মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় মোহাম্মদ আং গফুর হারিয়েছেন পরিবারের ৪ সদস্য – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বড়লেখায় নিজ বাড়িতে ছোট ভাইসহ কুয়েত প্রবাসী খুন : আহত ১ মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় মোহাম্মদ আং গফুর হারিয়েছেন পরিবারের ৪ সদস্য কুড়িগ্রাম হাসপাতালে দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্তের নামে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ কমলগঞ্জেমনিপুরি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে তারুণ্যের নবযাত্রা  বিয়ের গেটেই প্ল্যাকার্ড হাতে হাদী হত্যার বিচার চাইল বর পক্ষ ওসমানীনগরে আলোচিত অটোরিকশা চালক শিপন হত্যাকান্ড : লেনদেনের জেরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বড়লেখায় খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে র‌্যালি ও সভা বড়লেখায় ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্মদিনে নিসচা’র খাবার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল বড়লেখা-জুড়ীতে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৪ বড়লেখায় অবৈধভাবে টিলা কর্তন : ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা

মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় মোহাম্মদ আং গফুর হারিয়েছেন পরিবারের ৪ সদস্য

  • শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

Manual6 Ad Code
এইবেলা ডেস্ক :: 
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাবার আশায় কিংবা সেই ভাতা নিয়ে কোন দলের দাসত্বের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেন নি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আং গফুর। দলীয় লেজুড়বৃত্তি না করায় বঞ্চিত হয়েছেন সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে। মুক্তিযোদ্ধা  হওয়ার কারণে পাক বাহিনী তার বাড়িঘর ভেঙে বাপ চাচাসহ ৪ জনকে ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে  মাটিচাপা দেয়। আজও সেই দু:স্বপ্ন তাড়া করে বেড়ায়।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিম পাশা ইউনিয়নের কলিরকোনা গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা  মোহাম্মদ আং গফুর। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৪নং সেক্টরের কমান্ডার সি. আর দত্তের অধীনে কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর, শরীফপুর কর্মধা, পৃথিমপাশা ও শমসেরনগর এলাকায় সম্মুখ সমরে অংশ নেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট এলাকায়  যুদ্ধ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে জিয়াউর রহমান জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট এলাকায় আসার পর পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে এবং তার চৌকষ নেতৃত্বে গোটা সিলেট মুক্তযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে।
মোহাম্মদ আং গফুর ১৯৬২ সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের হয়ে আনসার ট্রেনিং এবং ১৯৬৫ সালে মোজাহিদ ট্রেনিং করেন। ১৯৬৫ সালে তৎকালীন কুলাউড়া উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের লাঠিটিলা সীমান্ত এলাকায় ভারত পূর্ব পাকিস্তানের ভূখণ্ড দখল করতে চাইলে মুখোমুখি  যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী ডিফেন্সের হয়ে অংশ নেন মোহাম্মদ আং গফুর। আনসার ও মোজাহিদ প্রশিক্ষনের বিনিময়ে  শুধু খাবার আর কিছু পয়সা পেতে।  মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আনসার ও মুজাহিদের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে ২৯ টাকা পান তিনি।
মুলত আনসার ও মোজাহিদ বাহিনীর প্রশিক্ষণ থাকায় অস্ত্র চালনায় দক্ষ ছিলেন মোহাম্মদ আং গফুর। তাই তিনি সশস্ত্র যুদ্ধে সম্মুখ সমরে। দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।  তারই নেতৃত্বে ৮ মে আলীনগর বিওপিতে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালান। হামলায় পাকিস্তানী বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। তারা আলী নগর ক্যাম্পের পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়ান। ক্যাম্প থেকে ১ ১ব্যারেল পেট্রোল ও ৩ ব্যারেল মোবিল উদ্ধার করে ভারতের কৈলাশহর থানায় জমা দেন। সেসময় কৈলাশহন থানায় ওসির দায়িত্বে ছিলেন করাত দত্ত।
আলী নগর ক্যাম্পের এই পতাকা নামানোর ঘটনার পর আলীনগরের রাজাকার চেরাগ ও মফিজ মাষ্টার পাক সেনাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আং গফুরের বিষয়টি জানায়। চিনিয়ে দেয় তার বাড়িঘর। তাদের নেতৃত্বে পাক সেনারা এক রাতে মোহাম্মদ আং গফুরের বাড়িতে হানা দেয়। পাক সেনারা ক্ষিপ্ত হয়ে মোহাম্মদ আং গফুরের পিতা মখরম উল্লাহ, চাচা আইন উদ্দিন, চাচাতো ভাই আব্দুস সাত্তার এবং বড়বোনের জামাই মছকন্দ আলীকে তুলে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। সেখানে তাদের হত্যা করে পৃথিমপাশা পদ্মদিঘীর পাড়ে মাটি চাপা দেয়। এই কালো রাতের কথা ভুলতে পারেন না মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আং গফুর।
যু্দ্ধকালীন সময়ে একদিন পতনউষার গ্রামের শফিক মিয়ার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করছে টের পেয়ে পাক সেনারা আক্রমন চালায়। সেখানে তিনিও ছিলেন। মুর্হুমুহু আক্রমনের টিকতে না পেরে পলকিছড়া নদীতে পড়ে জীবন বাচান। পলকিছড়া নদীতে করে তিলকপুর হয়ে কালারায়ের চর দিয়ে সেদিন ভারতে পালিয়ে যান। নয়তো পাক বাহিনীর হাতে সেদিনই মারা যেতেন। যুদ্ধকালীন সময়ে ৩২ বছরের টগবগে যুবক মোহাম্মদ আং গফুরের সাহস ছিলো অসীম। পরিবারের ৪ সদস্যকে হারানোর শোক তখন প্রতিহিংসার বারুদ হয়ে গর্জে উঠেছিলো। মৃত্যু ভয়তো ছিলো না বরং পাক সেনাদের হত্যার এক উন্মাদ নেশায় মেতে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস।
০১ ডিসেম্বর ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে কর্মধা ইউনিয়নের কাঠালতলী বাজারে আসেন। তখনই মুলত পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ চলছে। বিভিন্ন এলাকা মুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে। তিনিও সিলেট মডেল স্কুল মাঠে যান যেখানে মুলত পাক কাহিনী ক্লোজড হয়। সেখান থেকে ফিরে মৌলভীবাজার বাজার স্কুল মাঠে অস্ত্র জমা দেন।
মুক্তিযুদ্ধের মুল লক্ষ্য ছিলো- দেশকে স্বাধীন করা। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করা।  সেখানে কোন চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা ছিলো না।  মুক্তিযোদ্ধা আং গফুর ছিলেন মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ দলের সমর্থক। পাক বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানীর কাছে আত্মসমর্পণ করার কথা কিন্তু আওয়ামী লীগ ভারতকে খুশি করতে জেনারেল ওরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করায়। মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে এদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
ইতিহাস বিকৃতি প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আং গফুর বলেন, আওয়ামীলীগই মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতি করেছে সবচেয়ে বেশি। কারণ এই দলের কোন নেতাকর্মী যুদ্ধে অংশ নেয়নি। এই দলটি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করে মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের দলীয় কর্মিতে পরিণত করেছে। যারা দলীয় লেজুড়বৃত্তি করেছে তারাই সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। বীর নিবাস নামে বাড়ি পেয়েছে। আর যারা আওয়ামী লীগ করেনি তারা বঞ্চিতর তালিকায় রয়ে গেছে। দেশে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা কোনদিনই ভাবিনি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মুক্তিযোদ্ধা আং গফুর। ১৯৮৮ সালে তিনি কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক। এরমধ্যে ২ ছেলে মারা গেছেন। পৈত্রিক বিষয় সম্পত্তি আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখেই সময় কাটে। বয়সের ভারে ন্যুজ মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আং গফুরের পক্ষে একা চলাফেরা করাটাও মুশকিল।##

সংবাদটি শেয়ার করুন


Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!