কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের বাসটি প্রায় দুই বছর ধরে বিশেষ কোন কারণ ছাড়াই বন্ধ করে দিয়েছি উপজেলা প্রশাসন। ফলে কলেজগামী চা শ্রমিকসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত শিক্ষার্থীরা টাকার অভাবে উপজেলার কলেজেগুলোতে নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেনা। এতে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের বাসটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত কলেজ শিক্ষার্থীদের পরিবহনের প্রায় দুই বছর বাস সার্ভিস চালু থাকলেও ২০২০ সালের মার্চে করোনাকালিন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে সার্ভিসটিও বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে উপজেলার কলেজ খোলার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের পরিবহন করার কথা থাকলেও উল্টো বাস সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের বাসটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত কলেজ শিক্ষার্থীরা জানে না কি কারণে বাস সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছে। অথচ বিভিন্ন খেলাধুলোয় অংশগ্রহন করতে এই বাস দিয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করা হয় বলে শিক্ষার্থীরা জানান। ২০১৮ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক কমলগঞ্জ গণ মাহাবিদ্যালয় ও কমলগঞ্জ আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজে চা বাগানসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিত কম দেখেন। অনুপস্থিতির মূল কারণ ছিল মাথা পিছু যাতায়াত খরচ তাদের প্রতিদিন ৮০ থেকে ১৫০ টাকা লাগতো। খরচ বহন করতে না পারায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিয়মিত উপস্থিত হতে পারতোনা। পরে তিনি উপজেলার চা শ্রমিকসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাসের জন্য আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাস উপহার করেন। উপহারের বাস দিয়ে উপজেলার সীমান্তবর্তী কুরমা, চাম্পারায়, বাঘাছড়াসহ কয়েকটি চা বাগানের শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরছে যাতায়াত করতেন।
বাস সার্ভিস বন্ধ হওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থী সোনিয়া সিনহা, প্রিয়াষ্কা ও বিজয় নায়েক জানান, আমাদের যাতায়াত খরচ চিন্তা করে অনেক কষ্ট করে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি বাস উপহার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার পর থেকে বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাতায়াত সুবিধা না থাকার কারনে আমরা নিয়মিত কলেজে আসতে পারিনা। প্রতিদিন আমাদের ১০০ থেকে ১৫০ টাকা যাতায়াত খরচ লাগে। বাস সার্ভিসটি আবার চালু করার দাবি জানান তাঁরা।
কলেজ শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুনীল কুমার সিনহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি বাসের জায়গায় একটি বাস উপহার দেওয়া হয়েছে। এখন আবার সেই বাসটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাতায়াত খরচের কারণে গত এক বছরে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে কলেজে পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন। বাস সার্ভিস চালু না করলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভূক্ত অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যাবে।
এ বিষয়ে বাস চালক বিপ্লব সিংহ বলেন, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ করোনাকালিন সময়ে বাস সার্ভিসটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিসটি চালু করা হয়নি।
বাস সর্ভিস বন্ধের বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, গাড়ি চালকের বেতন দেওয়ার বরাদ্দ না থাকার কারনে বাস সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। বিকল্প উপায় বের করে কিছু দিনের মধ্যে আবার চালু করা হবে।#
Leave a Reply