১৯ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি ১৯ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

১৯ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি

  • সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২

মিন্টু দেশোয়ারা :: জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ে, কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ে না। সারাদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সেকশনে সাপ, বিছা, পোকামাকড়ের মধ্যেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করি। সপ্তাহে যে তলব (সপ্তাহের মজুরি) পাই তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন বলে জানাচ্ছিলেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের শমশেরনগর চা বাগানের ফাঁড়ি দেওছড়া নারী শ্রমিক লক্ষ্মী রবিদাস ও লক্ষ্মীমনি সিং।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, চা শিল্পের মূল কারিগর চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি হওয়ার কথা প্রতি দুবছর অন্তর। বর্তমানে মজুরি চুক্তির মেয়াদ ১৯ মাস উত্তীর্ণ হওয়ার পথে। ২০১৯ সনের জানুয়ারীতে পূর্বের চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর শ্রীমঙ্গলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিতে চা শ্রমিকদের মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১২০ টাকায় উন্নীত করা হয়। ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সনের ডিসেম্বর মাসে। এরপর মজুরি বৃদ্ধির নতুন চুক্তি আর হয়নি।

নতুন করে মজুরি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় চা শ্রমিকরা সর্ব্বোচ্চ ১২০ টাকা মজুরিতেই চলছেন। করোনা মহামারির ঝুঁকি নিয়ে জীবন ও জীবিকার তাগিদে পূর্বের মজুরিতেও তারা নিয়মিত কাজ করেছেন। তবে এতো অল্প মজুরিতে দু:খ-কষ্টে পাঁচ, সাত সদস্যের শ্রমিক পরিবারের সংসার চালাতে হচ্ছে বলে শ্রমিকদের।

শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানের নারী শ্রমিক আলোমনি মৃধা ও মিনা রায় বলেন, হামরা চা শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরি পাইয়া কিভাবে সংসার চালাবো? বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম বাড়ছে তাতে এই টাকা দিয়া সংসার চলি না। এক একটা ঘরে বাচ্চা-কাচ্ছা লইয়া পাঁচ জন, সাত জন থাকি। তারার খরচ কেমনে চলবি?

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থেকে ১৮ টাকা বৃদ্ধি করে সর্ব্বোচ্চ মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চা শ্রমিকদের মজুরি এ-ক্লাস বাগানে ১২০ টাকা, বি-ক্লাস বাগানে ১১৮ টাকা ও সি-ক্লাস বাগানে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এরপূর্বে ২০১৫ সনের ৬ অক্টোবর চা শ্রমিকদের মুজরি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে ৬৯ টাকা থেকে বেড়ে ৮৫ টাকায় উন্নীত হয়। সম্পাদিত ঐ চুক্তি মোতাবেক ২০১৫ সালে পহেলা জানুয়ারী থেকে কার্যকর করা হয়। ২০১৮ সনের ২০ আগষ্ট স্বাক্ষরিত পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৮৫ টাকা থেকে ১৭ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০২ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়। ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় পূর্বের চুক্তি স্বাক্ষরেরও দীর্ঘ ২০ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর। সেই চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় ২০১৯ সনের জানুয়ারীতে। ২০২০ সনের ১৫ অক্টোবরে হওয়া সর্বশেষ চুক্তির মেয়াদ ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। স্বাক্ষরিত সর্বশেষ চুক্তি বাস্তবায়ন হয় ২০১৯ সনের জানুয়ারি মাস থেকে।

চা শ্রমিক নেতা সিতারাম বীন জানান, করোনাকালীন ঝুঁকি নিয়েও চা বাগানে আমরা সারাক্ষণ কাজ করেছি। প্রতিটি বাগানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই দলবদ্ধভাবে কাজ করেছি। এসব ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও মজুরি বৃদ্ধির চুক্তির মেয়াদ ১৯ মাস অতিবাহিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চা বাগানে আমাদের এই মজুরি পাওয়ার পর সপ্তাহে কারেন্ট বিল, অনুষ্ঠান চাঁদা, ইউনিয়ন চাঁদা এসব কর্তনের পর সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা থাকে। এই টাকায় একবেলাই খাবার চালানো দায়।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলছে। দেশের ১৬৬ চা-বাগানে এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। ৩০০ টাকা মজুরি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। দেশের বিভিন্ন বাগানের চা-শ্রমিকেরা একত্রিত হয়েছেন। ‘

এ বিষয়ে বাংলাদেশি চা-সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, ‘মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনা চলাকালে এভাবে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করা বেআইনি। এখন চা-বাগানে ভরা মৌসুম। কাজ বন্ধ রাখলে সবার ক্ষতি। তারাও এই মৌসুমে কাজ করে বাড়তি টাকা পায়।’মালিকপক্ষের সঙ্গে চা-শ্রমিকদের আলোচনা প্রায় ১৯ মাস ধরে চলছে।

কিন্তু, শ্রমিকদের নতুন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, জানতে চাইলে গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, ‘আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি যাতে তাদের কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।’

১৯ মাস দেরি বিষয়ে শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম বলেন, একমাসের পরে দেরি মনে করলে শ্রমিক পক্ষ আলোচনা থেকে বের হয়ে সংগ্রাম আন্দোলন করতে পারে অামাদের জানাতে পারে কিন্তু চা শ্রমিক নেতারাতো সেটা করেনি। আলোচনায় থাকা অবস্থায় তারা আান্দোলনে গেছে।মালিক ও শ্রমিকপক্ষ আলোচনায় আছে। অফিসিয়ালি আলোচনা থেকে কেউ বেরিয়ে যায়নি। আলোচনায় থাকা অবস্থায় ধর্মঘট শ্রম আইনের পরিপন্থী। চা-শ্রমিক ইউনিয়ন দাবিনামা উত্থাপন করেছে।

তিনি আরো বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে আসবেন বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। মহাপরিচালক শ্রীমঙ্গলে এসে প্রথমে বাংলাদেশ চা–শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বসবেন। পরে তাঁদের দাবি দাওয়া নিয়ে বাগানমালিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। এখন যেহেতু ধর্মঘটের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাই শুরুতেই দুই পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান কঠিন হবে। ইতিমধ্যেই উভয় পক্ষকে মহাপরিচালকের সঙ্গে বসার জন্য বলা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের আয়োজনে চলমান চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে আগামী ১৬ আগস্ট ২০২২ তারিখ সকাল ১০ ঘটিকার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews