১৯৭১ এর এই দিনে : কমলগঞ্জের দেওড়াছড়া বাগানে পাকহানাদার বাহিনী গণহত্যা  ১৯৭১ এর এই দিনে : কমলগঞ্জের দেওড়াছড়া বাগানে পাকহানাদার বাহিনী গণহত্যা  – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আত্রাইয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা কমলগঞ্জে সরকারি যাকাত ফান্ডে যাকাত সংগ্রহ সংক্রান্ত মতবিনিময় কমলগঞ্জে চা শ্রমিক নারীর লাশ সৎকার থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে  স্পেনের বার্সেলোনায় বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার সম্পন্ন বড়লেখা সমাজসেবা অফিসের ‘সমাজকর্মী’ সুব্রত বিশ্বাসের পরলোকগমন : শোক প্রকাশ কুলাউড়ায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উপশাখার উদ্বোধন জুড়ী ট্র্যাজেডি : সোনিয়ার মৃত্যুতে বেঁচে রইলো না আর কেউ কুলাউড়ায় এনার ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা আত্রাইয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত বড়লেখায় স্বাধীনতা দিবসে ২শ’ দুস্থ পরিবারে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী দিল বিজিবি

১৯৭১ এর এই দিনে : কমলগঞ্জের দেওড়াছড়া বাগানে পাকহানাদার বাহিনী গণহত্যা 

  • শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) ::

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১নং রহিমপুর ইউনিয়নের দেওড়াছড়া চা বাগানে গণহত্যা চালানো হয় ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল। এই বাগানের ম্যানেজার ছিল একজন বিহারী। ২৫ শে মার্চের কিছু আগে ম্যানেজার বাগান ছেড়ে চলে যায়। ২৫ শে মার্চের পর অনেক কর্মাচারীরাও বাগান ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। বাগানের শুধু রয়ে যায় অনাহারে অর্ধাহারে নির্জীব দেহের শ্রমিকেরা।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাকে ভোট না দেয়ার কারনে মৌলভীবাজারের তখনকার মুসলিম লীগ নেতা এসে তাদের তখন নিয়মিত ভয় দেখাতেন। এইদিনে একসাথে ৫৮ জন চা শ্রমিককে হত্যা করে পাকবাহিনী। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের দেওড়াছড়া চা বাগানে প্রবেশ করে পাক হানাদার বাহিনী ৭০ জন চা শ্রমিককে ধরে ভাইয়ের সামনে ভাই, পুত্রের সামনে পিতা, পিতার সামনে পুত্রকে বিবস্ত্র করে তাদের পরনের কাপড় দিয়ে প্রত্যেকের হাত বেঁধে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

এখানে ৭০ জনের মধ্যে ১২ জন চা শ্রমিক মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়নের নিজস্ব অর্থায়নে এখানে একটি বধ্যভূমি নির্ম্মান করেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল দেওড়াছড়া বাগানে প্রবেশ করে পাকিস্তানীরা। মুসলিম লীগ নেতার শাসানী আর বাগানে মিলিটারী জিপের প্রবেশে তারা আতঙ্কিত হয়ে উঠেন। অনেকেই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন। বাগানে ঢুকেই পাকিস্তানীরা অসহায় গরীব শ্রমিকদেরকে রেশন দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একত্রে সবাইকে জমায়েত করে। সাথে করে নিয়ে আসা একটি বেসামরিক বাসে শ্রমিকদের উঠতে নির্দেশ দেয়া হয়। প্রায় ৭০ জন শ্রমিককে বাসে ভর্তি করে বাস রওয়ানা দেয় মৌলভীবাজার শহরের দিকে। তবে একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরই বাস একটি খাদে পড়ে যায়। শ্রমিকদের তখন বাধ্য করা হয় বাসটি টেনে তুলতে। ঘটনাস্থলেই আরেক পাকিস্তানী মেজরের আগমন ঘটে। সবাইকে একটি নালার পাশে নিয়ে বিবস্ত্র করে তাদের পরিধেয় বস্ত্র দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলা হয়। তারপর শুরু করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। মোহিনী গোয়ালা, রবি গোয়ালা, মহেশ কানু, নারাইল কুর্মী সহ ১২ জন সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। আহত অবস্থায় ভারতে গিয়ে এই ১২ জন চিকিৎসা করান। তাদের মাধ্যমেই জানা যায় এই নির্মম হত্যকান্ডের খবর।

আর যারা ত্রিশ লক্ষ শহীদের খাতায় নাম লিখিয়ে যান তাদের অনেকেরই নাম উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই। তবে এদের মধ্যে ছিলেন-উমেশ সবর, হেমলাল কর্মকার, লক্ষনমূড়া, বিজয় ভূমিক, আকুল রায় ঘাটুয়ার, মাহীলাল রায় ঘাটুয়ার, বিনোদ নায়েক, সুনারাম গোয়ালা, প্রহ্লাদ নায়েক, মংরু বড়াইক, বিশ্বনাথ ভুঁইয়া, শাহজাহান ভুইয়া, ভাদো ভুইয়া, আগুন ভুইয়া, জহন গোয়ালাসহ আরো অনেকেই। স্থানীয় দালালরা সক্রিয় ছিল এসব হত্যাকান্ডে। তারাই পরে শ্রমিক ঝুপড়ি গুলোতে লুটপাট চালায়। নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে এই বাগানে।

এই স্থানটি সরকার কিংবা চা বাগান কর্তৃপক্ষ সংরক্ষনের জন্য কোন কার্যকর পদক্ষেপ দীর্ঘদিনেও গ্রহণ না করায় স্থানটি বিরানভুমিতে পরিণত হয়ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য লেখালেখি হওয়ার পর অবশেষে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ১নং রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুলের হস্তক্ষেপে ও দেওড়াছড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগীতায় দেওড়াছড়া চা বাগানের বধ্যভূমির স্থান চিহ্নিত করে চা শ্রমিকদের গৌরবগাথা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউনিয়নের নিজস্ব অর্থায়নে এখানে একটি বধ্যভূমি নির্ম্মাণ করা হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিটি জাতীয় দিবসে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

আলাপকালে রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল জানান, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল দেওড়াছড়া চা বাগানে এসাথে ৫৮ জন চা শ্রািমককে হত্যা করে পাকবাহিনী। এই স্থানটি আমরা সংরক্ষনের উদ্যোগে নিয়েছি এবং একটি বধ্যভূমি নির্ম্মাণ করেছি। এছাড়া দেওড়াছড়া চা বাগানে গণহত্যার স্থানকে যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে একটি স্মৃতিসৌধ নির্ম্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদের সহায়তায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছে।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews