কমলগঞ্জ প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূতুড়ে বিল আর মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর যন্ত্রনায় উপজেলার ৬৮ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। ভুতুড়ে বিদ্যূৎ বিলের কারনে অতিষ্ট সাধারণ গ্রাহকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। বিক্ষুদ্ধ গ্রাহকদের রোষানলে ১১ আগষ্ট রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়কুট এলাকায় মিটার রিডিং আনতে গিয়ে রায়হান আহমদ নামক এক মিটার রিডার যুবককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।
আহত যুবক কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলায় মিটারের রিডিংয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলের মিল না থাকায় গ্রাহকরা প্রতি মাসেই প্রতারিত হচ্ছেন।
পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা জানান, একদিকে বাজারমূল্য ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের ঘাটতি, লোডশেডিংয়ের মতো নানা সমস্যা। এরই মধ্যে প্রতিমাসে বিদ্যুতের ভূতুড়ে বিল। এ যেন গ্রাহকের জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ।
বিদ্যুৎ গ্রাহক আব্দুল জববার, রাসেল আহমেদ, সোহেল মিয়া, বুধন মিয়া, তাহির মিয়া অভিযোগ করে জানান, তাদের জুন মাসে তাদের মিটারের যে বিদ্যুৎ বিল দেয়া হয়েছে তবে জুলাই মাসের বিদ্যুৎ বিল দ্বিগুণ করা হয়েছে।
তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, জুন মাসে আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছি,সেই তুলনায় সরকার নির্ধারিত লোডশেডিং এর কারনে আমরা বিদ্যুৎ কম ব্যবহার করেছি। তবে বিল জুন মাসের চেয়ে বিল দিগুণ আসার কারনে জানতে পারছিনা।
এদিকে, গ্রাহকরা আরো অভিযোগ করে বলেন,পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের অধীনে গ্রাহকদের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি মোবাইল নাস্বার দেয়া হয়েছে। তবে ঔ মোবাইল নাম্বারে বারবার বল দিলেও অনেক সময় রিসিভ করা হয়না।
অপরদিকে সরকার লোডশেডিং শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর কমলগঞ্জ জোনাল অফিস থেকে প্রতিদিন ২ঘণ্টা লোডশেডিং করার সিডিউল প্রচার করে। কিন্তু বাস্তব তারা দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করছে। তবে শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ সঠিকভাবে দেওয়ার কথা বলা হলেও কমলগঞ্জে চা বাগানগুলো দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। ফলে চা উৎপাদনে চরম ঘাটতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে চা বাগানগুলো।
পৌর এলাকায় প্রতিদিন ৪/৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। যদিও কখনো কখনো আরো বেশি করতে হচ্ছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রতি ২ ঘণ্টা পরপর এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে। কোনো কোনো সময় ৩ বা ৪ ঘণ্টা পরও এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।
কমলগঞ্জ পৌর শহরের বাইরে প্রতি ৩ ঘণ্টা এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে মানুষ। কোন কোন সময় প্রতি ৪ ঘণ্টার এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এ হিসেবে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে উপজেলায়। তবে পৌর এলাকায় দৈনিক ২ থেকে ৩ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে।
কারণ হিসাবে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ ৬৮ হাজারে গ্রাহকের দিনে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৫ মেগাওয়াট। আর রাতে চাহিদা ১৯ মেগাওয়াট।
বর্তমানে কমলগঞ্জে দিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় মাত্র ৫ মেগাওয়াট আর রাতে ১০ মেগাওয়াট। কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীন ৩টি সাব স্টেশন আছে। তিনটি সাব স্টেশনে ৩টি ফিডারে এক ঘন্টা অণÍর করে লোড শেডিং করতে হচ্ছে। কমলগঞ্জে চাহিদার চেয়ে অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ পেলে লোড শেডিং অনেক কমে যেত বলে আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মীর গোলাম ফারুক বলেন, সরকারি নির্দেশনা ও তাদের চাহিদার তুলনায় যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে এভাবে লোডশেডিং করা হচ্ছে।
এখানে স্থানীয়ভাবে কিছু কারার নেই। অপর প্রশ্নে মিটার রির্ডাররা মাঠপর্যায় পরিদর্শন না করে ভুল বিল করার অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অভিযোগ কেন্দ্রের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে ৩ সিফটে অভিযোগ গ্রহণের জন্য দায়িত্ব দেয়া আছে। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply