়ে চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় আগস্ট মাসে।

কর্মশালায় জানানো হয়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর হিসেব রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। কেউ পুলিশে রিপোর্ট করে না। তাই সরকারকে একটি রিপোর্টিং পদ্ধতি দাঁড় করাতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পানিতে ডুবে মৃত্যু রেকর্ড করা যেতে পারে, এটা খুবই কার্যকর হতে পারে। বছর শেষে সঠিক পরিসংখ্যান পেলে সরকারও সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা নিতে পারবে।

কর্মশালায় বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক ড. আমিনুর রহমান জানান, এত শিশুর মৃত্যু সত্বেও বিষয়টি পরিকল্পনা ও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে অগ্রাধিকার তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেনি। ফলে এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে বা জাতীয়ভাবে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, “পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে একটি জাতীয় কৌশল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর তিন বছর আগে একটি খসড়া করেছে, কিন্তু সেটি চুড়ান্ত হয়নি।”

সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে তিনি বলেন, দিনের প্রথমভাগে শিশুদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হলে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব। সিআইপিআরবি ও আইসিডিডিআরবি বাংলাদেশের সাতটি উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু নিয়ে গবেষণাটির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। গবেষণায় দুই বছর ধরে উপজেলাগুলোর প্রায় ১২ লাখ অধিবাসীর মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত আঘাত বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার ২৩ জন ১-৪ বছর বয়সী শিশুও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এতে দেখা গেছে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব যদি শিশুদের দিনের প্রথমভাগে শিশুযত্ন কেন্দ্রে নিবিড় তত্ত্বাধানে রাখা হয়।

গবেষণায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে বলা হয়- গ্রামভিত্তিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র সফলভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে কার্যকরী। এ ধরনের দিবাযত্নের ব্যবস্থা বাংলাদেশের মতো অন্যান্য নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার দূরীকরণে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় ও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করা।

এর আগে এক পরীক্ষামূলক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুরা ডে-কেয়ার সেন্টার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে তাদের পানিতে ডোবার সম্ভাবনা ৮২ শতাংশ কমে যায়। ওই গবেষণায় আঁচল নামের একটি শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র ও প্লে পেন নামের আরেকটি উদ্যোগের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণসহ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, আঁচল ও প্লে পেন উদ্যোগগুলো পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে খুব কার্যকর। আঁচল ২ বছর এবং তদুর্ধ্ব শিশুদের সুরক্ষায় বেশি সফল। সাধারণত দিনের যে সময়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, সেই সময় শিশুরা আাঁচলে সার্বক্ষণিক শিশু পরিচর্যাকারীর নজরদারিতে থাকছে। পাশাপাশি এ গ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও সহায়ক।

সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এ কর্মশালার বিভিন্ন অধিবেশ পরিচালনা করেন সমষ্টি’র পরিচালক ও চ্যানেল আইয়ের জেষ্ঠ্য বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকিসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি লিড রুহুল কুদ্দুস প্রমুখ।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews