কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
যেন তিল ঠাঁই আর নাই। ২০২১ ইংরেজিকে বিদায় এবং ২০২২ নববর্ষকে স্বাগত জানাতে ও থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনে কক্সবাজারে উপচে পড়া ভীড় পর্যটকদের । তাদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ।
শুক্রবার সকাল থেকেই পর্যটন নগরীতে হরেকরকম যাত্রীবাহী বাস ও প্রাইভেট গাড়িতে এবং বিমানে পৌঁছেন ভ্রমণপিপাসু দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে গিয়েছিল অনেক আগে থেকেই। যে কারণে দুপুর ১২টার পর থেকে জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি দেখা গেছে পর্যটকদের।
তবে সম্প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর এবার পর্যটকদের জন্য ৭ দফা বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি সৈকত এলাকা ও হোটেল-মোটেল জোনে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। মাঠে থাকছে ২০৮ জন পুলিশ সদস্য। পাশাপাশি হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন স্পটে বাড়ানো হয়েছে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় নানা কারনেই এ বছর তুলনামূলক পর্যটকের আগমন কম হয়েছে বলে দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে বিগত কয়েকবছরের মতো এবারও থার্টিফার্স্ট নাইটে সৈকতের বালিয়াড়ি বা উন্মুক্ত কোনো স্থানে হচ্ছে না কোনো অনুষ্ঠান। তবে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, সায়মন বীচ রিসোর্ট, কক্স-টু-ডে এবং সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রামের আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল অনেক আগে থেকেই। যে কারনে তা বাস্তবায়নও হচ্ছে। হোটেলের অতিথি, বিদেশি পর্যটক এবং বিশেষ মেহমান ব্যতিত এসব অনুষ্ঠানে অন্যদের শরীক হবার তেমন সুযোগ নেই বলে জানালেন আয়োজকরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবছর থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লোকারণ্য হয়ে উঠে। এবারো থার্টিফার্স্ট এবং বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় অতিথি ও স্থানীয় মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের মাঝে কিছুটা ভয়ভীতি কাজ করায় এবারে পর্যটক তুলনামূলক একটু কম এসেছে।
তবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উন্মুক্ত কোনো আয়োজন না থাকায় এবারো থার্টিফার্স্ট নাইট বা নতুন বর্ষ বরণকে ‘প্রাণহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন সিলেট সুনামগঞ্জ থেকে আসা কামাল উদ্দিন পাশা পর্যটক দম্পত্তি।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, একদিকে সাপ্তাহিক ছুটি, অন্যদিকে থার্টিফাস্ট নাইট। নতুন বর্ষবরণে অতীতের মতো কক্সবাজারের পর্যটকে ভরে উঠেছে। যদিও গত কয়েকদিনের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পর্যটন নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পেয়েছে পর্যটকরা। এরপরও গ্রুপ ও পরিবার নিয়ে এসেছেন অনেক পর্যটক।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী রাশেদ রিপন বলেন, বিজয় দিবস থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে কমবেশী পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। থার্টিফার্স্ট নাইট ও শুক্রবার আর শনিবারও সাপ্তাহিক ছুটি। যে কারণে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ন্যায় সমানতালে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, ইনানী, হিমছড়িসহ পুরো জেলার পর্যটন স্পটে পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইস’র পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটন বিকাশে আমরা শুরু থেকেই বাংলা নববর্ষ, থার্টিফার্স্ট নাইটসহ নানা দিবসকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করে তুলি। পর্যটক চাহিদার কারণে এবারো বলরুমে ইনহাউজ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যুফে ডিনারের সঙ্গে ছাদে থাকছে স্টেজ প্রোগ্রাম।
সায়মন বীচ রিসোর্টের হিসাব ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান নূর জানান, বিদেশি ও ইনহাউস অতিথিদের জন্য ব্যুফে খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে কর্তৃপক্ষ। অন্যসময় বাইরের অতিথি ব্যুফে খেতে আসতে পারলেও থার্টিফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠান বাইরের অতিথির প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
তারকা হোটেল কক্সবাজার সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) নাভিদ আহসান চৌধুরী বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে দু’রাত-তিন দিনের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছি আমরা। বৃহস্পতিবার-শুক্রবার হোটেলে অবস্থানরতদের জন্য ডিজে একেএসর ডিজে এবং মাইলসের শাফিন গানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। যেহেতু ইনহাউজ প্রোগ্রাম, তাই নিরাপত্তার খাতিরে শুক্রবার বাইরের কোনো গেস্ট প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়াম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপেও থার্টিফার্স্ট নাইটের কোনো অনুষ্ঠান নেই। তবে কয়েক হাজার পর্যটক নতুন বছরকে বরণে দ্বীপে অবস্থান করছেন বলে তিনি জানান।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, নানা কারণে সরকার এবারও ‘থার্টিফার্স্ট নাইটে’ ওপেন অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পর্যটকরা চাইলে রাত পর্যন্ত বীচে ঘুরতে পারবেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। কিন্তু রাত দশটার পর হোটেলের সব বার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply