এইবেলা, কমলগঞ্জ ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাদে উবাহাটা, সরই বাড়ি ও মধ্য কালাছড়ায় সরকারি খাস টিলা ভূমির মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার অভিযোগে কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)র পক্ষে সরেজমিন তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)।
টিলা কেটে বাড়িঘর নির্মাণ, মাটি বিক্রি, কৃষিজমি তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বনের টিলা ঘেষা ব্যক্তিগত এসব পাহাড়ি টিলা কেটে নিশ্চিহ্ন করছেন স্থানীয়রা। কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশারের (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার (জরিপ কর্মকর্তা) বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল তদন্ত করেন।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাদে উবাহাটা, সরইবাড়ি, মধ্য কালাছড়া, বড়চেগ গ্রাম এলাকায় খাস ভূমিতে বসবাসকারীরা প্রাকৃতিক টিলা কেটে মাটি বিক্রি করছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে তারা টিলা কেটে টিলাকে সমতল ভ‚মিতে পরিণত করছেন। পাহাড়ি দুর্গম এলাকা থাকায় স্থানীয়রা এসব উঁচু উঁচু টিলা কেটে বাড়িঘর নির্মাণ, মাটি বিক্রি, টিলা ভূমিকে কৃষিজমিতে পরিনত ও মাটি দিয়ে পুকুর ভরাট করছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) সিলেট বিভাগীয় সম্পাদক আব্দুল করিম মুঠোফোনে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোন অবস্থায় ভূমির ধরণ পরিবর্তন করা যাবে না। তাছাড়া টিলা কাটা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। তিনি মনে করেন টিলার মালিক হলেও তিনি ইচ্ছে করে টিলা কাটতে পারবেন না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।
তবে নিজস্ব সম্পত্তি হলেও টিলাকাটার বিষয়ে প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজনবোধ মনে করছেন না স্থানীয় লোকজন। বাদে উবাহাটা গ্রামের দ্বিন ইসলাম, আব্দুল মালিক, ইব্রাহিম মিয়া, মধ্যকালাছড়ার আব্দুর রশীদ ব্যক্তিগত কাজে ও সরইবাড়ি এলাকার কয়েকটি স্থানে টিলা কাটা চলছে। বসতি তৈরির জন্যে অবৈধভাবে টিলা কাটতে গিয়ে কয়েকমাস আসে করিমবাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় টিলার মাটি ধ্বসে জলিকা নামে এক মহিলা মারা যান। প্রাণি, উদ্ভিদ ও জীবজগতের জন্যে পাহাড়, টিলা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করলেও এক শ্রেণির মানুষের আগ্রাসী ভুমিকা পরিবেশকেও বিনষ্ট করছে।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, এসব এলাকা কিছুটা দুর্গম ও আড়ালে থাকায় প্রশাসনের নজর থাকে না। বাহির থেকে কেউ আসলে টিলা কাটার দৃশ্য দেখতে পান। এই টিলাগুলো প্রাকৃতিকভাবে উঁচু মানের রয়েছে। নানা উচ্চতার অসংখ্য টিলা সমতলে পরিণত হয়েছে। টিলাগুলো পর্যায়ক্রমে প্রকাশ্য দিবালোকে কেটে ফেলা হলেও জনপ্রতিনিধিসহ কারো মাথা ব্যাথা নেই। ফলে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির স্থল হিসাবে পরিণত হচ্ছে।
অভিযোগ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) নাসরিন চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বৃহস্পতিবার সরেজমিন সার্ভেয়ার তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনে নির্দেশনা চেয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে বৃহস্পতিবার বিকেলেই প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। আপাতত ঘটনাস্থল সরকারি খাস ভূমি এ ভূমির টিলা ও মাটি নিষেধ লিখে একটি সাইবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে বলেও সহকারি কমিশনার জানান। তবে টিলা কাটার সাথে জড়িত স্থানীয়দের দাবি, এসব টিলা তাদের নিজস্ব সম্পত্তি থাকায় নিজেদের প্রয়োজনে কেটে ফেলছেন। এতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।#
Leave a Reply