আব্দুর রব, বড়লেখা ::
ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জে গরুচোর সন্দেহে গণধোলাইয়ে নিহত ৩ বাংলাদেশি যুবকের ২ জনের পরিচয় শনাক্তের পরও লাশগুলো দেশে আনার ব্যাপারে বিজিবি’র উদাসীনতায় স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে বিজিবি’র তরফ থেকে বিএসএফকে লাশের পরিচয় শনাক্তের তথ্য জানানো হয়নি। বাংলাদেশি বিভিন্ন মিডিয়ায় পরিচয় উদ্ধারের রেফারেন্স দিয়ে বিজিবিকে শেষমেষ চিঠি পাঠায় বিএসএফ। সোমবার দুপুরে জুড়ীর লাঠিটিলা সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ’র ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বিজিবি দুই বাংলাদেশীর লাশের পরিচয় উদ্ধারের তথ্য না দেয়ায় বিকেলে বেওয়ারিশ হিসেবে ৩ বাংলাদেশির লাখ মাটি চাপা দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ভারতে নিহত বড়লেখার অটোরিকশা চালক জুয়েল আহমদ ও নুনু মিয়ার বাড়িতে চলছে শোকের মাথম। ১ সপ্তাহ আগে বিজিবি নিহতদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে। লাশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিজিবি’র উদাসীনতায় দুই পরিবারের স্বজনরা চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, ভারতের করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি ভুবরীঘাট চা বাগানে গত ১৮ জুলাই রাতে গরুচোর সন্দেহে বাগান শ্রমিকরা কয়েক ব্যক্তিকে আটক করে। গণটিুনিতে এদের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু ঘটে। বিএসএফ ও পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ৩ মৃত দেহের পকেটের নথিপত্র দেখে নিহতদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে তারা নিশ্চিত হন।
প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করেন মৃত ব্যক্তিরা মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজলার জামকান্দি এলাকার বাসিন্দা। জুড়ী বিজিবি ও থানা পুলিশ জামকান্দি এলাকায় খোঁজ করেও বিএসএফের পাঠানো তথ্যমতে কাউকে পায়নি। অবশেষে ২০ জুলাই বিকেলে দুইজনকে বড়লেখায় শনাক্ত করা হয়। এরা হলো বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে জুয়েল আহমদ (২৬) ও আকদ্দছ মিয়ার ছেলে নুনু মিয়া (৩২)। তারা সম্পর্কে চাচা ভাতিজা এবং পেশায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক।
নিহত জুয়েল আহমদের ভাই রুবেল আহমদ ও সোহেল আহমদ সোমবার সকালে জানান, জুড়ী থানা পুলিশের দেয়া ছবি দেখে তারা জুয়েল ও নুনুকে শনাক্ত করেন। লাশ আনার ব্যাপারে ২০ জুলাই বিজিবি’র লাঠিটিলা ক্যাম্পে গিয়ে এনআইডি কার্ড, ছবি ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাগজপত্র জমা দেন। ৭ দিন অতিবাহিত হলেও বিজিবি তাদেরকে কিছুই জানায়নি। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম সুত্রে তারা জেনেছেন, লাশের ব্যাপারে বিজিবি তথ্য গোপন করায় সোমবার বিকেলে বিএসএফ বেওয়ারিশ হিসেবে লাশগুলো সেখানে মাটিচাপা দিয়েছে।
ভারতের একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সুত্রে জানা গেছে, ৭ দিন পূর্বে দুই বাংলাদেশির লাশের পরিচয় উদ্ধার হলেও বাংলাদেশি সীমান্ত রক্ষী (বিজিবি) বাহিনীর পক্ষ থেকে বিএসএফকে পরিচয় পাওয়ার তথ্য দেয়া হয়নি। গত ৬ দিনে ৪ বার দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুই লাশের পরিচয় পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। বাংলাদেশি বিভিন্ন মিডিয়ায় লাশের পরিচয় উদ্ধারের রেফারেন্স দিয়ে বিজিবিকে শেষমেষ চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফ। সোমবার দুপুরে জুড়ীর লাঠিটিলা সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ’র ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে বিজিবি দুই বাংলাদেশীর লাশের পরিচয় উদ্ধারের তথ্য না দেয়ায় বিকেলে বেওয়ারিশ হিসেবে ৩ বাংলাদেশির লাখ মাটি চাপা দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল গাজী শহীদুল্লাহ জানান, এব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য উর্ধবতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করেছেন।#
Leave a Reply