এইবেলা ডেস্ক :::
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বেগুনছড়া ও লবন ছড়া দু’টি বাঁশমহালের ১৬২ একর জায়গাটুকু জবরদখলে নিতে জোর তৎপতা চালাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি খাসিয়া সম্প্রদায়। এই বাঁশমহালে অস্থিত্ব রক্ষায় এই জায়গাটুকু ধরে রাখতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বনবিভাগ। দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এনিয়ে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।
বনবিভাগ বলছে খাসিয়াদের বেপরোয়া জবরদখলের কারণে ও বনবিভাগের লোকবলের অভাবে বনভূমি রক্ষা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন ধ্বংস করে নয়, বন রক্ষা করে তাদের জীবন জীবিকা রক্ষা হয় বলছে খাসিয়ারা। তবে ধীরে ধীরে গোটা বনভূমিকে গ্রাস করছে। যে সামান্য ১৬২ একর বাঁশ মহাল রয়েছে এটাই তাদের মুল টার্গেট।
বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, বনবিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৭-১৮ সালে মুরইছড়ায় ২০ হেক্টর জমিতে সামাজিক বনায়ন করে, পরের বছর ২০১৮-১৯ সালে বেগুন ছড়ায় ২০ হেক্টরের আরেকটি সামাজিক বনায়ন করে। দু’টি সামাজিক বনায়ন সফলতার মুখ দেখে। ফলে আরেকটি সামাজিক বনায়নের নার্সারি করার জন্য বেগুনছড়ায় গত ১২ সেপ্টেম্বর পরিদর্শণে গেলে বনবিভাগকে বাঁধা দেয় ববরিন খাসিয়া ও সিলভেস্টার তাল খাসিয়ার নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক খাসিয়া। তাদের বাঁধার মুখে বনবিভাগের লোকজন ফিরে আসে। গত ১৭ অক্টোবর খাসিয়ারা ওই স্থানের আশপাশে বাঁশ কাটা শুরু করে। খবর পেয়ে ২০ অক্টোবর নলডরি বিট কর্মকর্তা অর্জুন কুমার দস্তিদারের নেতৃত্বে বনবিভাগের লোকজন বাঁধা দেয়। বনবিভাগের লোকজনের বাঁধা উপেক্ষা করে বাঁশ অব্যাহত রাখে। উল্টো বিট কর্মকর্তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বনবিভাগ বাঁশ কাটার অভিযোগে থানায় মামরা দায়ের করে এবং হুমকির ঘটনায় বিট কর্মকর্তা থানায় সাধারণ ডায়রি (নং ১১৯২ তারিখ ২৮/১০/২০) করেন।
কর্মধা ইউনিয়নের নলডরি গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন লিটন, রফিকুল ইসলাম রেনু, জাবেদ হোসেন জানান, তারা বনভিাগের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগি। পুরাতন বনায়ন রক্ষায় এবং বনবিভাগ নতুন সামাজিক বনায়নের নার্সারি করার সহায়তার জন্য তারা সেদিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কিন্তু খাসিয়াদের বাঁধার মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি। তবে বনবিভাগের লোকজনের সাথে পাহাড়ে গেলেই খাসিয়ারা তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। তারা আরও জানান, এক ইউপি মেম্বার যিনি এখনও লবন ছড়া পানপুঞ্জির চৌকিদার হিসেবে বেতন নেন, সেই মেম্বারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুলত খাসিয়ারা বাঁশ মহালের বাঁশ কাটার দু:সাহস করে। ১৬২ একর বাঁশ মহাল জবরদখল করলেই বনবিভাগের আর পাহাড়ে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না।
নলডরি বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার জানান, সামাজিক বনায়নের চারা বাগান করতে বেগুনছড়া এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। খাসিয়ারা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ওযেকোন মুহুর্তে খাসিয়াদের হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কিত। জনবল কম ও অস্ত্র না থাকায় তিনি বাঁশ কাটার খবর পেলেও তাৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে যেতে পারেন না।
বিট কর্মকর্তা আরও জানান, তিনি নলডরি বিটে করোনাকালনি সময়ে যোগদান করেন। জবরদখলকারী ববরিন খাসিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে ২৫টি ও কুলাউড়া থানায় ৬টি এবং সিলভেস্টার তাল খাসিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে ২০টি ও কুলাউড়া থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবে বাঁশমহাল রক্ষা করা দুষ্কর হবে।
অভিযুক্ত ববরিন খাসিয়া ও সিলভেস্টার তাল খাসিয়া জানান, তাদের বিরুদ্ধে বনবিভাগের অভিযোগ সত্য নয়। অযথা মামলা দায়ের করে তাদের হয়রানি করে বনবিভাগ। বিট অফিসে কিংবা রেঞ্জ অফিসে বনবিভাগের লোকজন খালি খাসিয়াদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
এব্যাপারে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টি সংগঠন কুবরাজ আন্ত:পুঞ্জির খাসিয়া সম্প্রদায়ের নেত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাং জানান, খাসিয়ারা বাঁশ কাটার সাথে জড়িত নয়। পাাহড়ে খাসিয়ারা বসবাস করে। পাহাড় বাঁচলে খাসিয়ারা বাঁচবে। মুলত বনবিভাগ স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে এসব বাঁশ মহাল উজাড় করছে। তাদের এসব অপকর্ম আড়াল করতে খাসিয়াদের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।
কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল হক জানান, বনাঞ্চলসহ মহালের বাঁশ রক্ষায় আমাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। যেসব জায়গায় বাঁশ কাটা হয়, সেসব এলাকা খুবই দুর্গম। বিট অফিস থেকে যেতে হয় হেটে। ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগে। খাসিয়ার ওসব এলাকায় অভ্যস্থ। ফলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পৌঁছতে তারা চলে যায়। আর বিকেল বেলা কাটলে আর ঘটনাস্থলে যাওয়ার সুযোগ নাই। ফলে বাঁশমহাল রক্ষা করা কঠিন। লোকবল কম ও অস্ত্র না থাকায় পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। আর দু’টি বিভাগের সমন্বয় করে পাহাড়ে গিয়ে গাছ বা বাঁশ কাটা প্রতিরোধ করা কঠিন।#
Leave a Reply