মো: মুবিন খান ::
রাজনগর আওয়ামী লীগের তারা দুই মুকুটহীন সম্রাট। শুধু আওয়ামী লীগের না রাজনগরের রাজনীতিরও বলতে পারেন।
স্থানীয় নির্বাচন কিংবা রাজনৈতিক গ্রুপিং দ্বন্দ্বে দুইজন অনেক সময় দুই প্রান্তে অবস্থান করলেও একাকীত্ব জীবনে যাওয়ার সময় ঠিকই একসাথে চলে গেলেন। জীবনের অবসানে কোন কর্মসূচি ছাড়াই দু’জন এক হয়ে গেলেন। শত শত কর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে তাদের যাত্রা একসাথেই।
উপজেলাবাসীর কাছে এটা এক অদ্ভুত মিলনের গল্প। এ কেমন বন্ধুত্ব! মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দু’জনেই মহান রবের ডাকে সাড়া দিলেন।
দলীয় গ্রুপিং দ্বন্দ্বে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বাঘ সিংহ হয়েছেন প্রায়ই। দু’পক্ষের সমর্থকদের তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করতো মাঝে মাঝে। ভেলাই মিয়া ছিলেন রাজনগরের বাঘ। আর আছকির খান তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমান কম কথা বলা একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ।
দলীয় গ্রুপিংয়ে যাই হোক না কেন হাইকমান্ড থেকে শেখ হাসিনার স্বার্থে কিংবা দলের স্বার্থে কোন কর্মসূচি কানে চলে আসলে হাতে হাত রেখে সবকিছু ভুলে এক ব্যানারেই দাঁড়িয়ে যেতেন এই দুই ব্যক্তি। আছকির-ভেলাই যেদিন এক ব্যানারে দাঁড়িয়ে গেছেন সেদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের চিত্র বদলে যেত।
যুবক বয়সে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আছকির খান ৪৫ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার জীবন যৌবনের সবকিছুই ছিল দেশ মাঠি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।
অপরদিকে মিসবাহুদ্দোজা ভেলাই মিয়া। ৯০ দশক থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের হাত ধরে উঠে আসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। রাজনগরের বিশাল ভোটব্যাংকের অধিকারী আলহাজ্ব মিসবাহুদ্দোজা ভেলাই মিয়াকে আওয়ামী লীগের অনেক প্রয়োজন। পর্যায়ক্রমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৫ থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত টানা ২৫ বছর নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গত জাতীয় নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন সরাসরি মাঠে থেকে।
দুইজনের আদরের হাতে আমাদের বড় হওয়া। ব্যক্তি জীবনে তাদেরকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। ছোটবেলার খেলাধুলা থেকে শুরু করে প্রতিদিনের রুটিনে আছকির দাদার বাড়িতে আমাদের যাওয়া আসা রেগুলার ছিল। আড্ডা ফূর্তি গল্প গুজব। মাঝে মাঝে অনেক কিছু শিখিয়ে দিতেন। শাসনও করতেন।
ভেলাই দাদার সাথে আব্বুর সম্পর্ক অনেক ভালো। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আকিল মামার খুব কাছের মানুষ ছিলেন ভেলাই দাদা। সেই সুবাদে আমাদের পারিবারিক ভাবে দাদার সাথে আরও সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনেকবার দাদার কাছে গিয়েছি। উনার বাড়িতে গেলে খুব কমন একটা কথা ছিল ‘চাইরটা খাইয়া যাগি’।
আমি প্রবাসে আসার সময় আপু দেশে ছিলেন। আম্মু, আপু, আব্বুকে দাওয়াত দিয়েছিলেন ভেলাই দাদা। আমারও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টিকেট খুব তাড়াতাড়ি করায় আর সেইদিন যাওয়ার সুযোগ হয়নি। যদি একবারের জন্যও জানতে পারতাম আর দেশে গিয়ে উনাকে পাবো না তাইলে সেদিন শেষ সালামটা করে আসতাম।
প্রিয় মানুষ গুলোর চলে যাওয়া বড়ই অদ্ভুত। রাজনীতির মাঠ থেকে ব্যক্তিজীবন। সব জায়গায়ই তাদের ভালোবাসা পেয়েছি। পক্ষে বিপক্ষের সংবাদের জন্য কোনদিন জবাবদিহি করতে হয়নি। বরং ভালোবাসা ছিল বেশি। ভালোবাসা দিয়েই বুঝিয়ে দিতেন এটা এভাবে ছিল না সেভাবে ছিল। এই মানুষ গুলোর অভাব অপূরনীয়। আল্লাহ দুজনকে ক্ষমা করে দিক। নাজাত দান করুক। আমীন।#
লেখক- প্রবাসী সাংবাদিক
পূনশ্চ : লেখাটি এইবেলা’র পাঠকের জন্য লেখকের টাইম লাইন থেকে নেয়া।
Leave a Reply