এইবেলা, কুলাউড়া :: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে ১৫ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল ৭ টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আটককৃত জঙ্গিদের নিয়ে রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালায় সিটিটিসি, সোয়াত ও পুলিশের বিশেষ টিম। সকাল থেকেই অঝোর বৃষ্টি শুরু হলে কঠিন হয়ে পড়ে দূর্গম পাহাড়ে পরিচালিত অভিযান।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) ইউনিট প্রধান মো. আসাদুজ্জামান অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
সোমবার সকালে কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাঁশটিলা বাজার থেকে স্থানীয় সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা ১৭ জন জঙ্গিকে কৌশলে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি) নিকট তাদের হস্তান্তর করা হয়। আটক জঙ্গিদের নিয়ে যাওয়া হয় মৌলভীবাজারে। সেখানে রাত্রি যাপনের পর মঙ্গলবার সকাল ৭টায় দুই জঙ্গিকে নিয়ে চালানো হয় অভিযান। বিকেল ৩টায় দীর্ঘ ৮ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে তাদের নিয়ে ফিরে আসে। এদিকে সকাল থেকে কর্মধার পাহাড়ী এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিলো। সেই বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে জঙ্গিদের দু’টি আস্তানার সন্ধান পায় বলে জানা গেছে। গুলি ও বিষ্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
আটক ১৭ জনের নাম তালিকা প্রকাশ করেছে সিটিটিসি। আটকৃতরা হলেন- নাটোর জেলার বাগাতি পাড়া থানার গাঁওপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে জুয়েল মাহমুদ (২৮), সিরাজগঞ্জ জেলার ও সদর থানার পুরাবাড়ি গ্রামের মোঃ হেলাল উদ্দিনের ছেলে সোহেল তানভীর রানা (৩০), কক্সবাজার জেলার রামু থানার দক্ষিন শ্রীকুল গ্রামের হামিদুল হকের ছেলে সাদমান আরেফিন ফাহিম (২১), কক্সবাজার জেলার রামু থানার মধ্যম গ্রামের মোঃ এনামুল হকের ছেলে মোঃ ইমতেজার হাসসাত নাবীব (১৯), যশোর জেলা ও সদর থানার মোল্লাপাড়া গ্রামের আইয়ুব খান বাবুর ছেলে ফাহিম খান (১৭), পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার আতাইকোলা গ্রামের আব্দুল্লাহর ছেলে মো: মামুন ইসলাম (১৯), গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দবক্স থানার চাদপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম মন্ডলের ছেলে রাহাত মন্ডল (২৪), জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ থানার পূর্ব দত্তেরচর গ্রামের মোঃ নূর আলমের ছেলে সোলাইমান মিয়া (২১), নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ জেলার গোলা কান্দাইল গ্রামের সেকান্তা শেখ ওরফে শান্ত শেখের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৩৪), বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানার হাটশিপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে মো: আশিকুল ইসলাম (২৯), পাবনা জেলা ও থানার আতাইকুলা গ্রামের ফজলু মল্লিকের ছেলে মামুন ইসলাম (২৬), ঝিনাইদহ জেলা ও থানার ছয়াইল গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে তানভীর রানা (২৪), সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার দক্ষিন নলতা গ্রামের জহুরুল শেখের ছেলে জুয়েল শেখ (২৫), পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার কয়জুড়ি শ্রীপুর গ্রামের ইসলাম মন্ডলের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৮), পাবনা জেলার সাথিয়া থানার দারামোদহা গ্রামের মো: আবির হোসেন (২০), মাদারিপুর জেলা ও থানার পূর্ব চিয়াইপাড়া গ্রামের মো: রেজাউল করিমের ছেলে মেহেদী হাসান মুন্না (২৩) এবং টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার মুমিনপুর গ্রামের সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে কোয়েল (২৫)।
মৌলভীবাজার পুলিশ লাইন্সে ব্রিফিংয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিটিটিসি) ইউনিট প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কুলাউড়ার জঙ্গি আস্তানা থেকে এখন পর্যন্ত ইমাম মাহমুদের কাফেলার ২৭ সদস্য আটক হয়েছে। তাদের সাথে রয়েছে আরও তিন শিশু। দু’দফায় অভিযানে সব মিলিয়ে ১৪৬ টি ডিটোনেটর প্রায় ১০ কেজি বিষ্ফোরক কিছু দেশী অস্ত্র এবং নগদ প্রায় ছয় লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এর আগে গত (১২ আগস্ট) কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রাম থেকে নব্য প্রতিষ্ঠিত উগ্রবাদী সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার ১০ সদস্য আটক এবং (১৪ আগস্ট) জনতার সহায়তায় আরও ১৭ জন আটক হয়। তারা অভিযানের সময় আস্তানায় অভিযানের সময় পালিয়ে গিয়েছিল।
সিটিটির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, ইমাম মাহমুদের কাফেলা নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন। তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিল কিন্তু গত ৭ আগস্ট ঢাকা থেকে ১০ জন আটকের পর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে কুলাউড়ার আস্তানার সন্ধান দেয়।#
Leave a Reply