কুলাউড়ায় সরকারি সহায়তা গ্রহণ না করা একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ কেরামত আলী কুলাউড়ায় সরকারি সহায়তা গ্রহণ না করা একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ কেরামত আলী – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সোনাহাট স্থলবন্দরে ভুটানের রাজাকে গার্ড অব অনার প্রদান বড়লেখায় হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে আসামির কাউন্টার মামলা ওসমানীনগরের নতুন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মঈনুল আহসান ওসমানীনগরের নতুন ইউএনও অনুপমা দাস যেকোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে সুরমা মেইল ‘চলে একদিন অন্তর অন্তর’ কুলাউড়ায় নিখোঁজের ২দিন পর গৃহবধুর লাশ উদ্ধার : স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক আত্রাইয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা কমলগঞ্জে সরকারি যাকাত ফান্ডে যাকাত সংগ্রহ সংক্রান্ত মতবিনিময় কমলগঞ্জে চা শ্রমিক নারীর লাশ সৎকার থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে  স্পেনের বার্সেলোনায় বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার সম্পন্ন

কুলাউড়ায় সরকারি সহায়তা গ্রহণ না করা একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ কেরামত আলী

  • বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১

আজিজুল ইসলাম ::

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্সের ভাষণের পর ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে অস্ত্রহাতে নেমে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর হতাশ হন। সেই সাথে জীবনে নেমে আসে আর্থিক দৈনতা। একবুক হতাশা নিয়ে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে। জীবন যুদ্ধে কেটে যায় ৩০ বছর। দেশে ফিরে জীবন সয়াহ্নে এসেও মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে কোন ভাতা বা সহায়তা নিতে চান না। দীর্ঘশ^াস ছেড়ে বললেন-এর কি বিনিময় হয়?

কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ কেরামত আলী। কুলাউড়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সম্মুখ সারির যে কয়জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন সৈয়দ কেরামত আলী তাদের মধ্যে সম্মুখ সারির এক যোদ্ধা ছিলেন।

সৈয়দ কেরামত আলী জানান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর মুলত মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। রেসকোর্স ময়দানের সেই ভাষণে শরীরে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ কেরামত আলী। সেখান থেকে ফিরে আসার পর কুলাউড়ার সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুল জব্বার ডাকবাংলোয় যাওয়ার খবর দেন। গ্রামের বাড়ি থেকে তখন প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ হেটে কুলাউড়া আসেন সৈয়দ কেরামত আলী। সেখানে মরহুম আব্দুল জব্বার মরহুম জয়নাল আবেদীন ও মুকিম উদ্দিন আহমদসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সৈয়দ কেরামত আলী ও আবু ইউছুফ মাষ্টারের হাতে দুটো অস্ত্র ও কার্তুজ তুলে দেন। সেই থেকে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া।

রেডিওতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা আসার পর শুরু হয় যুদ্ধের দামামা। সেই সময় ৩৫-৩৬ বছরের টসবগে যুবক সৈয়দ কেরামত আলী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ছিলো যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়েও ছিলো বিরাট বাজার। অনেক মালামাল মজুত ছিলো বাজারে। সেগুলো মানুষের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বন্টনের দায়িত্ব পড়ে তাঁর উপর।

সেসময় ব্রাহ্মণবাজারের শাহজাহান চৌধুরী, ইলিয়াছ মিয়া (স্বাধীনতা পরবর্র্তীতে যিনি ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন)সহ মেরিনা চা বাগানের মালিকের কাছে যান।

যুদ্ধকারীন সময়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য গাড়ী চাইতে। বাগান মালিক ছিলেন মহিলা। বাগান মালিক তাদের সহায়তার জন্য একটি জিপ গাড়ী ও গাড়ীর চালক তজুকে তাদের সাথে নিযুক্ত করেন। ইতোমধ্যে পাক বাহিনী শমসেরনগর, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ ঘাঁটি স্থাপন করে।

২৬ কিংবা ২৭ তারিখ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের নির্দেশে জেনারেল এমএ গনি ওসমানী সাহেবের একখানা চিঠি হবিগঞ্জের মুনিপুর চা বাগানে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পড়ে ষৈয়দ কেরামত আলী ও মছাদুর রহমানের উপর। সেই চিঠিসহ মুনিপুর চা বাগানে যাওয়ার পর স্টেনগান হাতে বাগানের দায়িত্বরত ম্যানেজার তাদের একটি কেেক্ষ আটক রাখেন। জীবনের প্রথম স্টেনগান দেখেন সৈয়দ কেরামত আলী। মনে মনে ভাবেন তাহলে এখানেই তাদের মৃত্যু বরণ করতে হবে। রাতে হয়তো তাদের মেরে ফেলা হতে পারে। কিন্তু রাতে জেনারেল ওসমানীর চিঠি যাচাই করে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। ওইদিন ভারতীয় বিএসএফ মুক্তিবাহিনীকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

এর ৪-৫ দিন পর তারা সদলবলে চলে যান ভারতে কৈলাশহরে। সেখানে আগেই গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাজারের কোনগাঁও গ্রামের মিন্টু বাবু ও লামাপাড়া গ্রামের বাদল বাবু ও তাদের পরিবার। তাদের দেখে বাদল বাবুর মা জানালেন তাদের কাছে কোন খাবার নেই। বাড়িতে তারা চাল রেখে এসেছেন সেগুলো নিয়ে আসতে। শুনে সৈয়দ কেরামত আলী চাল নেয়ার দায়িত্ব নেন। চাল নিতে এতে গ্রামে যখন চক্কর দিতে বেরিয়েছেন তখনই ঘটে বিপত্তি। ব্রাহ্মণবাজারের কানুপট্রির ব্রিজের কাছে এসে থামে পাকবাহিনীর গাড়ী। রেনু মিয়া কামান্ডার ও রফিক মিয়া মাস্টারসহ পাশর্^বর্তী বদনা বিলে পড়ে কোনমতে জীবন রক্ষা করে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আসামপুর গ্রামে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকান। সেখানে থাকা অবস্থায় থবর পান কুলাউড়া শহরের প্রবেশ পথে অর্থাৎ কাপুয়া ব্রিজের কাছে সম্মুখ যুদ্ধে মারা যান কুলাউড়ার প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আছকির খান। ফিরে যান ভারতে কৈলাশহরে।

তাদের আগেই ধর্মনগর ডাকবাংলোয় অবস্থান নেন মরহুম আব্দুল জব্বার, আব্দুল মতিন ও মুকিম উদ্দিন। তারা পাঠানো খবর পেয়ে কৈলাশহর থেকে ধর্মনগর যান সৈয়দ কেরামত আলীসহ সঙ্গীরা। সেখানে যাওয়ার পর খবর পান প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা লতিফ খানের স্ত্রী সন্তানরা শাহবাজপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছেন। সেখান থেকে তাদের আনার দায়িত্ব পড়ে সৈয়দ কেরামত আরীর উপর। তিনি ধর্মনগর থেকে করিমগঞ্জ গিয়ে গৌরী হোটেলে উঠেন। ভারতীয় অংশ থেকে বাংলাদেশের জকিগঞ্জ এলাকায় পাক আর্মির টহল দেখতে পান। সীমান্ত থেকে লতিফ খানের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ধর্মনগরে ফেরার ১৫দিন পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে ধর্মনগর ডাকবাংলোয় কর্তৃপক্ষের অসুবিধার জন্য হাফলং নামক স্থানে একটি ক্যাম্প করে বাংলাদেশের সবাইকে স্থানান্তর করা হয়।

হাফলং ক্যাম্প থেকে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য মধ্যপ্রদেশ নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অসুস্থতার কারণে হাফলং ক্যাম্পে স্টোরের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ কেরামত আলী। হাফলং ক্যাম্প থেকে মুলত বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের সিলেট অঞ্চলের বিষয়গুলো পরিচালিত হতো।

দীর্ঘযুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলো। হাফলংযে দায়িত্ব পালন শেষে সবার সাথে দেশে ফেরেন সৈয়দ কেরামত আলী। মুজিববাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে পল্টন ময়দানে অস্ত্র জমা দেন। এরপর একটি স্বপ্নের সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর হতাশ হয়ে পড়েন। সেই সাথে যোগ হয় পারিবারিক অনটন। হতাশাকে সঙ্গী করে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে। ২০ বছর পর দেশে ফেরেন। স্ত্রী ৩ ছেলে আর ৩ মেয়ে নিয়ে চলছে সংসার জীবন। এখন অনেতটা স্মৃতিশক্তিও লোপ পেতে শুরু করেছে।

দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন। এর কি কোন প্রতিদান হয়? এমন প্রশ্ন সৈয়দ কেরামত আলীর। তাইতো তিনি কোন সরকারি অনুদান গ্রহণ করেন না। ছেলেমেয়েদেরও করেছেন একই আদর্শে লালন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও করছেন অত্যন্ত সহজ সরল জীবনযাপন।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews