আব্দুর রব, বড়লেখা ::
বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নুর নবী রাজু স্ত্রী মৌসুমী কিবরিয়া ও শ্যালক-শালিকাকে নিয়ে লাইসেন্স ছাড়াই প্রায় ১ বছর ধরে চালাচ্ছেন ‘হলি লাইফ স্পেশালাইস্ট হসপিটাল’ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল। সরকারি ঔষধ পাচার, সার্টিফিকেট বিক্রি, ভূয়া টেস্ট বাণিজ্য, ভুল চিকিৎসা, জ্বর ও গলা ব্যথার রোগীদেরকে করোনার ভয় দেখিয়ে ভর্তি ও মোটা অঙ্কের বিল আদায়সহ নানা প্রতারণা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। এসব নানা অভিযোগে ১৬ এপ্রিল ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে লাইসেন্স গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেকমো নুর নবী রাজু কর্তৃক প্রতারিত দুই ব্যক্তি গত ১৫ জুলাই তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক দুইটি অভিযোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে একটি অভিযোগের তদন্তে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন ইউএইচএফপিও ডা. রত্মদ্বীপ বিশ্বাস।
সরেজমিন ও অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নুর নবী রাজু সরকারি চাকুরিজীবী হয়েও চাকুরী বিধি অমান্য করে বড়লেখা পৌরশহরের দক্ষিণ বাজারে ‘হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটাল’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্ত্রী মৌসুমি কিবরিয়াকে চেয়ারম্যান, শ্যালক, শালিকাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে গত ১ বছর ধরে বিনা লাইসেন্সে তিনি রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য চালাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে তিনি নিজের গড়া বেসরকারী হাসপাতালে রমরমা বাণিজ্য করছেন। সরকারি হাসপাতালের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে বেশিরভাগ সময় হলি লাইফে সময় দেন। সরকারি হাসপাতালে আগত রোগীদের ফুসলিয়ে হলি লাইফে নিয়ে যান। হাসপাতালের সরকারি মালামাল গজ, সিরিঞ্জ, জেসুকেইন, হেলোথিন পাচার করেন হলি লাইফে। বাসায় এবং হলি লাইফে বসে সরকারি হাসপাতালের ছাড়পত্র, ভূয়া সার্টিফিকেট, টেস্ট রিপোর্ট বিক্রি করেন। জ্বর ও গলা ব্যথার রোগীদেরকে করোনার ভয় দেখিয়ে ভর্তি রেখে ৩০-৪০ হাজার টাকা বিল আদায় করেন। হসপিটালের ল্যাবে নেই টেস্টের যথাযথ যন্ত্রপাতি। ভূয়া রিপোর্ট বানিয়ে ইচ্ছামত টাকা আদায় করেন।
ইতিপূর্বে এক পুলিশ অফিসারকে এইচবিএইচএজি’র ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে বেকায়দায় পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে নুর নবী রাজু তা আপোষ মিমাংসা করেন। একজন সিজারিয়ান রোগীকে হিমগ্লোবিনের পরিমাণ কম দেখিয়ে ব্লাড দেয়ার কথা বলে করছে ক্রসম্যাচিং টেস্ট বাণিজ্য। প্রত্যেক ক্রসম্যাচিং এ নিচ্ছে ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। কিছুদিন পূর্বে একজন গলব্লাডার রোগীকে ঢাকা থেকে আসা ডাক্তার তানোয়ারুল ইসলামকে দিয়ে অপারেশন করান। রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় স্বজনদের সন্দেহ ওই চিকিৎসক আদৌ সার্জন ছিলেন কিনা।
ভুক্তভোগী গিয়াস উদ্দিন অভিযোগ করেন, ১২ মে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় তার ভাই ছইফ উদ্দিনের হাত ভেঙে যায়। তাকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। ইমার্জেন্সিতে বসা সেকমো নুর নবী রাজু বলেন, এখানে কিছু করা সম্ভব নয়। ফুসলিয়ে তিনি হলি লাইফ হসপিটালে নিয়ে যান। পরে বিভিন্ন কায়দা ১৮ হাজার ৫শ টাকা আদায় করেন। কিন্তু ২০-২৫ দিন গেলেও হাতের উন্নতি হয়নি। নুর নবী রাজুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আরো ২ মাসের ঔষুধ দেন। হাতের অবনতি ঘটায় ২৮ জুন একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরের পর দেখা যায় ভাঙা হাত ভাঙাই রয়েছে। জোড়া লাগেনি। আবারো নুর নবী রাজুর কাছে গেলে তিনি চরম অসদাচরণ করেন। বুঝতে বাকি থাকেনি তার ভুল চিকিৎসায় ভাইয়ের হাতের অবনতি ঘটেছে। পরে সিলেটের একজন অর্থপেডিকস দেখিয়ে জানতে পারেন ভুল চিকিৎসায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। অপারেশন ছাড়া হাড় জোড়া লাগার সম্ভাবনা নেই। অপারেশন করতে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা গুনতে হবে। এব্যাপারে তিনি ১৫ জুলাই নুর নবীর বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স ছাড়া একটি বেসরকারী হাসপাতাল কিভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে পারে তা বোধগম্য নয়। এ হাসপাতালটির বিরুদ্ধে রোগিদের সাথে প্রতারণা, বড় অঙ্কের অর্থ আদায়, ভুল চিকিৎসা, ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, সার্টিফিকেট বাণিজ্যের যেসব অভিযোগ পাচ্ছেন তাতে মনে হচ্ছে এটি যেন আরেকটি ‘রিজেন্ট’। বিশেষ করে নুর নবী রাজু একজন সরকারী চাকুরীজীবি। তিনি কিভাবে একটি বেসরকারী হাসপাতালের মালিক হন এবং অফিস টাইমে এখানে ডিউটি করেন। তিনি তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
নুর নবী রাজু জানান, হলি লাইফ স্পেশালাইস্ট হাসপাতালটির চেয়ারম্যান তার স্ত্রী মোসুমী কিবরিয়া। কিন্তু ভবনের মালিক কোন মহিলার সাথে চুক্তি করতে রাজি হননি। তাই তিনি (নুর নবী রাজু) চেয়ারম্যান হয়ে মালিকের সাথে ডিড করেছেন। তবে পরক্ষণেই তিনি তা স্ত্রীর নামে ফেরৎ দিয়েছেন। বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি জানান, হাসপাতালের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আব্দুর রহমান গত ৮ মাসের হিসাব দেয়নি। সে মালিকানা দাবী করায় তার সাথে সমস্যা হয়েছে। এজন্য তিনিই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। লাইসেন্স না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশনায় হসপিটালটি বন্ধ রেখেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত হলি লাইফ স্পেশালাইস্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে লাইসেন্স পায়নি। সরকারী ঔষধ, মেয়াদুত্তীর্ণ পরীক্ষা সামগ্রী পাওয়াসহ নানা অনিয়মের দায়ে হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেকমো নুর নবী রাজুর বিরুদ্ধের একটি অভিযোগ তদন্তের জন্য মঙ্গলবার তিনি ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে এ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply